somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা' নিশ্চয়ই পড়েছেন?এবার তাহলে জানুন এর কাহিনী সত্য নাকি মিথ্যা!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবী বিখ্যাত একটি গল্প হল হ্যামিলিনের বংশীবাদক।প্রায় সব ব্লগারই এ গল্পটি শুনে থাকবেন।ক্লাস ফাইভের বাংলা বইতে আমাদের সময় এ গল্পটি ছিল।তার কাহিনী আর বর্ণনা করছিনা।তবে যারা শুধুমাত্র ফাইভের গল্পটি পড়েছেন,তাদের জন্য আমি হালকা করে শেষের দিকের অংশটা বলছি।
বংশীবাদক যখন সকল শিশুকে নিয়ে রওয়ানা দেয়,তখন শহরের কেউ কিছুই করতে পারছিল না।কারণ তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাঁশির সুর শুনছিল।তাদের দলে সেই মেয়রও ছিল।
তো বংশীবাদক শিশুগুলোকে নিয়ে হ্যামিলিনের শহরের পাঁচিল বেয়ে এক পাহাড়ের দিকে গেল।পাহাড়টি হঠাৎ দু'ভাগ হয়ে গেল।তখন বংশীবাদক শিশুগুলোকে নিয়ে তার ভিতরে ঢুকে গেল।তাকে বা শিশুগুলোকে পরবর্তীতে আর দেখা যায়নি।বলা হয়েছে ১২৮৪ সালের ২২ জুলাই ঘটনাটি ঘটেছে।
এখন কথা হচ্ছে এটি কি শুধুমাত্র একটি গল্প নাকি সত্যি ঘটনা?দীর্ঘদিন ধরে এ অমীমাংসিত ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে।হ্যামিলন শহরের পৌরসভায় রাখা নথিপত্র তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে এ ঘটনার উৎস জানার জন্য।অনেকেই বিশ্বাস করেন এটি সত্য কাহিনী।জার্মানীর হানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণে একটি শহরের নাম হ্যামিলন।একাদশ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।১২১২ সালে নিকোলাস নামক একটি ছেলে ঐ শহরের ছেলেমেয়েদের এ কথা বলে উত্তেজিত করে তুলে যে সে তাদের নিয়ে যাবে জেরুজালেমে।জেরুজালেম হল পুন্যভূমি।সে তাদের কাছে এক রহস্যময় বর্ণনা দিয়েছিল।সে বলেছিল তারা যখন ভূমধ্যসাগরে পৌঁছুবে,তখন সাগর শুকিয়ে যাবে।তারা হেঁটে তা পাড়ি দিবে।এভাবে সে প্রচুর ছেলেমেয়েকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে।কিন্তু পরে তাদের আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।গবেষকরা বলেন,নিকোলাস ছিল ছেলেধরার দলের চর।ঐ সমস্ত শিশুকে সে মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করে দিয়েছিল।
সে শহরের একটি রাস্তার নাম বাঙ্গেলোসেন্ট্রাস।এর অর্থ হল 'যে রাস্তায় বাজনা বাজে না'।ঐ রাস্তার একটি কাঠের ফলকে খোদাই করা আছে ১৮২৪ সালের ২৬ জুন হ্যামিলনের ১৩০টি শিশুকে এক রংচঙা ব্যক্তি অপহরণ করে নিয়ে গেছিল যাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
হ্যামিলনে রয়েছে একটি জাদুঘর।ঐ জাদুঘরে সঞ্চিত অনেক বইয়ের মাঝে পঞ্চদশ শতাব্দীতে লেখা কয়েকটি বইয়ে পাওয়া যায় এই রহস্যময় কাহিনী।সেখানে এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ দেয়া আছে।ফ্রাউ ভন লিউড নামের এক তেরো বছরের বালক বলেছে যে লোকটির বয়স আনুমানিক ছিল ৩০।খুব সুদর্শন দেখতে।তার বাঁশিটি ছিল রুপোর তৈরি।
