প্রথমেই বলে রাখি, এটি আমি খুঁজে পেয়েছি আজকেই দুপুরে, একটা পুরানো হাতে লেখা ডায়েরীর ডে এন্ট্রি হিসাবে। নীলক্ষেতে গেলেই পুরোনো বই ঘাঁটাঘাঁটি করি, সেই সূত্রেই এই ডায়েরীটা আজ পেলাম। অল্প ক'টা মাত্র পাতা রক্ষা পেয়েছে পোকার আক্রমন হতে, সেই বেঁচে যাওয়া কিছু জীর্ন পাতার প্রথমদিকেই রয়েছে এই ফিকশনটা। ডায়েরীটা লেখা সেই আশির দশকে, তবে অশ্চার্য্যজনক ভাবেই গল্পটার দিন তারিখ সব এই বর্তমান ২০১১ সালের! তাই এটাকে রাজনৈতিক ফিকশন বলছি, মানে সেই আশির দশকে লেখক ভবিষ্যতের কথা, মানে আজকের ২০১১ সালের কিছু ঘটনা এত নিখুঁত লিখেছে আমি আশ্চার্য্য না হয়ে পারছি না। তবে শুরু করা যাক পড়া, প্রতিটা বর্ন হুবহু সেই জীর্ন ডে লগের অবিকল রাখছি। শুরু এভাবে,
--------------------------------------
আজ মে ২৫, বুধবার, ২০১১ সাল। আজ একটা বড় ধরনের নাটক দেখলাম যশোহর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। নিশ্চিত খবর পেয়েছিলাম বেশ বিশ্বস্ত একটা সূত্রে, সেই খুনিটা, মানে সেই যে বছর চারেক আগের, ২০০৭ সালের আলোড়োন তোলা খুনটার প্রধান আসামীটা, তার সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বেশ কিছুদিন ধরেই আর্জি পেশ করে রেখেছিলো এই খুনের মামলা হতে অব্যহতি পাবার জন্য। আজ তার রায় হবার সম্ভাবনা আছে এমনটা জেনেই রগড় দেখতে গিয়েছিলাম।
গত সন্ধায়, মানে মে ২৪, ২০১১ তারিখে গুজবটা শুনি, আমার সেই সূত্র জানিয়েছিলো, পিপি ফিরোজ আলী নাকি আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলো আসামীদের, ফাইনাল শুনানীতে রায়টা ওদের পক্ষেই যাবে। কারনটাও জলবৎ তরলং। খুনের আসামীগুলো সবাই দল করে, আর পালের গোদাটা, যে নিজের হাতে ঘরে ঢুকে খুন করেছিলো সেই একুশ বছরের তরতাজা নির্বিরোধী ছেলেটাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে, সে আবার বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, যার নাম "আম্বালীগ", তাদের যুবক গুন্ডা দলের একজন ছোটোখাটো নেতা। আর দলের নেত্রীতো হুকুম দিয়েই রেখেছেন, তার দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আছে এমন যেকোনো রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা অবিলম্বে খারিজ করে দিতে হবে।
একটা ঘাড় ত্যাঁড়া পত্রিকা অবশ্য প্রানপন চেষ্টা করেছিলো ঘরকুনো ছেলেটা, যে কোনো দিন কোনো রকম দলবাজিতে থাকতো না, তার খুনটা কিভাবে রাজনৈতিক হয়রানীমূলক হয় সেটা নিয়ে বড় করে ফ্রন্টপেইজ রিপোর্ট করে সুধীজন নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে। হয়তো ওরা আশা করেছিলো, লীড নিউজ টাইপ কিছু দেখলে পিপি অথবা বিচারক যতবড় ঘুষখোরই হোক, একটু চোখে পর্দা টানবে।
