তোমাকে, তোমাদেরকে
আমার শবদেহ কি দীর্ঘ মনে হচ্ছে তোমাদের কফিনের মাপে!
----------------------------------------------------------------------------------
প্রস্তুতি
মৃত্যুন্মুখ
আমি তো শ্রাবণ
শিশুপুত্র তোমার
চুম্বন করো, আমি তো উদগ্র ঈশ্বর তোমার!
প্রেমিক, প্রজাতন্ত্রী
শীতার্ত দিনে
হেসে ওঠো কুকুর ও হাস্নাহেনা
বিষুব অঞ্চলে
মোম বৃক্ষের ছায়া পড়ে আছে।
পীথ-বর্ণ পথে
গৃহে ফিরব না আর
প্রেমিক, প্রজাতন্ত্রী চিরকাল
দাঁড়িয়েছি সমুদ্রতীরে
লোমশূন্য গাছের স্মৃতি।
ফিতা
মাদারিপুরের স্তনের দিকে ধাবমান সিদ্ধিরগঞ্জ...
বাতাসে ব্লেড উড়ছে
বাতাসে ব্লেড উড়ছে...
কেওড়ার ডালে
মৃত ময়ূরীর চুল দেখা যায়...
... এ ছায়া কর্দমাক্ত
ঠিক মানুষ নয়, মানুষের মত অবয়ব।
শূন্য পাকস্থলী ফুঁড়ে জন্ম নিচ্ছে অজগর
দিদিরা যমুনামুখী অভ্যন্তর ফেলে দিতে
জরায়ন পরিত্যাগ করি...
আমি আর কেউটে সাপ অভিযাত্রী পরস্পর।
সু-প্রভাত নামে গ্রামের জঠরে...
রেলের বগিতে চড়ে চড়ুই পাখিটি যাচ্ছে
দাউ দাউ মহানগরের দিকে
আমাদের বেড়িবাঁধের পরে
রাত্রিময় পড়ে রয়েছিল দুধসাদা বিবমিষা না কি পূর্ণিমা!
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে...
আমি আর রেলগাড়ি
নদী পাড়ি দেই অস্তিত্বের ডিঙিতে চড়ে
জলে কর্ণ-গেঁথে শুনা যায়
আধখানা বাঘ, মহিষের হৃৎপিন্ডের আওয়াজ...
আর বেশি দূরে নয়
ঘূর্ণাবর্তে পিষে যাচ্ছি আলো
ল্যাম্পপোস্টে দন্ডিত হবে আলো, শিশুর ক্রন্দন...
স্বর্গের সরুপথ দিয়ে
আমরাও পৌঁছে যাব আপন জংশনে,
দূর বন্দরে রূপসীদের দেখা যায় মাংস-বোঝাই জাহাজের মাথায়
আমি দেখব না
ঢালাইয়ের নীচে চাপা-পড়ে-থাকা সন্তান পাথর
অহ শিশু, পাথর শাবক!
এ যজ্ঞে শুয়ে থাকি মর্গের ভেতর...
গন্ধ ফেটে পড়ে যোনী ও নেপথেলিনের
ইঁদুরের দেহে দূর্ভিক্ষের মত কাম আসে
ইঁদুরের তিনটি পা উরু বেয়ে উঠে আসছে
নাসারন্ধ্রের জমাট রক্তে, অবশিষ্ট ছায়ায়...
ক্রমে কালো হচ্ছে সাদা সাদা শবের বরফ।
আমার প্রেয়সী হায়!
মরু জ্যোৎস্নায় সে তো এক মেঘের জিরাফ
কেউ আমায় নিতে আসে না
কেউ আমায় নিতে আসে না...
মর্গে একা শুয়ে থাকি
জল ও অগ্নি বহুটা আংরা হলে ঘুম আসে, ঘুম আসে...
দূর গাঁয়ে তোমার লন্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা
দূর গাঁয়ে তোমার লন্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা...
খন্ডিত আপেল
উৎসর্গ: সখিনা আফ্রোদিতি
ঘুমের কাফন ফুঁড়ে তুমি আস
লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাও
নিরানব্বই স্তনের আড়ালে
ঐ যে কুয়াশার গ্রাম বহুদিনের পরিচিত মনে হয়।
কতবার তোমায় বলেছি- আমরাও বীরভূমে যাব
অসহ্য উঁচু হতে লাফ দিয়ে
দু’চোখ বন্ধ করে দেব
... আর আমার কাম ঢুকরে উঠবে কান্নার মত।
নড়ে উঠি ঘুমের ভেতরে
অতর্কিত লাথি পড়ে যায়
অস্তিত্বের মাথায়; ভেসে ওঠে যমুনা নদী...
নিম্নভূমে তাকিয়ে দেখি
ঝরে-পড়া শিশ্নের মাথায় হিমাঙ্ক রমণীর দাঁতের কারুকাজ
চিকচিক চিকচিক করে।
এখনও কি বুঝতে হবে
নারী ও নুড়ি পাথরের ব্যবধান
বাবা কি বলবে আমায়-
জেগে ওঠো বল্লম রায়
তুমি তোমার সৎ মায়ের স্তন্যপান করবে
তুমি রাজমেস্তরী হবে!
নিদ্রা ভেঙ্গে যায়
জাগ্রত, বয়স্ক বালিকার খোঁজে
ঐ যোনীমূলে লেগে আছে ঠোঁটের মানচিত্র আমার।
পবিত্র শয়তান
আপনি কি মাঙ্গলিক আছেন? প্রেয়সী আমার
কুশল জিজ্ঞাসা করি ফেরেশতার মহাত্ম্য নিয়ে
দীর্ঘ নির্বাসন শেষে
ধরায় এসেছি পূর্ণিমা রাতে, পাপিষ্ট পর্বত হতে
আমি তো অজ্ঞান, অজ্ঞাত ছিলাম...
জ্ঞাত হই- প্রেম আর কামের কৌশলে
আপনিও ঘর্মাক্ত শ্রাবণের জলে?
ঐ স্বর্ণলতা, সোনায় মোড়ানো বক্ষভূমে
দাফনা হয়েছিল যাদের
নিশ্চয়ই তারা ছিল মানুষ, কবির বংশধর।
আরো উর্ধ্তন
স্বর্গ নরক একাকার করে
অগ্নোৎপাতে আপনি অনন্যা
তাই দেখি, স্তনবিদ্যুতে কাঁপে
পৃথিবীর সব ঈষান কন্যা।
থৈ থৈ অন্ধকার দিকচক্রব্যাপি
আজ নরকমন্ডল হতে অগ্নি এনেছি
কোনো এক সাঁওতাল গ্রামে, পশু হত্যা আর তৃণের উৎসবে।
ভষ্মবৎ
জল ও স্থলের নির্যাস- আপনি তো পূণ্যবান
আমি শুধু তাবেদারি করি
পূতঃ পবিত্র শয়তান।
২.