অন্য এক নথিতে পাওয়া যায় ১৩০০ শতাব্দীতে হ্যামিলনের বাজারে এক কাঠের ফলক ছিল।সেখানে এক বংশীবাদক ও অনেক শিশুর ছবি ছিল।সেটা ১৭০০ সালে ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১২৩৭ সালে এর্ফুট শহরে এক হাজারেরও বেশি ছেলেমেয়ে হঠাৎ শহর থেকে দলবদ্ধ হয়ে বাইরে আসে।তারা নাচতে নাচতে পৌঁছায় আর্নস্টার্ড নামের এক জায়গায়।অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন তাদের পাওয়া গেল তখন তাদের শহরে ফিরিয়ে আনা হল।কে যে তাদের নিয়ে গিয়েছিল তার হদিস পাওয়া গেল না।বাড়ি আসার পর বেশিরভাগ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাদের মাঝে মূর্ছা রোগ দেখা যায়।
এ ধরনের আরেকটি রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিল ১৪৫৮ সালে।জার্মানীর সোয়াভিয়া অঞ্চলের একটি শহরের নাম হাল।সেই শহরের ৮-১২ বছরের শিশুদের মধ্যে হঠাৎ করে এক ধরনের উন্মাদনা লক্ষ্য করা গেল।তারা ঠিক করেছিল ,দলে দলে তারা ফ্রান্সের মিশেল নামের এক তীর্থ স্থানে যাবে।সেখানে আছে একটা মঠ।বয়স্করা এ ব্যাপারে বাধা দেবার চেষ্টা করলেন।এতে ছেলেমেয়েদের অধিকাংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে।তখন বাধ্য হয়ে শিশুদের এই মহাপ্রস্থান মেনে নেন অভিভাবকেরা।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পে ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত শহরের কথা বলা হয়েছে।মধ্যযুগে ইউরোপে প্লেগরোগ ভয়াবহরুপে দেখা দেয়।তখন ইঁদুর ধরার জন্য এক বিশেষ লোক দেখা যেত।অবশ্য তারা বাঁশি বাজিয়ে ইঁদুর ধরত নাকি,তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।হাইফ্রিকুয়েন্সির শব্দতরংগ দিয়ে ইঁদুরকে আকৃষ্ট করা যায়।
হ্যামিলনের জাদুঘরে একটি প্রাচীন টিনের বাঁশি রাখা আছে।প্রাচীনকালে ইঁদুর ধরিয়েরা এ ধরনের বাঁশি ব্যবহার করত।
ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়,১২৮৪ সালে হ্যামিলনে দুটি ঘটনা ঘটে।একটি হচ্ছে প্লেগ,অন্যটি নাচুনে রোগ।এক বিশেষ ধরনের খাদ্য বিষক্রিয়ায় এ রোগ দেখা দেয়।এতে রোগী ঘন্টার পর ঘন্টা নাচতে থাকে।লাল রঙ তাদের আকৃষ্ট করত খুব।সাধারণত ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
যারা এ গল্পটি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে,তাঁদের মধ্যে হ্যান্স ডোবারটিন সবচাইতে সফল।তিনি এ গল্পের বর্ণনা দেন অন্যভাবে।তা ছিল গ্রহণযোগ্য।তিনি এ গল্পের তথা কাহিনীর ব্যাখ্যা দেন ১২৮৪ সালের ঘটনার উপর ভিত্তি করে।
বর্তমানে হ্যামিলনে যে পৌ্রসভা রয়েছে,তার নামের অর্থ হল ‘ইঁদুর ধরা লোকের বাড়ি’।এটি নির্মিত হয় ১৬০২ সালে।এর দেয়ালে বিশ্ববিখ্যাত কাহিনীটির ছবি চমৎকারভাবে আঁকা আছে।
গল্পের কাহিনী নিয়ে এখনো গবেষণা হচ্ছে।


হ্যামিলন যেতে ইচ্ছে করছে!



রেফারেন্স : আলী ইমামের 'রহস্যের খোঁজে'।
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×