সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর জন্য দায়ী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বহুজাতিক এক সামরিক মহড়ায় পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন ‘কোবরা গোল্ড’ নামের ওই মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেনেন্ট কর্নেল ক্রিস্টোফার লোগান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বার্ষিক ওই মহড়ায় মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে থাইল্যান্ড।
কোবরা গোল্ড মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের কয়েক হাজার সৈন্যের পাশাপাশি এশিয়ার অন্যান্য দেশও অংশ নিয়ে থাকে।
চলতি বছরের কোবরা গোল্ড মহড়ায় মিয়ানমারসহ ২৯টি দেশ অংশ নিয়েছিল।
মহড়ার মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ তৎপরতা অংশের পর্যবেক্ষক হিসেবে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন লোগান।
থাইল্যান্ডের রাজকীয় সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট ইন্টিলিজেন্স ডিরেক্টরেটের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেছে কিনা তা পরিষ্কার না হলেও থাইল্যান্ড চায় তারা আসুক।
আমন্ত্রণ জানানোর সময় রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, “আলোচনায় এটি আসেনি। এই ইস্যুটিকে (রোহিঙ্গা) আলাদা রেখেছিলাম। আমরা প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও সামরিক সহযোগিতার বিষয়গুলোতেই জোর দিয়েছি। আমাদের আশা মিয়ানমার এতে অংশ নেবে।”
গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কথা বলার কর্তৃত্ব না থাকায় নাম জানাতে অস্বীকার করে ওই কর্মকর্তা বলেন, “ওটা রাজনীতি। আমরা সৈনিক, আর এটা একটি সামরিক মহড়া।”
এই মহড়ার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
চলতি বছরের অগাস্ট থেকে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়।
নির্যাতনের মুখে দেশটি থেকে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
জাতিসংঘসহ অনেক দেশই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নির্যাতনকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দূর্নীতির’ দায়ে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ১৩ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যাদের মধ্যে রাখাইনে বর্বর নির্যাতন চালানোর সময় সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেল মং মং সোয়ে-ও আছেন।
মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ না জানাতে যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ডের ওপর চাপ দিয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হয়নি পেন্টাগন।
রাখাইনে বর্বরতার দায়ে অভিযুক্ত সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মহড়ায় ডাক দিয়ে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বি: দ্র: বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি বুঝতে অক্ষম যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্বার্থের কাছে নীতি বা নৈতিকতা সবকিছুই অচল, এমনকি এখন এতে রাখঢাকের কোন প্রয়োজনীয়নতা কেউ বোধ করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