মদ্যপান করি দু’জনে
সূর্যাতীত হিরকের বনে...
অর্বাচীন পোকা ও মাকড় ভুলে
আপনাকে নিয়ে
পরিভ্রমণে ভাসে জল ও নাভীর ফেনা।
চর্বন, চোষ্য-পেয়
এই সেই ঘন-গন্দম, রক্তাক্ত আপেল নিয়ে আসি
বেহেস্তী জল্লাদ হত্যা করে...
ছিলাম তো শয়তানের পিতা
সঙ্গম সখির বাতাসে আমিও মানুষ হয়ে যাই।
৩.
মহারন্ধ্রে ছাই হল
জগতের সব উজ্জ্বল শিখা
শূন্যস্থানে ভাসমান
আপনি ও চন্দ্রমল্লিকা।
চিরকম্পমান
আমার ডানায় ছিল নারকীয় শীত
ধরণীতে কে আপনি ওমেশ্বরী, জীবপন্ডিত!
আপনি কি সদাসত্য, আলোকিত ভুল
ঘুর্ণিঝড়ে আমি কেন দেখি উলঙ্গ মাস্তুল!
ওহে ধনবান
চন্ডাল আমি, নীচ
তবু, স্বর্গ হতে আনতে ভুলিনি
রক্তের কিরিচ।
প্রত্যাখ্যাত
বরণ করি ঈশ্বরের সাজা
মহারাষ্ট্রে তাই আমি শয়তানের রাজা।
দোযখ সুন্দরী
স্মরণ:
এ-তো মানুষের মন
কার্বনকুপির নীচে ঐ দেখা যায়
মজ্জার ভ্রমণ...
১.
ক্ষুরধার ক্ষুধা
ক্রোধান্ধ জানি
বারংবার আসে লিঙ্গ পরিচয়ে।
কামার্ত সাপের গন্ধে
পুষ্পমল্লিকা ফোটে হাড় হতে হাড়ে
দৃশ্যমান খোরাসান গ্রামে
শুভ্র রাজহংস ভাসে ফেটে-পড়া রক্তের নদে।
গায়ত্রী-কাম বীজ প্রেমে গঠিত...
অস্তিত্বের অধিক
এই দেহ সত্য জানি
কামের দেবতা তাই ঈশ্বর অথবা মদন কুমার।
২.
ঘাসের মস্তকে থুত্থুরে এই গৃহস্থ সংসার...
ক্লান্ত শূকরী অপরাহ্নে শুয়েছিল মার্বেল বনে
শূন্যক্লান্তিরেখা থৈ থৈ জানি
তীক্ষ ছায়ায় ভেসে ওঠে শার্দুল
রৌদ্রোজ্জ্বল আমার শাবক।
আমি তো শূকর পুরাতন
আমার প্রেমিকারা, প্রাণরসায়নী তারা
শূলদন্ড বরণ করে পাপ ও পূর্ণিমা রাতে।
রক্তগর্ভ
প্রাণবান সন্তানের ভবে
আমার জীবযাত্রা হয় কৃষ্ণচূড়া উৎসবে।
৩.
যৌনভোরে হল হল করে ক্ষুধা ও পত্রবাগিচা
লউ-ফাটা ফেউসের জ্বালা
ক্ষেতের গুঁড়িতে জ্বলে ধিকি ধিকি, ধিকি ধিকি
মনে হয়
মৎস্য প্রেমিকার সাথে পাতাল ভ্রমণে রেখে আসি
উদভ্রান্ত আলোর ঝিলিক
ঘুরে আসি ঘূর্ণিজল নিযুত রজনীতে।
ক্রোশবিদ্ধ
চিরদিন মানব কুমার আমি
চৌচির মাঠে নিরন্তর কুড়িয়েছি কাঁকড়ার ছায়া
বংশবতী
কেয়ামত কালে বাজিয়েছো যজ্ঞের বীণ
চিতার আগুনে পুড়ে নিতম্ব-জমিন।
৪.
তোমাদের গ্রামে রেলপথে পড়েছিল কুয়াশার দানা...
শ্মশান নিভে গেলে থেমে থাকা ধূয়া জানি পোকার খাবার
বাঁশবনে হল হল বাতাস শোনা যায়... নাভী আর নাওয়ের ঘুঙুর
এ দিবস শান্তিবারোমাসি
অচিন নক্ষত্র ওঠে শ্রীধর বানিয়ার দেশে।
দূরবর্তী ঐ আলোর দামামা...
ছিলাম তো পাথর নিঃপ্রাণ
কে তুমি ছড়ালে দেহভরা শ্যাওলার ঘ্রাণ!
জল ও ছুরিকা
১.
কোমল কঙ্কাল, শূন্যতা হায়!
অসীম অন্তরে ছুরিকা ও জলবায়ু বিঁধে আছে।
প্রাণনাথ পতঙ্গরাজি
তারা পুষ্পপলাতক, ফিরে যায় কাদায়
কারা তরে ছায়াবাসী
নীলবর্ণ দাঁত, নখর সংসারে!
ভাঁজ হতে ভাঁজে
দেহ তার উলঙ্গ মাছের কাঁটা
অমৃতবাসী
তারা তো মানুষ নয়- সমুদ্রসন্ন্যাসী।
২.
জন্মভিখারি
সেই সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়েছি চক্ষুহীন
দুই হাতে পাপ ও পূণ্য তুলে দিয়ো
ফুটা ফুটা ঘাম, জিওল জীবন।
যেন বা বরণ করি প্রার্থনা
প্রতিঅঙ্গে তীব্র খঞ্জর ও প্রভূর বিস্তারে
তনোমনে এবাদত জেগে আছে
এইবার তবে তৃষ্ণা নিবারণ কর ঘাতক ফণা।
রেত
মাতৃমূলে
নৃ-তত্ত্বের ইলিশ বহে যমুনায়
এ বক্ষে বিঁধে আছে নখ
শব্দ ও বর্ণবিভায় লোভাতুর বক্রধনুক।
পাথরের পেটে বিঁধে-থাকা পিতার চক্ষু
আয় উড়ে চিত্রানদী।
কম্পমান তারা
জ্যোতির্ময় রাগিণীরা কুকিল রজনীতে...
ভয়াল বন্দরে একদিন ভিড়ে যাব
শবযাত্রী নিয়ে সন্তান মাঝি।
... অতৃপ্য আত্মার সাধ
তোমার আকাশে ভাসে যেন এক ঘু ঘু-ডাকা চাঁদ।
জলবদন
রঙের পৃথিবী দেখি
ধূসর হয়েছে নারাঙ্গিবনে
আমার পাতিহাড় ভেঙ্গে রামগিরি পর্বতে আজ
মেঘ ভিড়িয়াছে।
আর কেউ সনে নেই- না বৃক্ষ না বনস্পদ
এমন বিরহ বেলা
এ জন্ম বিঁধে যায় কাঁটায় কাঁটায়।
ছিলাম আমিওতো মানব সুরতে
জরায়ন শীতে নদী কেঁপে ওঠে...
শূন্যগর্ভ, আজ বড় নতশির
দাবানলে বিছিয়েছি জলের শরীর।
রে...
১.
তীরবিদ্ধ বালিহাঁস হায়!
মরু-খন্ডে চেয়েছিলে জলের শুশ্রুষা।
স্থলের সৌরভ
আর কি আসি রে ফিরে
নদীয়াবাসীরে...
২.
মৃত্যুর পরে
আমায় ভাসিয়ো জলে
স্থলের সৌরভ...
পাথর হে পন্ডিত
কৌরব কাঁটার দহন
ভালবাসি ঘৃণাবীজ, রক্তের দানা।
উদ্ভট আলোয় কেন তবে ফুটে আছ মূর্খ গোলাপ!
আমি তো তন্দ্রাঘোর
মৃত প্রেয়সীর বাহুবন্ধে দীর্ঘ শুয়ে আছি।
সৌরালোকে
আমার পালক দিগি¦দিগ পোড়ে
চৈতন্য আলোয় রাজহাঁস, চিতাবাঘ ওড়ে।
ধ্যানে, জ্ঞানে
আমার বেদনারাশি পন্ডিত পাথর জানে
আঙ্খিমূলে
আলোর বিচ্ছুরণ হায়!
উড়ে যায় কৃষ্ণকাক, কালের শরীর।
নদীতীরে
১.
নদীতীরে
দু’চোখ অন্ধ হল তবু
বৃদ্ধ হল না তোমাকে ঘিরে।
কুসুম শিকারী নই
সেই বনমালি আমি
সতত পাথর কুড়িয়েছি।
২.
ঐ নিম্নভূমে নেমে এসেছিল চাঁদ ও পিঁপড়ে
মেঘের উর্ধতন ভেসে ওঠে রক্তের লালা।
ছিলাম তো নিদ্রাতুর
এ জন্ম গ্রহণ করি বিমলা নদীর ডাকে।
৩.
কোথায় খুইয়ে এসেছ দন্তের বিষ
হায় সাপ! কুচবর্ণ সাপ
মাথার ওপরে তোমার ফুটে আছে শুভ্র গোলাপ।
৪.
জঠরে আগুন মাগো
কক্ষপথে উড়ে যায় কালো কালো দিন
জন্ম দিলে না তবু
জরায়নে বেঁধে রাখো যমজ হরিণ।
পরিয়াল পাখিদের জানা
মাগো, এ আমার চিতা নয়
সংক্রামক আলোর ঠিকানা।
৫.
পাঁপড়ি খুলে কোথাও তো খুঁজিয়াছি পরম উত্তাপ...
অমৃত দীঘির জলে কেঁপে ওঠো শহর ও পদ্মফুল
সে তো জ্যোৎস্নাবতী
মাথার ওপরে অচিন নক্ষত্র এক স্থির হয়ে আছে...
৬.
জলের ঐপারে ছিল আমাদের ঘর
কোন সে ধুলায় হারিয়েছে আজ
জুলেখা নগর।
মনে পড়ে যায়- সেই সুর, ধানসি ধানসি গীতি
মনে পড়ে কি পড়ে না মনে নেই
উড়ে যাওয়া পাখির স্মৃতি!
বিম্বের দিকে
উগলে পড়ে সন্ধ্যার বীজ
শ্রাবণ ধরণীতে
উঠোনের জল সমুদ্রে ফিরে যায়।
দর্শনশাস্ত্ররূপিনী এক
অঙ্গভরে ফুটি দেয়
অনঙ্গ আগুন
এ চরণ স্থলে-ভেজা
সেই ভূমে ক্লান্তি নিবারণ করে বৃক্ষের ছায়া
চাঁদ ওঠে
পরগনা সুলতানপুরে।
তারা মাতৃ ও পিতৃভাষী
উঁচা-বৃন্তে পঙ্খী-ধনরাজ মূর্চ্ছনা ছড়ায়
সীমান্তে
অসীম আসমান খামচে ধরে সাদা বক
রজনী সর্পিল হয়।
বিম্বমুখী
এ বড়ো আয়না-রজনী
পিতার উদ্দেশে যাত্রারম্ভ করে
সন্তানের চিতা...
পিতৃলোকে
তপস্যায়
তপোবনে
আমায় অন্ধ কর হে প্রভু
ইন্দ্রপলাতক হে ঈশ্বর, ভ্রাতা ও পিতা।
কেন তবে ফিনকি দিয়েছ
চাকুর সৌরভ
দেহ-মঞ্জরী আমার!
মুক্ত করো শরীর
পাড়-ভাঙ্গা জোয়ার ও ভাটা
অসহ্য আলোর কাঁটা।
জিহ্বাবলী, হে জলবায়ু
নরকের উজান বৃষ্টি শুনা যায়
বেগবান কীটের কম্পন...
মর্ত্যলোকে
কলিজার ডালে বিঁধেছিল প্রেম, পাখির নখর।
সেই সব বেদুঈন দিনে
জবাই করেছি এক লাল টুকটুকে আরবের চাঁদ
এমন চাকুর মতো চিকচিক দিনে
ধূমপান করি জলবায়ু, রঙের প্রকার।
পবনপক্ষী
১.
শূন্যাবর্তে
একা দাঁড়িয়েছি ভষ্মবৎ চাঁদের ছায়া
যুদ্ধ, বিগ্রহহীন নফসের কুটুম অনন্ত
দ্বি-খন্ডিত করিয়াছি যমুনার জল।
স্নায়ূর কূটাভাস আমার
ঝরে-পড়া পত্রে জানি মনুষ্য নিবাস।
২.
ত্রৈলোক্যে
পবনপক্ষী হে
চৌচির পঞ্চনদী আজ দিওয়ানা, দিওয়ানা
নবুওতী নিয়ে ভালবাসি আমি আগুনের ডানা।
পায়ে পায়ে উর্ধ্বালোক নাচে
আমি তো নতশির! ভালবেসে
জমিনে জমিনে পড়ি মেঘের ছায়া।
অংকরেখা
কোমল হস্তে
জবাই কর জলহস্তি, সমুদ্র ক্ষুধা নৃত্যরত
শুভ্র আসমানে হলুদ হলুদ পরী দেখা যায়
দাউ দাউ
অন্বেষী জীবের জঠর
অন্য পৃথিবীতে জড়বৃষ্টি শোনা যায়।
অমৃতজন
মর্ত্যলোকে পান করে উজ্জ্বল আলোক অথবা
নীলবর্ণ জলের নকশা।
তারা পিতমহ
কুড়িয়েছ আতাফল, অংকরেখা।
চূড়ান্ত সরোবরে
মৈথুনমগ্ন টিকটিকি
গির্জার চূড়া হতে লাফিয়েছে
এ বক্ষে বিঁধে আছে মাছি ও নীলবর্ণ মাছের ফলা।
ভৈরব বাসিন্দারা
নদী পাড়ি দিয়েছিলে শীত ও গ্রীষ্মে
একদাকার ক্রৌঞ্চ বিষাদে
কেউ কেউ ফলিয়েছ হরিণের পাতা।
অমাবশ্যা তখন
ঠোঁটের ঠোকর থেমে গেলে
বিগত ব্রহ্মান্ডে রক্তাক্ত বাজপাখি ওড়ে
তারা তো মনুষ্য-প্রাণ
বৌদ্ধের গ্রামে প্রতিদ্বন্ধী ছিল টিকটিকির
ঈশ্বর অথবা আত্মাহুতির।
জন্মান্ধ গোলাপগুচ্ছ
উদ্ভিদ-কেশর ছিঁড়িয়াছি
ঐ ওড়ে রক্তের হলুদ আর
যন্ত্রণার বীজ।
ভাসে
পাপ ও পূণ্য সরোবরে
ডুবে যাওয়া সূর্যের স্মৃতি
জন্মদুখী বন্ধুরা আমার পঙ্গু ও বীর।
দূরে
আরো দূর লিখে যাই শস্যরেখা, আমার মরণ।
মেঘমতি
বাহিরে বাতাস টলমল
মেঘমন্দ্র ডানায় কার নামে ভেসে ওঠো
ডাহুকের গ্রাম।
দাউ দাউ কাঁঠালের বিচি পোড়ে যায়।
হলদে পাতায়
পিতা ও পুত্রের মৃত চুম্বন ওড়ে।
বাহিরে মানুষ
ষড়ঋতু।
বিগত ভ্রমর : জুঁইফুল
ঘন এবং অতিশুভ্র বনভূমে আমিও কি রোপন করি
অক্ষরের কবর? আমিও কি তবে
কবিতা লিখি!
আমি তো তৃণভোজী
দরিয়ার ডাকে জল হতে জুঁইফুল কুড়িয়েছি
স্মৃতি তাই কোনো এক নদীতীরে বড়শিজোড়া গ্রাম।
হলুদ জন্মভূমে আমিওতো যাই
নীলভূমে ভেসে যায় জলের ঘোড়া।
কবিতা ও অন্ধপাখি
শব্দের অধিক দ্রুততম
পৌঁছে যাচ্ছি স্তব্দ তারায়
পৌঁছে যাচ্ছি স্তব্দ তারায়
কোন সে কবি
ভাঙ্গা খঞ্জর হতে মূর্চ্ছনা কুড়িয়েছ!
ধ্যানের ধরণীতে
কোন সে দরিয়া ভয়ার্ত...
শুধু পাড়ি দিতে জানে কবিতা ও অন্ধপাখি
কবিতা ও অন্ধপাখি।
সারারাত্রিময়
পানপাত্র গলিয়ে দেখি কাচের নরম
ওহে পরী, পাথরের পরী
আমি তো তুচ্ছ এক তৃষ্ণার্ত মেঘদূত
ভালবেসে বদলেছি শুধু যমুনার স্রোত।
এখন চিত্রল শাবক মিলিয়ে যাচ্ছে পুরাতন বনভূমে
গাছের গুঁড়িতে ঝরে পড়ছে মৃত বাঘ, শুকনো পাতা।
এ দেহ তুচ্ছ তাই
চামড়া হতে তুলে আনি চক্ষুদ্বয়
এখন দৃশ্যমান- বিবিধ উচ্চতায় পাখির উড়াল
রঙের ঘনত্বে-ভাসা আকাশের উজ্জ্বল বলিরেখা
আকাশের উজ্জ্বল বলিরেখা...
হাত তো বাড়াতে জানি না বাহুর বন্ধন রেখে
হাত বাড়ালে মানুষ নক্ষত্র ছুঁয়ে যায়।
জলে ভাসছে মূর্তিমান ছায়া...
মৃত্যু ব্যতিরেকে আমার আর কোনো নাম নেই
রক্ত মাংসের অক্ষরে একদিন আমি যেন কবিতা লিখি
আমি যেন কবিতা লিখি মৃত্যুর পরে।
সেই প্রাচীন মহিষের মাথায়
দুলে উঠছে পরিচিত পৃথিবী আমাদের
বদলে গেছে বাতাস
হাতের তালুতে চিরে-রাখা বিষুব রেখা।
ঐ যে পাহাড়, পুঞ্জরাশিতে ভাসে
কলি ও কবর- আনারকলি আনারকলি...
আজ প্রতিঅঙ্গে আমার
প্রাণহীন পড়ে রয় পাপড়ির বাহার
শব্দের অধিক দ্রুতমত
আমি যাই স্তব্দ তারায়
আমি যাই স্তব্দ তারায়...
কবিতা ও জলের হরফ
উদ্যত ছুরির নীচে শির ও সাঁসি হেসে ওঠে...
উদগ্র উন্মাদ হেঁটে যাই
কোনো এক নিজাম-নগরে একা।
বহুদিন বাকরুদ্ধ আছি
জল হতে জিহ্বা কাটিয়াছি নদীমূলে
এমন নৈঃশব্দকালে
ফের কেন কথা বল মিজিনি বৃক্ষ
লিলিয়ান আমার লিলিয়ান।
পিতা দাঁড়িয়েছি বিরাণ ভূমিতে
অমৃত পুত্রী হে
আমায় ক্ষমা কর পুত্র
আমৃত্যু নিরক্ষর আমি
বায়ুবক্ষে কি করে লিখি
কবিতা ও জলের হরফ!
রন্ধ্রপথে
পুরাতন গোরস্থানে
আমার মৃতদেহ বয়ে নিচ্ছে একপাল শীতার্ত ঘোড়া
যানাজায় দাঁড়িয়েছে ভষ্মবৎ প্রজাপতিরা
একদিন যারা শেয়াল অথবা কচ্ছপ ছিল।
কামার্ত কীট কিলবিল করছে রন্ধ্রপথে
স্মৃতিহীন মাংসের রুয়া আজ ভিন্নরূপে রিপুর কাঙাল।
একদা দিকচক্রব্যাপী ছিল পাতার কেশর
ঐ বনভূমে কাঠের কম্পন শুনা যায়
কেঁপে ওঠে সবুজ ক্রিমি মৃত, অমৃত...
মানুষ
কবি মাশুক ইবনে আনিস প্রিয়ভাজনেষু
সূর্য প্রদক্ষিণ করে কচ্ছপের পাঁজর
অথচ দীর্ঘ দিবস আমার কোনো ছায়া নেই
উদভ্রান্ত ছায়া পান করে গেছে একপাল মাছি।
গুলবাগে
রতিক্লান্ত পুস্পের পাপড় ঝরে পড়ে
বীজরূপে আরো একবার তারা বৃক্ষ, বনস্পদ হয়ে ওঠে
ছায়াপুত্র এক
আমি কি মানুষ ছিলাম কোনোদিন
জলের জঙ্গলে কেবলই হারাই বিরল প্রজাতি।
অজস্র উড়াল
আমার স্নায়ূবল্লরী ভেদ করে খসে পড়ছে বনের পালক
এ ভোর স্বপ্নে ভেজা
শক্ত বাতাসে স্থির হয়ে আছে সাদা সাদা পায়রার রেখা
শক্ত বাতাসে স্থির হয়ে আছে মানুষের উড়াল।
জলের ঐপারে শঙ্খের আওয়াজ শুনা যায়
জন্মক্লান্ত আলো-ইরাবান
ঐ শূন্যস্থানে আমার জন্মদন্ড ঝুলে আছে।
মৃত্যুর পরে, মানুষ তো ভবঘুরে...
এ পোকা রত্নপোকা
কোনোদিন তার গৃহবাসী নয়!
স্ফটিক
আধো আলো, অন্ধকারে
আউশের ক্ষেতে ওড়ে সবুজ শাড়ি
ইন্দ্রের অতীত প্রেমিকা তারা
তাহাদের পিয়াইন বৃক্ষের মাথায়
সাঁওতালী চাঁদ ঝুলে থাকে
গজারের বনে হৃদকম্প শুনা যায় ঘু ঘু পাখিটির।
ভেঙ্গে-যাওয়া-কাচে গোপন ধার-বিঁধে আছে
পূর্ণিমা কিংবা রূপসীর স্ফটিক অশ্র“ নামে জন্মান্ধ পৃথিবীতে।
তাম্রবীজ
সবুজাভ অগ্নিগিরি হতে
মানুষের লিকলিকে জীভ ধেয়ে আসে উপত্যকার দিকে।
কদম্ব বৃক্ষ হে
লোহাটে মাংসের স্বরাজ!
২.
ভূ-বিদ্যাবনে
ভুলে যাই বিতাড়ন স্মৃতি...
প্রেম আর কামের বশে
সাদা দুধ জমে আছে
বুকের আরশে।
রাতের জিরাফ
বায়ুভষ্ম রাতের জিরাফ- হে অন্ধকার, অনঙ্গ আমার
জননী অহ
গর্ভধারিণী তুমি
সাপ ও সন্তের।
রক্তের তোড়ে
ধমনী ও পুস্পরাজি হলুদ হল না দমে দমে
এ দিবস আংরা হয়ো চোখের নিয়মে।
কোন সে মহাগ্রন্থে লেখা
কার উষাসে
মহাকাশে নির্মান হচ্ছে রেখা!
পাথর
গহন গর্তে ফুটে আছে পারদের রেণু আর
আয়তক্ষেত্রে গগনের ঘুড়ি...
আমাদের হস্তরেখা বদলে যাচ্ছে দ্রুত।
এখন কি তবে মহাযুদ্ধকাল?
কবি ও নর্তকী স্নানরত পরস্পর, রক্তাক্ত নদে
তারা ভীড় করে দুগ্ধপচা পুঁজ ও মিস্টান্ন ভান্ডারে।
কম্পমান, অপসৃয়মান ছায়া ও আত্মা শ্মশানের ঘাটে...
মুখাগ্নি হল না পিতার
পুত্রসব বাণিজ্যে গেছে।
পৃষ্ঠাবলী বয়ুর বিভ্রমে
সিঁড়ি হতে পিছলে পড়ে অক্ষরমালা
হে বাতাস
তীরবিদ্ধ জলবায়ু!
উৎসের দিকে...
প্রতিদিন আমার দু’চোখে ময়লা হচ্ছে জল
জন্মান্ধ চিরকাল
আমি কি অন্ধ হচ্ছি পুনরায়?
লেপ্টে-যাওয়া গিরি ও গোহায় তীব্র রশ্মি ক্ষয় হচ্ছে ক্রমে
অন্ধ প্রকোপে গোপন প্রেমিকারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
আমার পৃথিবী কি ফিরে যাচ্ছে আজ উৎসের দিকে!
থেতলে-যাওয়া আর্তনাদ শুনা যায়, পঞ্চ শিরায়
বরশিতে বিঁধে-থাকা চোখ
কতই না লাফিয়েছে জ্যোতির জলে
তুমি কি বলবে না এবার-
কে যাও বায়ুপন্থে প্রপঞ্চ পথিক
গোপন ভূমিতে কে তুমি রুয়ে যাও অচিন পাথর!
পাপ
সমুদ্রে-পোড়া-মাছ ভেসে উঠছে শিশিরের নদে।
নিঃস্পন্দ
আমি আর কয়েকটা মাছি বসে আছি মরফিন অন্ধকারে।
আমাদের সাকুল্য স্মৃতি শুধু ক্ষয় হয়
কাটা জামিরের রুয়া হতে উঠে আসে দ্রাবিড় সময়।
এ আসমান বজ্রমন্ডিত তবু
সাপের কোমরে নাচে তৃণভূম
তারা কম্পমান হায়!
হরিণ জননীরা জল হতে উঠে আসে ডাঙায়।
বিষের আক্রোশে সাপগুলো তীব্র দংশন ভেতরে পোষে
সাপগুলো তীব্র দংশন ভেতরে পোষে...
কোন সে সুদূরে দেহাতীত অমৃত পাপ!
তবু
ভষ্মবৎ জমিনে ভাসে পৌঢ় প্রার্থনাগার
পার হব ত্রিবেণীর স্রোত
প্রাপ্ত যদি হই আত্মহত্যার অধিকার।
উজ্জ্বল খুন
আমাদের বৃষ্টি বড় লাল...
মেঘরন্ধ্রে মিলিয়েছে বাজপাখি
উজ্জ্বল খুন।
জড় ও জীবগুচ্ছ ফালি ফালি আলোর ঘর্ষণে
ভ্র“ণের বিদ্রোহে তৈরী হচ্ছে হাড়, কচ্ছপ-শরীর।
স্বপ্নের অতীত
সংগোপনে কঙ্কাল রাখি
এ নদী বিধ্বংসী ফণা গুটিয়েছে ধূ ধূ মরুচরে
মানুষ তো তুচ্ছ রয়ে যায়
তুচ্ছাতিতুচ্ছ এই প্রেম, রঙের বিভ্রম।
তৃষ্ণাজীবী
এ আমার দশলক্ষ বাঘের থাবা...
