সর্বাত্নক যুদ্ধের জন্য বার্মিজ জান্তার পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে আমাদের ভিন্ন কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।
যেকোন দেশকে দাবানোর জন্য দুই একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তিই যথেষ্ট। অথচ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব কয়টি সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিই বার্মাকে সমর্থন দিচ্ছে। দেশগুলি দেখুন, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র (যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ডের সামরিক মহড়ায় মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ) ইত্যাদি। আমাদের প্রতিবেশী কিছু দূর্বল দেশগুলির কথা না হ্য় বাদই দিলাম। দিনে দিনে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে আর কারা কারা বার্মার পক্ষে আছে।
বার্মায় শতাধীক বিচ্ছিন্ন গ্রুপ জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চললেও রহিংগা ইস্যুতে সকলেই এক। এইজন্য রহিংগাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিয়ে গোটা বর্মিজ মূলুকে নিজেদের অবস্হান আরও পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করে আসছে বার্মিজ জান্তা অনেকদিন ধরে।
বার্মা আমাদেরকে সর্বাত্বক যুদ্ধের জন্য পদে পদে উস্কানী দিলেও বাংলাদেশ ওদের ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেকে সংবরত রেখেছে। কারন বাংলাদেশ জানে একটা সর্বাত্নক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরিনাম কি হতে পারে।
সৌদি আরব ইয়েমেনে অনর্থক একটা যুদ্ধে জড়িয়ে কি পরিমান আর্থিক বিপর্যয়ের সন্মূখীন তা ঐ দেশে যারা আপনার পরিচিত তাদের কাছ থেকে জেনে নিন। সোভিয়েত ইউনিয়ন এক আফগান যুদ্ধে জড়িয়েই শেষ পর্যন্ত খতম। যুক্তরাস্ট্র আফগানিস্তানে যুদ্ধে জড়িয়ে যে শিক্ষা পেয়েছে তাতে করে সে গোটা বিশ্ব থেকে নিজেকে ক্রমশ: গুটিয়ে নিয়ে আসছে। চীন ভিয়েতনাম যুদ্ধে কায়দামত শিক্ষা পেয়ে আর কোন যুদ্ধে সরাসরি জড়ানো চিন্তা বাদ দিয়েছে।
রোহিংগা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ উপর দিয়ে উপর দিয়ে হলেও তা ইতিমধ্যেই জান্তার জন্য ভয়ানক দূ:চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। কারন এক পর্যায়ে তাদেরকে নামমাত্র হলেও বিচারের মূখোমূখি হতে হবে। এইজন্য বাংলাদেশের সংগে একটি সর্বাত্নক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে তারা খুবই উদগ্রিব। কারন এই যুদ্ধটা তাদের জন্য একটা রক্ষাকবচ হবে।
হতাশ হয়েন না, আমাদের আগে জানা দরকার ওদের পিছনে কারা কারা আছে এবং কোন কোন স্বার্থে তারা জড়িত। তাদের শক্তিমত্ত্বা ও দূর্বলতা আমাদের চিহ্নিত করতে এবং আমাদেরটাও সেইভাবে সনাক্ত করতে হবে। লক্ষাধিক সৈন্য, হাজার খানেক ট্যাংক ও শতাধিক যুদ্ধবিমান নিয়ে কোন দেশকে আক্রমন করার দ্বিত্বীয় মহাযুদ্ধীয় ধারনা বর্তমানে ক্রমান্বয় অচল হয়ে আসছে। যে সব দেশ সবধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরীতে সক্ষম এবং আর্থিক শক্তিতে ও বলিয়ান সেই সকল দেশসমূহ ছাড়া অন্যরা এই পদ্ধতি আর অবলম্বন করে যুদ্ধে যায় না।
এখন যুগ হচ্ছে শত্রুর কোন টার্গেট ঠিক করে অতর্কিত হামলা করে সেটি ধ্বংস করে ফেলা, শত্রুকে নিকটে আসতে না দিয়ে দুরবর্তী স্হানেই তাদের প্রতিরোধ করা, তাদের সাপ্লাই লাইন কেটা ফেলা, তাদের রসদপত্র অতর্কিত আক্রমনে ধংস বা অকেজো করে ফেলা, তাদের গোপন কর্মসূচী গুলি ফাইন্ড-আউট করে কমান্ডো আক্রমনে নস্যাৎ করে ফেলা ইত্যাদি। এই কাজগুলি সম্পন্ন হবে স্পেশাল বাহিনী দ্বারা যারা উচ্চ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত এবং অত্যাধিক যন্ত্রপাতী দ্বারা সজ্জ্বিত (মিশনের ধরন বুঝে)। আর এর জন্য দরকার হবে অতি আধুনিক যন্ত্রপাতী, যোগাযোগ কৌশল সমৃদ্ধ উচ্চ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত গোয়েন্দাবাহিনী।
এক্ষেত্রে স্হানীয় মানুষদের কৌশলে জান্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রচলিত-অপ্রচলিত সবধরনের যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে ক্রমান্বয়ে তাদের দূর্বল করে ফেলতে হবে। এটি একটু সময়স্বাপেক্ষ হলেও কার্যকরী। সর্বাত্নক যুদ্ধ হলে কয়েক সপ্তাহের খরচই বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলতে যথেষ্ট। সুতরং এটি পরিত্যজ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