মাসে ৩ লাখ রুপির প্রতিশ্রুতিতেও কাজ হয়নি। ভারতের এক সিনিয়র রিপোর্টার পত্রিকা ছেড়ে যোগ দিলেন আইএনএক্স-এর অধীনস্থ টিভি চ্যানেলে। কেননা, চ্যানেল কর্তৃপ তাকে মাসে ৬ লাখ দেবে বলেছে। এক লাফে দ্বিগুণ। নবিশরাও বসে নেই। নতুন চ্যানেল মানেই পৌষমাস। প্রিন্ট মিডিয়ায় যতকিঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তারাও ছুটছেন টিভিতে। সাংবাদিকতা করা হোক না হোক, মাইক হাতে টিভির সামনে চেহারাটা তো দেখানো হচ্ছে। তার উপর ডবল বেতন।
ভারতের বাজার মিডিয়াকে এতোটাই ভালবাসে, যে আগামী বছরেই দেশটির মিডিয়া বিনিয়োগ ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ৫ বছর পর মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে ২ হাজার ২শ কোটি ডলারে। কারণ আদা-রসুনের ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক; সবাই সঞ্চয়ের থলি নিয়ে নামছে মিডিয়া বাণিজ্যে। রুপার্ট মার্ডক হওয়ার খায়েশে তারা দ্বিগুণ তিনগুণ বেতনের চুক্তিতে নবিশ সাংবাদিকদের হাতে মাইক্রোফোন গুঁজে দিচ্ছে।
প্রশিক্ষণের বালাই নেই। সেমিনারে বক্তারা কে কী বললেন সময়মতো তা ধরতে পারলেই কম্মো সারা। তাই মিডিয়া বাণিজ্যে যতোই ফুলে ফেঁপে উঠুক না কেন, সাংবাদিকতাটা সেভাবে হয়ে উঠছে না।
ছোটবড় মিলিয়ে ভারতে এখন চ্যানেল আছে ৩২৪টি। ৪ বছর আগে ছিল ২১০টি। ডিসেম্বরেই আসছে আরও ৮টি। গড় হিসেবে মাসে দুটি করে নতুন টিভি চ্যানেল। কিন্তু চ্যানেলের আয়ের একমাত্র মাপকাঠি দর্শকসংখ্যা সেই হারের ধারে কাছেও নেই। প্রথমসারির ৫টি চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমেছে। ৪ বছর আগে যে অনুষ্ঠান ভিউয়ারশিপ রেটিং এ ১০+ পেত, সেগুলো এখন ১-২ এর কোঠায়। তথা, বিজ্ঞাপনের আয়ে নিশ্চিত ধস।
তথাপি ভারতীয় চ্যানেলগুলো গত বছরে তাদের বিজ্ঞাপনের রেট বাড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বিজ্ঞাপনের আয় (ব্যাতিক্রম ¯েক্সার্টস চ্যানেল)। আইডিয়া সঙ্কটের দরুণ বাড়ছে মানহীন অনুষ্ঠান ও মেগা সিরিয়াল।
ব্যবসায়িক স্বার্থে চ্যানেলগুলো ক্রমশ 'সংবাদ'-এর মূল সংজ্ঞা থেকে সরে যাচ্ছে। নিউজরুমের চিন্তা-চেতনায় ঘুরেফিরে কেবলি শো বিজনেস ও ক্রিকেট। পরিবেশ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। সরকারি কিংবা সংসদীয় রিপোর্ট কীভাবে পড়তে তা সেখানকার অনেক সিনিয়র টিভি রিপোর্টার জানেন না। একমাত্র দূরদর্শন ছাড়া কৃষক, শ্রমিক, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভারতের কোনও চ্যানেলই মাথা ঘামাচ্ছে না। তবু প্রতি মাসে বাড়ছে চ্যানেলের সংখ্যা। মিডিয়া ব্যবসার প্রতি উপমহাদেশের অন্যতম প্রতিনিধি ভারতের লাগামছাড়া প্রীতির প্রভাব পড়তে পারে গোটা দণি এশিয়ায়। প্রতিযোগিতার হঠাত্ জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যেতে পারে এ অঞ্চলের মিডিয়ার মেরুদণ্ড। অর্থ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কর্পোরেট জগতের অনেক চুনোপুটিও বিকিয়ে দিতে পারে সংবাদের এথিকস।
(আমাদের টিভি চ্যানেল ও সেগুলোর বাণিজ্যিক বিষয় সংশ্লিষ্ট একখানা আধা-গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন তৈরির প্রয়াসে আছি, কোনও তথ্য কিংবা তথ্যের উত্স জানালে বাধিত হইবো...বিনীত, ফয়সল আবদুল্লাহ)