মৃত্যুর পরে
ঐ বনভূমে বুনে দিয়ো দশটি নখর।
খরতাপে, জৈষ্ঠ মাসে
প্রজাপতি ওড়ে পৌরাণিক রোদের জঠরে
বংশ-বৃক্ষ, হে কাঠুরিয়া
জলের ওপরে ঘর্মাক্ত ছায়া পড়ে আছে
কবি, হে তৃষ্ণাজীবী
কোন শূন্যে ভিড়িবে বলো স্নায়ূর সাম্পান!
চিতা
আমার মৃত্যুর পরে বাতাসে রৌদ্র পোহায় অর্থবহ ফড়িং
রক্তাভ তাহাদের মাংস-ডানা লওহে মাহফুজে
দীর্ঘ তো জাগ্রত ছিলাম রাত্রিবাহী জলের কিনারে
আমার মেরুদন্ড হতে কতো না অচিন জন্তু
প্রবাল ভূমিতে মিশে গেছে
প্রার্থনা ছিল ঋতুবতী বৃক্ষের কাছে
ঐ ডালে আবার যেন বসি মেহমান পাখি।
এ জন্মে বারেবারে
তাহারেই যেন পাই
এ-তো এক অশ্লিল আত্মার দোহাই...
মন্দ্ররাতে
দেবকন্যা নিয়ে আসে ক্রোধের আগুন
স্বর্গ ও নরক ছানবিন করে
ভষ্মবৎ পড়ে থাকে শ্যামল জমিন
নখরে, নভোমন্ডলে।
ঐ উপত্যকা, ঘন-হ্রদ ফিকে হয়ে আছে
শুকিয়েছে ছেঁড়া চাঁদ প্রাচীন পশুদের খুলিতে খুলিতে
তবু
এ হন্ঠন ভুলি না কস্মিন
আত্মহত্যাকালে হয়ে ওঠি বীর
আমি তার স্তন হতে প্রত্যাখ্যান করি কঠিন শিশির।
অমৃতপ্রাণ
প্রেয়সীর মতো অন্ধকার আসে রঙের সরোবরে
আমার মৃত্যু যেন হয় স্বরবর্ণ চিতার ওপরে।
কবি
উৎসর্গ-
সফি সরকার, কাজল কানন, নিতু পর্ণা,
ত্রিধর্মী বন্ধু / তিনখন্ড ছায়া
চিরে দিচ্ছি পাখি।
ঠোঁট ও ঠুকরহীন
পাখিদের দেহ হতে মধ্যাকর্ষণ চিরে দিচ্ছি।
গগন বিদীর্ণ করে তারা শুধু উঁচুতে যাবে
চিতাগ্নিতে তাহাদের ডানা আর পুড়বে না
আর গৃহে ফিরবে না তারা।
ত্রিধর্মী বন্ধু হেঁটে যায় পাখিদের তিনখন্ড ছায়ায়
ঘনবন্ধ তাদের ভাল করে বুঝা যায় না
অর্ধেক মানুষ না অর্ধেক কবি!
মঙ্গলম
জলমঙ্গলম
সখি
জন্মভর জেগে রই তোমার সিথানে
চক্ষুদ্বয়ে ঘুমিয়েছো বায়ু মঙ্গলম আমার
প্রাণ মঙ্গলম আমার
প্রাণবন্ধু মঙ্গলম।
জ্বর আর যৌবন ভাসিয়েছি লেবুর বাগানে
বংশ-নদীতীরে
সখি হে, কোথায় দাঁড়াব বল!
দাঁড়িয়েছি তোমার চরণে
দেহক্লান্ত গাছের ছায়া।
মরুস্থলী
অসীম রজনীতে
টুকরা টুকরা মানুষের শব্দ শুনা যায়।
শরবিদ্ধ মরুস্থলী হায়
আমি তো সারারাত জলের চামড়া কাটিয়াছি।
ধনুস্পতি
বিগত চন্দ্রের নামে ঘুমোতে পারি না আর
চুম্বক পাহাড় কেটে আহরন করি খঞ্জরের ধার
সারারাত বনি-আদমের রক্ত কাটিয়াছি।
নিঃশ্বাসমালা
১.
ছায়াপথ পরিভ্রমণে
মহাকাশ কোথাও তো নেই
জ্যোতির্ময় জলে
মৎস্যপ্রাণ লাফিয়েছে চিতার শরীর।
২.
বিশুদ্ধ আঙুর
পেড়ে আনি বিষদাঁতে
খাতিমুন কবি- কালেশ্বরী হে
মরণ এলো না আমার
তোমাকে ঘিরে।
৩.
বারবার বিদ্ধ হতে চাই কাঁটার লাবণ্যে
ভোরগুচ্ছ হায়!
উন্মোচিত হও তাপিত প্রাণে।
৪.
পবনসন্ন্যাসী আমি
নিরন্তর তপোবনে
যে রন্ধ্রে উড়ে যায় বালির ভূবন।
৫.
তীর, তরবারী ছেড়ে
ছুঁতে চাই শীতের চূড়া।
তারা পিতা, প্র-পিতামহ
অসীম উঁচুতে চলে যায় যারা
তারা মৃত্যুবনমালী
তারা ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র আমার।
হৃৎপিন্ডের গরম
নদীর নরোমে ঘর্মাক্ত জল আমি
ভালবাসো পাহাড় হে ঘাসফুল
হৃৎপিন্ডের গরম।
প্রার্থনা-রাতে গীর্জার চূড়া ভিজে আমার শীতে
আমি তো অগ্নিমানুষ
সূর্যের শরীরে জ্বলি, কথা বলি...
পালক বিভ্রম
এতো এতো উদয়...
সূর্যাস্তের পরে এ পরাণ উথলিয়া ওঠে
ঠান্ডা বাতাসে তার ছায়া দেখা যায়।
চন্দ্রসহচরে
নিদ্রা হল না আর
পোড়া প্রদীপের নীচে বিবস্ত্র অন্ধকার থাকি
শীত ও শ্মশান।
সখি হে
কাল আমার অমৃত দিবস ছিল
কাল সারারাত আকাশে অনেক
প্রাণহীন পায়রা উড়েছিল!
গৃহী
এতো জল
সমুদ্র শাসন করে রক্ত-চক্ষু-চাঁদ।
সারারাত
পিথবর্ণ ছায়া মাড়িয়েছি
ফিরে যেতে চাই কোনো এক পক্ষী-ভূমে
ভানুগাছ গ্রাম হায়!
