ভারত থেকে আমদানি করা মাংসে অতিরিক্ত শুল্ক বসাল বাংলাদেশ
কমানোর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রনালয়ে ভারতীয় দুতাবাসের চিঠি
দেশ গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি করা হচ্ছে। বেশির ভাগ মাংসই আসছে ভারত থেকে। হিমায়িত মাংস আমদানি নিয়ে প্রশ্নের মধ্যেই বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশন হিমায়িত মাংস এবং পশুর যকৃত, ফুসফুসসহ বিভিন্ন অংশে আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। দেশটির হাইকমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে শুল্ক বিভাগকেও।
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে ভারতের হাইকমিশন বলেছে, ‘অল ইন্ডিয়া বাফেলো অ্যান্ড শিপ মিট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএমএলইএ)’ হাইকমিশনকে হিমায়িত মাংস এবং পশুর বাজে অংশের আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কাস্টমস বিশেষত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস হিমায়িত মাংস এবং বাজে অংশের আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে। আগে প্রতি কেজিতে খরচ ধরা হতো ২ দশমিক ৫ ডলার। এখন সেখানে প্রতি কেজিতে চার ডলার খরচ পড়ছে। এতে বাংলাদেশে হিমায়িত মাংস রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশটির। তা ছাড়া বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশে এ পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে। তাই শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এম ফখরুল আলম শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, বিষয়টি তাঁরা পর্যালোচনা করছেন।
সূত্র মতে, দেশে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজারে। এটি আগের বছরের চেয়ে তিন লাখ ৮৮ হাজার বেশি। গত তিন বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। পাশাপাশি বাড়ছে মহিষের উৎপাদন। অর্থাৎ আমাদের উৎপাদন চাহিদা মেটাতে পারছে। সাধারণত যেসব পণ্যের বিপুল সরবরাহ থাকে এবং স্থানীয়ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়, তখন ওই সব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হয়। এমন প্রেক্ষাপটেই হিমায়িত মাংসে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, দেশ মাংস রপ্তানির পর্যায়ে যাওয়ার পরও থেমে নেই হিমায়িত মাংস আমদানি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হিমায়িত মহিষের মাংস ও ওফালস (যকৃত, ফুসফুসসহ অনান্য) আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৩৬ হাজার কেজি। মে মাসে ছিল তিন লাখ ৭৪ হাজার কেজি, জুন মাসে ছয় লাখ তিন হাজার কেজি, জুলাই মাসে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার কেজি ও আগস্ট মাসে তিন লাখ ৯১ হাজার কেজি। গত পাঁচ মাসেই মহিষের মাংস আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ লাখ ৫২ হাজার কেজি। আর এসব মাংসের প্রধান উৎস ভারত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে বেশি গরু উৎপাদন হচ্ছে দেশে। বিদেশ থেকে মাংস আনা হলে গ্রামের সাধারণ কৃষকসহ প্রান্তিক খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত গরুর উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হবে। এতে দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত চামড়াশিল্পে কাঁচামালের সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি সংকটে পড়বে দেশের চামড়াশিল্প ও দুগ্ধ উৎপাদন শিল্প। বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হেলথ কম্পানি অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে মাংস আমদানি বন্ধ করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে। একই দাবি মাংস ব্যবসায়ী সমিতির। কিন্তু তার পরও মাংস আমদানির চিন্তা থেকে সরকার এখনো সরে আসেনি।
সূত্র: এফবি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৭