সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
ব্যাপক ঘাটতি থাকায় জনগণকে কাঙ্খিত বিদ্যুৎ সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তার উপর তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকার চরম বিপাকে পড়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন বিদ্যুৎ সেক্টরকে স্থায়ী ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উপর। কিন্তু এ অবস্থায় সরকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছরেও তৈরি করতে পারেনি চূড়ান্ত কয়লানীতি। সর্বশেষ গঠিত রিভিউ কমিটির মতামত জমা দেয়ার সময় ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও তারা এখনো জমা দিতে পারেনি। ফলে দেশীয় কয়লা উত্তোলন ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কেমন করে তোলা হবে এ বিতর্কে মাটির নিচে পড়ে আছে কয়লা।
এদিকে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নের পথ নকশায় প্রায় ৮ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকার যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে তার মধ্যে রয়েছে বড়পুকুরিয়া কৈলাশ দীঘিপাড়া ৩ এ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানায় ৬০০ মেগাওয়াট, বড়পুকুরিয়া কৈলাশ দীঘির পাড় ২ এ ৬০০ মেগাওয়াট, বড়পুকুরিয়া কৈলাশ দীঘির পাড় ১ এ ৬০০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাটে ৬০০ মেগাওয়াট, কেরানীগঞ্জে ৭৫০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম দক্ষিণে ৬০০ মেগাওয়াট, বেসরকারি খাতে আইপিপি খাতে চট্টগ্রামে ১৩০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ৩০০-৬৫০ মেগাওয়াট, মাওয়া মুন্সীগঞ্জে ৩০০-৬৫০ মেগাওয়াট, বাগেরহাটে দক্ষিণ পিপিপি ১৩০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১৫০-৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু কয়লা নিয়ে সরকারের ধীরে চলো নীতির কারণে এসব পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাটে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি হয়েছে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী বাগেরহাটে ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। অন্যদিকে এ পর্যন্ত মাওয়া মুন্সীগঞ্জে ৩০০-৬৫০ মেগাওয়াটসহ প্রায় ১১শ' মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বেসরকারি কোম্পানি অরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বলা যায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের এ পর্যন্তই অগ্রগতি।
এদিকে কয়লানীতি প্রণয়নে সরকারের সর্বশেষ কমিটিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কয়লানীতির রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গঠিত রিভিউ কমিটিকে ৪ মাসের মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত দেয়ার কথা ছিল। সে কমিটিও নির্ধারিত সময়ে মতামত দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছে দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কয়লার বিকল্প নেই। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও শেষ রক্ষা সম্ভব নয়। ফলে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক উন্নয়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ দরকার।
এদিকে দেশীয় কয়লা উত্তোলন না করে আমদানি করা কয়লার উপরই নির্ভর করতে যাচ্ছে সরকার। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল হবে।
দেশীয় কয়লা উত্তোলন নিয়ে কিছু সংগঠন বিরোধিতা করছে। তাছাড়া সামনে নির্বাচন, তাই সরকার এ মুহূর্তে কয়লা নিয়ে কোন বিতর্কে জড়াতে চায় না। ফলে কয়লানীতি প্রণয়ন ও কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত ধীরলয়ে চলছে।
অথচ দেশের সব কয়লা খনি উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সামনে রেখে যেখানে যে পদ্ধতি উপযুক্ত সেখানে সে পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে দ্রুতই কাজ শুরু করতে চায় কোম্পানিটি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ব্যাপক বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার যে পরিকল্পনা করেছে তাতে প্রতিবছর ২৬ মিলিয়ন টন দেশী কয়লার প্রয়োজন। কিন্তু এখন উৎপাদন হচ্ছে এক মিলিয়ন টন।
শুধু উত্তর বড়পুকুরিয়াতে কয়লা উত্তোলন উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ছয় মিলিয়ন টনে। কিন্তু এতেও সঙ্কট থেকে যাবে ১৯ মিলিয়ন টনের।
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন সেন্টারের (আইআইএফসি) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্রে মোট মজুদের পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন। তাপমাত্রার হিসাবে যা ৮১ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট (টিসিএফ) গ্যাসের সমান। আর উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন, যা ৩৭ টিসিএফ গ্যাসের সমান। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দেশে প্রমাণিত গ্যাস মজুদের তুলনায় এর পরিমাণ প্রায় ১৭ টিসিএফ বেশি। এই পরিমাণ কয়লা দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট করে ৫০ বছরজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র একটি খনির আংশিক এলাকা থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আজকে সিদ্ধান্ত নিলেও নতুন কোনও খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে সময় লাগবে কমপক্ষে ৪ বছর। অর্থাৎ আজকের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে ৪ বছর পরে আমরা কী করতে চাই। সরকার তার প্রস্তাবিত খসড়া কয়লানীতির মুখবন্ধে লিখেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি জ্বালানি। বাণিজ্যিক জ্বালানির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা প্রায় ৭৩ শতাংশ গড়ে উঠেছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য মজুদ দ্রুত নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গ্যাসের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই নির্ভরযোগ্য বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। দেশের বিদ্যমান জ্বালানি উৎসসমূহের বিবেচনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সরকার নিজেও জ্বালানি সঙ্কটের ভয়াবহতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাদের কর্মে সে উদ্বেগের কোনই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এটা সরকারের বাস্তব অবস্থা অনুধাবনের অক্ষমতা এবং যথাযথ দায়বোধ না থাকারই বহিঃপ্রকাশ।
মূলতঃ এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
সূত্রঃ