গৃহপথে বত্রিশ দাঁতের কাঁটা পড়ে আছে।
বংশ-মাঝি
চৌচির জলে দীর্ঘ হাঁটিয়াছি
প্রতিদমে পান করি অমোঘ অনল।
আজ
মেঘ ডাকিয়াছে।
আমায় ডাকিয়ো পাখি
অর্ধেক জল আর অর্ধেক স্থলে।
কুটিল সংসার জাগে, অন্ধকারে
প্রাচীন সেই পাপ ও পূণ্যরাশি।
পাখি
আমি তো বংশ-মাঝি
নর্দমায় ফুটিয়েছি চূড়ান্ত গোলাপ।
দৃশ্য
জলের জানালা বেয়ে মাছ ও মানুষ লাফিয়েছে
ঐ অ্যাংলো বনভূমে
পাহাড় বেয়ে আত্মহনন করে কিছু কিছু গুটিপোকা
আমি তো পঙ্খিরাজ পুরাতন
বায়ুপন্থে শুধু পালক হারিয়েছি।
কোন গ্রামে ভেসে ওঠো রক্তমাখা রোমান রজনী হায়!
চক্ষুদ্বয়ে ঘনঘাস, সবুজ ফেটে যায়!
বায়ুভ্রমণ
১.
ভাঙ্গা বাতাসে ওড়ে চৈত্রের পাতা
সৌরালোকে
তোমায় তো ডাকি প্রেম
বীজে, অন্ধকারে।
আমার তো স্মৃতি নেই বায়ুভ্রমণের
জন্মগ্রহণ করো হে প্রেম, শরমিন্দা গোলাপ।
২.
জীবাশ্ম বেলা
নিষ্করুণ দেহপূজারী আমি
তোমায় দিয়ে যাই অতিন্দ্রীয় বেদনারাশি, চুম্বন।
তুমিও হরণ করো ছায়ার মর্মর
আজ জল চিবিয়েছি।
গুমান
আলেয়া-নদীর ডাকে
যে তুমি কাফিরুন আমার, এ নামে
গেরুয়া গগন হতে চাঁদ গলেছিল।
নামের মহিমা নিয়ে
দাঁড়িয়েছে কাদা-মাটি হিমালয় গ্রামে।
ধুলায় ধুলায় সেই থেকে দক্ষিণে যাত্রা করে উত্তর-বণিক।
কাফের-কন্যা তুমি, তোমাদের দেশে
একদা ছিলাম পাখিদের রাজা
পালক ঝরিয়ে হায়
নামের গুমানে আমিও কি তবে মানুষ হয়েছি !
ছায়াংশ
১.
আমি তো প্রেমিক
প্রীত নই মনুষ্য জন্মে...
তাই কভু ভালবাসতে শিখিনি।
জানি
বাজারে বাজারে পিতলের পানদান উঠেছিল
পাখি সব উড়াল দিল মৃত্যুর পরে।
২.
গণ-গোরস্থানে একা হেঁটে যাবো
গলিত ফুলের শোভা
পিতা আমি, অদৃশ্য ঈশ্বর হতে।
মাছ-রাঙা বাড়ি
নৈঃশব্দে ভেসে ভেসে ওঠে
জানিয়ো পর্বত, দক্ষিণাত্যে
মানুষে মানুষে দেখি
ঘাসের প্রকাশ।
অন্যমানুষ
সূর্য, প্রপিতামহের নামে
ভাসমান গৃহস্থ পশুর সংসার
গলে-পড়া ঘাম নিরন্তর হরিৎ-অন্বেষী।
সকল পুষ্পে গন্ধ ধরে না
এমন পিঙ্গল ভূমে ফুলের পিঞ্জর কাঁপে
নখদন্ত লাবণ্য সহচরে।
মাতৃক্রোড়ে আত্মার বিবাদ দীর্ঘ দীর্ঘ...
নিমক্ষিক উপকূলে
গাংচিল দাঁড়িয়েছে- তারা যুদ্ধাহত
দিকচিহ্নহীন অন্য যারা
তারা তো ফ্যাকাশে মানুষ!
গৌহাটি গ্রামে
নিযুথ রজনী তখন। পাতার পূর্ণিমায় একজোড়া ঠোঁট গেঁথে আছে।... আর আমার বাজুবন্ধে লাফিয়েছে দূর বনভূমি আর পর্বতের চূড়া হতে ভেসে-ওঠা হ্রেসাধ্বনি অথবা ক্রন্দন।
মর্ত্য মানবীরা, হয়তো জেগে উঠেছে তারা আমাদের গৌহাটী গ্রামে। তারা ভুবন বিলাসিনী; মধুভৃঙ্গারে তছনছ করে রক্তাক্ত ফুলের বর্ণনা। হায়! লাল লাল রক্তের জামা আমার বড় প্রিয়- বিন্দু ঘাম, লবন ও লালসা। কেন সরালে না সোনা ও রূপার কাঠি সিথান হতে পৈথানে। সুলতানপুরে চাঁদ উঠিয়াছে... ঐ দানবের দেশে তুমি তো ভূমি-কণ্যা প্রাচীন, মৃত পড়ে থাক জন্মের সমান।
মানুষ ও মহিষ
জঠর জিজ্ঞাসা অন্তর্ভেদী
হাজার রজনী
আজও অপাঠ্য, আদিম চক্ষুদ্বয়ে
শব্দাহত শকুন নেমে এল
অঙ্গে অঙ্গে রুমার সন্ত্রাস
... সেই স্বপ্নদোষে
ভাগ্যাহত মানুষ
মলমূত্র পোষে।
জন্মসুরে
জন্মসুরে
বাহিরে বাতাস সই সই করে
সেই সব রজনীর তীরে উড়াল দিয়েছে আজ
কবিতা ও অক্ষরের নদী
তারা পর্বতে যায়, তারা পর্বতে যায়...
বৃক্ষ হে
পাতার আগুনে পঙ্খিরাজ উড়িয়াছে
ডুমুর মানবী ঐ দেখা যায় বৃশ্চিক রেখায়
যেতে চাই সেই সব নিহত জন্মে
আমার জন্ম হয়েছিল পাখি আর পাহাড়ের পেটে।
বৃক্ষবতী
মানুষ অথবা পক্ষীরাজ তাই
তছনছ করি জলবায়ু।
সিনাই পাহাড়ে ফর্সা বাতাস উড়িয়েছি
নাভী ও ঘাম
নর ও নারী।
বলে দাও তুমি
মুসার নয়নে কী জ্বলেছিল তবে
ঈশ্বর না আগুন!
নমরুদের নগর
তৃণনদে
হেসে ওঠো মেঘ-বিন্দু হরিৎ স্বভাবে
হে বালক- সুমন্দ্র তুমি
অন্ধের দেশে কে তুমি বারংবার আয়না নিয়ে আসো।
তৃণনদে
নমরুদের নগরে দেখি তোমার ছায়া
কাটা-খঞ্জরে তুমিওতো একদিন তুফান কাটিয়াছ!
অরণ্যের উদর হতে
নদীতে হেলান দিয়ে বসে আছি...
জলরন্ধ্রে ধনুক বেঁকে যাচ্ছে...