তবে সেরকম কিছু হয় নি, বরং এটা নিয়ে বেশ ঠাট্টা মশকরা হয়ে গেছে কোর্টরূমে। বিচারক নিজেই জানিয়েছেন, যেহেতু আসামী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সেহেতু তার বিরুদ্ধে যেকোনো মামলা আনলে সেটা অবশ্যই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হিসেবে দেখতে হবে, এমনকি তার স্ত্রী যদি ডিভোর্সের মামলা ঠুকে বসেন সেটাও, কারন হতে পারে এটা বিরোধীদলের সূক্ষ চাল! বলাতো যায়না! তাই না? আমরা বেশ হেসেছিলাম এই কৌতুকে।
------------------------------------
** ডায়েরী লেখকের ডে লগ এখানেই শেষ, তবে গল্পটা শেষ হচ্ছে না। কারন যশোহর, মানে যশোর শব্দটা পুরোনো অনেক কথাই মনে পড়িয়ে দিচ্ছিলো। বিকেলের দিকে কি মনে করে যশোরের এক সাংবাদিক বন্ধুকে ফোন করে গল্পটা সংক্ষেপে বলতেই সে একটা আশ্চর্যজনক খবর দিলো আমাকে। সত্যিই কাল ২৫ মে ২০১১ এমন একটা প্রহসন নাটক অনুষ্ঠিত হবার আশংকা করা হচ্ছে যশোর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। তবে দলের নামটা ঠিক মেলেনি, ডায়েরী লেখক "আম্বালীগ" বললেও সেই নামের কোনো দল পাওয়া যায়নি। কাছাকাছি মিল আছে এমন একটা দল অবশ্য আছে এখন ক্ষমতায়। তবে ক্ষমতাসীন দল সম্পর্কে কটুভাষন করে কারো বিরাগভাজন নাই বা হলাম?
আমি আরো জানতে চেয়েছিলাম, বন্ধুটি বললো, কাল ঘটনা কি ঘটে দেখে তারপর সব জানাবে, একদম শুরু থেকে, মানে কে সেই একুশ বছরের ঘরকুনো ছেলেটা, কি হয়েছিলো সেদিন আর কি নাটক হচ্ছে সেই মামলাটা নিয়ে সবই।
আমার কাছে মিলটা এখন পর্যন্ত কাকতলীয়ই মনে হচ্ছে, তবে কাল কনফার্ম হবো, যদি সত্যিই সেই আসামীগুলো এমন করে পার পেয়ে যায়। আর সেই সাংবাদিক বন্ধুটিতো আছেই, ওকে ধরে পুরোটা শুনবো একদিন ভাবছি। পাঠক, কেমন লাগলো আপনার এই কাকতলীয় ঘটনাটা?
আর হ্যাঁ, আরেকটা কাকতলীয় মিল বলা হয়নি এতক্ষন, দলের নাম না মিললেও, যশোরের বর্তমান পিপি নামটা হুবহু মিলে গেছে, নামটা ফিরোজ আলী!
---------------------------------------
আপডেট জুন ৯, ২০১১ : আপনার রাষ্ট্রের বিপক্ষে মামলা করছেন (সতর্কবানী)
গতদিন এই ফিকশনে একটা আপডেট দেবো বলে জানিয়েছিলাম, সেটা পেতে একটু দেরি হলো। লালফিতের দৌরাত্ব কতটা, সেটা আশা করি সবাইই জানেন, তাই আর বেশী বলতে যাওয়া অবান্তর।
ফিকশানটার সাথে অনেককিছু মিলে গেলেও, সেদিন আদালত সময়ের আবেদন করেছিলো আসামীরা, তাই সেই দিন আর কিছু ঘটেনি গল্পের মতন।
বাদী পক্ষের উকিল জানিয়েছিলেন, আবার একটা আবেদন করতে, জানাতে যে এই মামলাটা রাজনৈতিক নয়, একটি খুনের মামলা।
আজ দুপুরে বাদী আদালতে নথি আনতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ বেশ কড়া করেই মন্তব্য করেন, "আপনার রাষ্ট্রের বিপক্ষে মামলা করছেন।"
পুলিশের গলাতে একটু ধমকির সুর থাকলেও সেটা অগ্রাহ্য করে বাদী জানান, "হ্যাঁ, তাই করছি।"
বিচারক শুনানীর তারিখ ফেলেছেন আগামী আটাশে জুন, দেখা যাক তৃতীয় আপডেট কি আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