আমাদের ক্লাসে মেহেদী হাসান নামে একজন ছেলে আছে।খুবই মজার ছেলে।অপরিচিত ও পরিচিত সবার সাথে মেশার এক অদ্ভুত ক্ষমতা তার আছে।ছাত্র হিসেবে সে মোটামুটি,তবে মানুষ হিসেবে যে ভালো,তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আমরা তাকে CNG নামে ডেকে থাকি।আমি তাকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি,CNG এর পূর্ণ রূপ কি।সে উত্তর দেয়নি।শুধু বলেছে এর অর্থ নাকি খারাপ,তাই আমাকে সে বলবে না।
যাই হোক,সিএনজির মাথায় প্রচুর শয়তানি বুদ্ধি সবসময় খেলা করে।এগুলোর মাধ্যমে সে অনেক বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।আবার অনেক ঝামেলাও বাঁধিয়ে ফেলে।তবে আজকে আমি তার এমন এক বিপদের কথা বলব,যখন সে তার ফিচলে বুদ্ধি দিয়ে পার পেয়ে গিয়েছে।
ক্লাস এইটে থাকতে আমাদেরকে বৃত্তি পরীক্ষা ছাড়াও আরেকটা সরকারী পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।পরীক্ষাটা অনেকটা বর্তমানের সমাপনী পরীক্ষার মত।সব সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন করা হত।তবে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাই বড় কথা ছিল,পাস-ফেল বলে কিছু ছিল না।স্যাররা বলত এর মাধ্যমে সরকার আমাদের পড়াশোনা সম্পর্কে নাকি খবর নিত।
এখন,সিএনজি পরীক্ষা দিতে গিয়েছে।প্রশ্ন হাতে পাবার পর সে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় পুরোটায়।দেখে ধর্ম ছাড়া বাকি সব সাবজেক্ট থেকে প্রশ্ন মোটামুটি কমন পড়েছে।সে ভাবে ধর্মের প্রশ্ন সে অন্য কারো থেকে পরে দেখে নিবে।আপাতত সে বাকিগুলো লিখবে।সে তা-ই করে।
সব প্রশ্ন মোটামুটি লিখে ফেলার পর সে ধর্মের প্রশ্নের দিকে আবার তাকায়।দেখে সত্যিই কোন প্রশ্ন কমন পড়েনি।সে চারপাশ তাকাতে থাকে।এমন সময় গার্ডটিচার তাকে বেশ জোরে ধমক দেয়।সে তখন বুঝতে পারে এভাবে হবে না।অন্য উপায় বাতলে নিতে হবে।
সে পরীক্ষায় তার পাশে সুজন বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ ছেলে বসে।তার আবার ধর্মের প্রশ্ন সব কমন পড়ে।এদিকে উপায় না দেখে সিএনজি তাকে জিজ্ঞেস করে ,"সুজন,তোর ধর্মের প্রশ্ন সব কমন পড়েছে?"সুজন বলে,"হ্যাঁ"।সিএনজি বুঝতে পারে ধর্মে পাশ করতে গেলে এই সুজনেরই সাহায্য নিতে হবে।তাই সে বলে,"তুই মুখে মুখে উত্তর বলতে থাক,আমি লিখি।"সুজন কিছু বলে না।কারণ সে ছোটবেলা থেকে সিএনজির এমন অদ্ভুত আচরণের সাথে পরিচিত।সে কেবল উত্তরগুলো মুখে মুখে বলতে থাকে আর সিএনজি লিখতে থাকে।
ধর্মের প্রশ্ন লেখার পর সে পড়ে আরেক ঝামেলায়।পরীক্ষার খাতায় তার নাম সে লিখেছে 'মেহেদী হাসান' (স্বাভাবিক)।এখন সে ভাবে কি করবে।অনেক ভেবে সে পরে নামটা কেটে লিখে দেয় 'মেহেদী বড়ুয়া'!
এত বড় কান্ড করার পর সে অতি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে খাতা জমা দিতে যায়।গার্ডটিচার খাতা জমা নেবার সময় নাম মেলাতে গিয়ে দেখে ডালমে কুছ কালা হ্যায়।তিনি সিএনজির দিকে তাকিয়ে বলে ,"তোমার নাম কি?"সে বলে ,"ম্যাডাম,মেহেদী হাসান।"তখন তিনি বলেন,"তাহলে এমন নাম লিখেছ কেন?"সে তখন বলে,"কি করব ম্যাডাম,ইসলাম ধর্মের প্রশ্ন একটাও কমন পড়েনি।বৌদ্ধের প্রশ্ন পড়ে দেখি কিছু কিছু কমন পড়ছে।তাই নাম চেঞ্জ করে দিয়েছি!"
ম্যাডাম তখন মুচকি হেসে বলেন,"নামটা চেঞ্জ করে ফেল তাড়াতাড়ি।"সিএনজি আর কথা না বাড়িয়ে সেটা কেটে আবার 'হাসান' উপাধি লাগিয়ে দেয়।
সত্যিই,এমন মজার কাজ আমাদের সিএনজি ছাড়া আর কেউ পারবে না!
হেডলাইনটার বিশ্লেষণ : ধর্ম এত সহজে কেউ চেঞ্জ করতে পারে না,যেভাবে সিএনজি করেছে।তাই এ ব্যাপারটা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে।আর এটা যে মজার কাহিনী,তাতে ত আর সন্দেহ নেই!
বি: দ্র: :: এই কাহিনীর মাঝে কেউ আস্তিক-নাস্তিক গন্ধ খুঁজে বের করবেন না।একে এক মজার গল্প হিসেবেই গ্রহণ করবেন এই আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:১৪