তরুণ কবিদের ধনুক ও মেরুদণ্ড বেঁকে যাচ্ছে জলে...
নদীতে হেলান দিয়ে বসে আছি...
বেহুলা চন্দনীর ঘাটে
আমার শৈশব কতই না মাড়িয়েছে ফাঁস-লাগা নিমের ছায়া
নিদ্রা ভেঙ্গে দেখি আর আমি একখণ্ড মানুষ নই
হয়ে গেছি স্বপ্ন-রাঙা সবুজ ফড়িং
বাতাসে সাঁতার কাটি
দাউ দাউ রক্ত কণিকা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে
শীতল ক্ষুরের দিকে।
এত মৃত্যু
এত এত চন্দ্রভোর চারিদিকে
পবনপুত্রীরা ঘন-শ্যাম চামড়ার শাল পরে আছে
আপনার ছায়া ঢেকে দিচ্ছি ধীরে
ঈশ্বরের আরশ ঢেকে দিচ্ছি ধীরে...
২.
মূর্তিমান মানুষ তৈরি করছি
মানুষ কোথাও তো নেই
মানুষ তৈরি করছি নদীতীরে।
রজনীর দীর্ঘ দর্শক আমি, পরস্পর হত্যাদৃশ্যে
ঘাড়ের নিচ হতে কত না উজ্জ্বল কবুতর উড়িয়েছি
বহু জন্ম কীট হয়ে আছি
গলে-পড়া শবের দেশে।
একপাল পূর্ণিমার ভেড়া বাতাস ভ্রমণে বেরিয়েছে
তুমি কি জন্মান্তর বরণ করছ অতলান্ত প্রেমে
নিশিথ বীজের ভেতর নিশিথ অন্ধকারে!
তুমি কেটে দাও গর্ভবতী মেঘের জঠর
স্মৃতিতে অনেক কান্না জমে আছে
এতো এতো কান্না জমে আছে।
আমার পোষে রাখ তুমি...
সেই অরণ্যতাড়িত সাপ
আমায় পোষে রাখ দুধের নহরে
দহনে ও ঘৃণায়।
ঐ উপত্যকা হতে জমে-থাকা বিষ ও দংশন নিয়ে এসেছি আমি
ফেরাবে কী করে
আর কোনো মানুষ নয়, সজ্ঞানে সৃষ্টি করি সাপ
সাপিনী, সাপিনী...
৩.
আমি পাড়ি দিচ্ছি তোমায়...
আমার রক্তের রুয়ায় নূপুর বাজে
নখের নূপুর বাজে, নূপুর...
সাঁকোর ওপর দিয়ে বন পিঁপড়াটি হেঁটে যাচ্ছে একা
ভূ-মণ্ডলের ঐ প্রাণীটিকে সাক্ষী রেখে বলি
ঐ হেমন্তে, ঐ হেমন্ত রজনীতে
কোমর হতে খুলে ফেলেছি ফেরাউনের হাড়
এ কদাকার জন্তু-জানোয়ার তোমারই তো ছিলাম
এখনও চলাচল করি
চলাচল করি জিহ্বার ভরে; জিহ্বার মাথায় চরণ গজিয়েছে...
কোথাও যাইনি পালিয়ে
কুয়াশার পেট খণ্ড খণ্ড করে
মশাল জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে জাহাজ এসেছে আমায় নিয়ে যেতে
যাইনি কোথাও।
কন্যা ধনবতী, মা আমার
চুলের বেণীতে পরে আছে লাল লাল ফাঁসির ফিতা
কোথাও যেতে পারি না তো আমি!
প্রার্থনাগার ভাসিয়েছি জলে
মাছেরা প্রার্থনা পড়ে
আমি পাড়ি দিচ্ছি তোমায়...
আমি পাড়ি দিচ্ছি তোমায়...
৪.
তাকে বরণ করি
চৌদ্দ পুরুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুম্বন করি ঠোঁট ও ফলের মাংসে
মাঠে মাঠে কোহিনূর কুড়াতে যাই
ফেটে-পড়া বীজের ভেতর
ভোরের বিউগল ভেসে ওঠে, শুধু ভেসে ওঠে...
অরণ্যপ্লাবী
আবার বেঁচে উঠতে চাই
ফেরাউন ও কচ্ছপের আয়ু একত্র করে
একদিনের জন্য বেঁচে উঠতে চাই মহামৃত্যুর ডাকে
কে ফেরাবে আমায়
হলুদ ধমনীতে ফুটে আছে ঝিঙেফুল, লালবর্ণ গরম শিশির
লালবর্ণ গরম শিশির...
অতঃপর মৃতদের মিছিলে যাব
মাঠে মাঠে আমিও চরাবো মনস্তত্ত্বের মহিষ
কে ফেরাবে আমায়
আমি তো চাদর পরে আছি
চামড়ার চাদর পরে আছি!
গাছের গির্জা
স্মৃতিহীন আলোকবর্ষে
আমি মিশে যাচ্ছি দেখো
স্মৃতিহীন আলোকবর্ষে
আমি মিশে যাচ্ছি দেখো...
ভরা পূর্ণিমার স্খলিত মাংসে একপাল কীট উড়ছে
একপাল কীট উড়ছে
আমি ভুলে যাচ্ছি তোমায়...
গাছের গির্জা হতে পাতাগুলি লাফিয়ে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁক
ঝাঁকে ঝাঁক, চিরতরে...
আর কোনো পুষ্পরেণু নয়
বাগানে নিরন্তর ওড়ে
তাম্রলীন কাচ ও কুয়াশার গুঁড়া...
পেরিয়ে যাচ্ছি বায়ুবিদ্যুৎ
রাত-জাগা ভোরের পাখি, রাত-জাগা অন্ধপাখি।
দুই হাত পরাভূত দীর্ঘ দীর্ঘ দিন
কলিজা ও খাগড়ার কলম ছুঁড়ে ফেলেছি
চিতার আগুনে
ছুরি দিয়ে কত আর লিখে যাব রক্তের বানান
অক্ষরের মহিমা জানি না তো
মৃত্যুর অধিক বানান জানি না তো!
-------------------------------------------------------------------------------
লেখকের অন্যান্য গ্রন্থ
কবিতা
ইস্পাতের গোলাপ
ঈসাপাখি বেদনা ফোটে মরিয়মবনে
মৌলিক ময়ূর
নীল কাব্যের বয়াত
বিপুলা বীজগণিত
বিদ্যুতের বাগান
হে রৌদ্র, হে উজ্জ্বল অট্টহাসি
উপন্যাস:
কাফের
জ্যোৎস্নার বেড়াল
রচনা
হিরামন পুরুষ, তুলসিপত্র, মানুষ ডায়রি লিখতে
জানে রাজহাঁস জানে না, চন্দ্রের চাবুক, মখরমপুরে...