গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছিল থ্যাংক্স গিভিং, আমেরিকানদের বড় মাপের উৎসব, ফলে বেশির ভাগ অফিস আদালত বন্ধ। প্রচুর লোক এ ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যান। আমিও গিয়েছিলাম, ছোট ছেলে থাকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলীনে, তার বাসায়। ওর মা গেছেন ঢাকায়, তাই আমাকে একাই যেতে হয়েছে।
এই ব্রুকলীনেই থাকেন এ ব্লগের একজন অত্যন্ত সুপরিচিত সিনিয়র ব্লগার, সোনাগাজী। আমি যখন এ ব্লগে প্রথম আসি তখন তিনি চাঁদগাজী নামে লিখতেন! ভাবলাম দেখি উনার সাথে দেখা করা যায় কিনা। বেশ আগে একবার সুযোগ হয়েছিল উনার কাছ থেকেই উনার ব্যাক্তিগত ফোন নম্বরটি নেয়ার। তাই দেরী না করে কল করলাম, উনি বললেন, উনি সাবওয়েতে, বের হয়ে কল করবেন। এর আগেও কথা হয়েছে, দেখা করতে চেষ্টাও করেছি, সুযোগ মিলেনি। তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মাঝেই কল করলেন!
আলাপ করে বুঝতে পারলাম কাছেই কোথাও থাকেন। পরদিন ছিল শনিবার, দুপুরে কোথাও লাঞ্চ করার সময় হবে কিনা জানতে চাইলে সহজেই রাজি হয়ে গেলেন। ভাবী, ছেলে দেশ থেকে সদ্য আসা আত্মীয়স্বজন নিয়ে ব্যাস্ত, তাই একাই আসবেন।
ভেন্যু হিসাবে একটা আরবী রেস্তোরাঁ ঠিক হলো, আমার ছেলের বাসার কাছেই ।
পরদিন উনি এলেন! অনেকদিন থেকেই যাকে দেখার একটা ইচ্ছা, যাকে ভেবেছি একজন শক্ত সমর্থ জাঁদরেল, দেখলাম তেমন কিছু নন, সাধারণ আর দশজন প্রবীণ বাংলাদেশীরই মত! সালাম, পরিচয়, কুশল বিনিময় পর্ব শেষে এক টেবিলে বসলাম। ব্লগে অনেকের লেখা পড়ি, অনেককেই দেখতে ইচ্ছে করে, এই প্রথম একজনকে সামনা সামনি দেখা!
আমার লেখার বিষয় ও মান সম্পর্কে উনার যে ধারণা তাতে সামনে পেয়ে কি না কি বলে বসেন সেই ভয়ে আমার ছেলেকেও সাথে নিয়েছিলাম উনার অনুমতি নিয়েই, ছেলে থাকলে বেশি খারাপ কিছু বলতে হয়তো লজ্জা পাবেন এই ভরসায়! তিন জন এক কোণায় একান্তে বসে অনেক আলাপ হলো। ব্লগ, রাজনীতি, দেশ, মুক্তি যুদ্ধ, বিভিন্ন বিষয়ে। এতদিন উনার লেখা, কমেন্ট পড়ে উনাকে আমার যতটা ভীতিপ্রদ মনে হয়েছিল, দেখলাম তিনি ঠিক ততটাই ভদ্র, অমায়ীক, মিষ্টভাষী! সম্প্রতি কিছুটা অসুস্থও, পাল্স রেট কমে যায় বলে ডাক্তার সাবধানে থাকতে বলেছেন। কিছুদিন আগে কোন এক পার্কে পড়েও নাকি গিয়েছিলেন!
আমার ছেলের বোঝার সুবিধার্থে বাংলার সাথে সাথে অনেক কথা উনি ইংরেজিতেও বলছিলেন।
ছেলেও উনার কথা বেশ মন দিয়ে শুনছিল, সব কথা ও বোঝেনি, যতটুকু বুঝেছে তাতেই ও মুগ্ধ!
ঘন্টা দুই পর রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যখন বিদায় নিয়ে প্রচন্ড শীতে বাসার দিকে হেঁটে আসছিলাম, আমার ছেলের মন্তব্য ছিল, cool guy, pretty impressive!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪৩