ডঃ ইউনুসের ভাষন শুনলাম। আবেগে দুই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি। এ কি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধানের ভাষন ? দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রবাসে আছি। এখানকার প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষন দেয় টিভিতে , তখন একটার পর একটা জনবান্ধব খবর খালি শুনি আর নিজের অগোচরে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, ফেলে আসা নিজের মাতৃভুমির কথা ভেবে। মহান রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করছি এমন দিন দেখানোর জন্য যা এই জাতি স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রুপকার ও বাস্তবায়নকারী সমন্বয়কদের যারা সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক কাতারে নিয়ে আসতে পেরেছে । সম্মিলিতভাবে ছাত্র- জনতা এবং শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ছাত্র-জনতার পাশে দাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারনেই সম্ভব হয়েছে এক ভয়ঙ্কর ফ্যসিস্ট দানবকে উৎখাত করা যা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছিল দক্ষিন এশিয়ার পরাশক্তির ডাইরেক্ট সমর্থনের কারনে। তবে জনগন প্রমান করেছে যে, ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।
ভাষনে ডঃ ইউনুস বলেন যে, ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককেএই কমিশনগুলি পরিচালিনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড: শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
উপড়ের এই লিস্টটা দেখে অত্যন্ত স্বস্তিবোধ করছি যে , এতদিনে যোগ্য , দক্ষ ও কঠিন লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) হলো বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশী শাখা। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিবেদিত একটি নাগরিক সমাজ সংস্থা। এই সংস্থার পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান হয়েছেন দুদক এর সংস্কার কমিশনের প্রধান । সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরি পেয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান এর দায়িত্ব। বাকিরাও সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য বলেই মনে হচ্ছে । ইনারা কাংখিত সংস্কার আনতে সমর্থ হবেন বলেই আশা করা যায়। এছাড়া স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহন করা সব সরকারী কর্মকর্তাদের ওএসডি ও বদলি করা হয়েছে। পদন্নোতি দিয়ে সামনে আনা হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের। বিশেষ করে পুলিশে ব্য্যপক রদবদল করা করা হয়েছে।
সত্য বলতে কি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ যখন গঠন হয়েছিল, তখন বেশ হতাশ হয়েছিলাম। জানিনা কারা উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিয়েছিল। দুই ছাত্র সমন্বয়ক , আসিফ নজরুল ও রিজওয়ানা চৌধুরি ছাড়া বাকি উপদেষ্টাদের মুখ খুলতেই দেখা যায় না। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ ও পররাস্ট্র উপদেষ্টার কথাবার্তা পুরোপুরি সন্দেহজনক। এই দুই উপদেষ্টাকে স্বৈরাচারের দোসর বলেই মনে হয়। বর্তমান স্বরাস্ট্র উপদেষ্টাও একেবারেই ব্যক্তিত্বহীন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও একেবারে অযোগ্য। এইসব অযোগ্য ব্যক্তিদের সামনে সরিয়ে দেয়াই রাস্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে। স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহন করা সব সরকারী কর্মকর্তাদের ওএসডি ও বদলি করা হয়েছে।
আমাদের অনেক অনেক সৌভাগ্য যে, ডক্টর ইউনুসের মত ব্যক্তি আমাদের দেশে জন্মেছেন। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এবার এই দেশ এগিয়ে যাবেই ইনশাআল্লাহ ------
তথ্যসুত্র ঃ মানবজমিন