মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে পৃথক পৃথকভাবে গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও যুব সংগঠন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকালে তাদের এসব বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠে প্রেস ক্লাব চত্বর। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন পৃথকভাবে এবং যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এসব কর্মসূচিতে নেতারা অভিন্ন দাবি করে বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাদের আগ্রাসনবাদী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এদেশে ঘাঁটি গাড়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা এ দেশের গ্যাস, তেল, খনিজসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করা ছাড়াও সামরিক ঘাঁটি গড়তে চায়। এ লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চুক্তি করছে। আর এ কারণেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের এবারের বাংলাদেশ সফর বলেও তারা অভিযোগ করেন। দেশবিরোধী এসব চুক্তি সবসময়ই গোপনে হচ্ছে দাবি করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেন, যতোই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এ দেশের জনগণ টিফা, সোফা, হানাসহ কোনো চুক্তিই বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
তারা একই সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সফরের প্রতিবাদ করে বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হালের সহযোগী ভারত বিভিন্ন ন্যায্য পাওনা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে সাম্রাজ্যবাদের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে তৎপর। তিস্তাচুক্তি সম্পাদনসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতেও নেতারা ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।
সিপিবির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিল। হিলারী ক্লিনটন-এর উপস্থিতি বাংলাদেশের আগামী দিনের জন্য অশনি সংকেত। ঢাকায় হিলারীর আগমনের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে কমিউনিস্ট পার্টি। এতে সভাপতিত্ব করেন কমরেড মনজুরুল আহসান খান। তিনি বলেন, “সারাবিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মূল হোতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম আগ্রাসী নেতা হিলারী ক্লিনটন। তারা সারাবিশ্বের ন্যায় দক্ষিণ এশিয়াতেও তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার অংশ হিসেবেই হিলারীর এই সফর।” মনজুরুল আহসান খান বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বুর্জোয়া দলগুলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে মাথা নিচু করে ফেলে। ক্ষমতায় এলে তাদের পছন্দমতো পদক্ষেপ নেয়।
তিনি আরো বলেন, দেশের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই আমেরিকা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতের অর্থমন্ত্রীর একই সময়ে আগমন প্রমাণ করে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ঘাঁটি হয়ে গেছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংঘাতকে উস্কে দিতেই তাদের এ ভ্রমণ বলেও মন্তব্য করেন মনজুরুল আহসান খান। তিনি সাহস থাকলে মার্কিনিদের সঙ্গে করা সব গোপন চুক্তিকে প্রকাশ্যে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিপিবির ঢাকা নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব লাভলুর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব প্রমুখ।
অন্যদিকে বাসদের বিক্ষোভ সমাবেশে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো চুক্তিই পার্লামেন্টকের অনুমোদন না নিয়ে করা হয় না। আর আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি করা হচ্ছে পার্লামেন্টে না তুলে জনগণকে অন্ধকারে রেখেই। এসব চুক্তিসহ সাম্রাজ্যবাদের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিতে জনগণকে রাস্তায় নামারও আহ্বান জানান তিনি। এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, জাহিদুল হক মিলু, রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।
গণসংহতি আন্দোলনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পানি ও নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এম ইনামুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, সমন্বয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ।
হিলারি ক্লিনটনের আগমনের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়নের যৌথ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল। বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুল ইসলাম মনির, ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে সংগঠনগুলো কর্মসূচি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আজ শনিবার হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছে। এরই প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন।
সূত্রঃ