বিবাহিত যীশু
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
যীশু খ্রিস্টকে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারক বলে উল্লেখ করা হলেও বর্তমানে আমরা যীশুর যে ধর্মকে দেখতে পাই তা কি আদৌ খ্রিস্ট ধর্ম এনিয়ে বহু বিতর্ক আছে ।
da vinci code পড়ার পর আমার ধারনা আরো তীব্র হয়ে যায় যে বর্তমান খ্রিস্ট ধর্ম চার্চের দ্বারা বিকৃত এক ধর্ম । এ ধর্মের সাথে মূল ধর্মের কোন মিল নেই ।
আজ তাই কলম তুলেছি এই মহামানবের জীবনের কিছু রহস্যময় দিককে আলোকপাত করব বলে যা নিজেদের স্বার্থে স্বীকৃতি দেন নি ভ্যাটিকান সিটি তথা মহান আধুনিক
খ্রিস্ট ধর্মের সংরক্ষকরা ।
ব্রিটিশ মিউজিয়মে উদ্ধার হল যিশু খ্রিস্টের জীবনী নিয়ে রচিত একটি পুঁথি৷ আরামায়িক ভাষা এবং ওই হরফেই লেখা এই পুঁথিকেই হারিয়ে যাওয়া দ্য লস্ট গসপেল বলে মনে করছেন পুরাতাত্ত্বিকরা৷ এই পুঁথিতেই লেখা রয়েছে এমন এক বিস্ফোরক তথ্য, যা এতদিন ক্যাথলিক চার্চ সযত্নে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল বলে দাবি করে এসেছেন একদল ঐতিহাসিক৷
বিয়ে হয়েছিল খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুর৷ হারিয়ে যাওয়া ওই গসপেলের বয়ান অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় দু'হাজার বছর আগে যিশু বিয়ে করেছিলেন তাঁরই প্রিয় শিষ্যা মেরি ম্যাগডালেনকে৷ কিন্ত্ত, চতুর্থ শতাব্দীতে সম্রাট কনস্টানটাইন ও চার্চের মিলিত প্রচেষ্টায় সেই বিয়ের যাবতীয় প্রমাণ নাকি লোপাট করে দেওয়া হয়৷
পরবর্তীকালে চার্চের উদ্যোগে যে বাইবেল লেখা হয়েছিল, সেই বাইবেলে মেরি ম্যাগডালেনকে দেহোপজীবিনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এক শ্রেণির ঐতিহাসিকের দাবি, চার্চের এই প্রয়াসের পিছনে রয়েছে গভীর চক্রান্ত৷ মেরির সঙ্গে যিশুর বিবাহ ও তাঁদের সন্তান জন্মানোর খবর চেপে দেওয়ার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মেরি ম্যাগডালেনের চরিত্রহনন করা হয়৷ যিশুর বিবাহ ও সন্তান জন্ম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য গোপন করতে পারলে চার্চের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে, তাই বিশেষ সাবধানতার সঙ্গেই গত দু'হাজার বছর ধরে চার্চ এই সত্য উদঘাটিত হতে দেয়নি বলে সন্দেহ অনেকের৷ এই দলে পড়তেন মধ্যযুগের একাধিক দিকপাল ব্যক্তিত্বও৷ মনে করা হয়, এঁদের মধ্যে ছিলেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি, সান্দ্রো বত্তিচেল্লি, রবার্ট বয়েল এবং আইজ্যাক নিউটনের মতো ব্যক্তিত্বও৷
ব্রিটিশ মিউজিয়মে পাওয়া আরামায়িক ভাষায় লেখা ওই পুঁথির পাঠোদ্ধার করার জন্য মাসের পর মাস নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন ঐতিহাসিক ব্যারি উইলসন ও যিশুর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সিমচা জ্যাকোবোভিচ৷ বহু প্রাচীন এই পুঁথির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদের পর দুই বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, মেরি ম্যাগডালেনকে যিশুর বিয়ে করা এবং তাঁদের দু'টি সন্তান জন্মানোর তথ্য দেওয়া রয়েছে 'দ্য লস্ট গসপেল' নামে পরিচিত এই পুঁথিতে৷ এখানেই শেষ নয় চমকের৷ দু'জনেই জানিয়েছেন, বাইবেলে যিশুর মা হিসেবে যাঁর উল্লেখ করা হয়েছে সেই মেরি আসলে যিশুর মা নন৷ বাইবেল বর্ণিত যিশুর মা মেরি আসলে যিশুর স্ত্রী মেরি ম্যাগডালেন স্বয়ং৷
হারানো এই পুঁথিতে যিশুর দুই সন্তানের নামও দেওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারি ও সিমচা৷ কয়েক দিন পর সেই সম্পর্কে পুরো তথ্য তাঁরা প্রকাশ করবেন বলে জানা গিয়েছে৷ যিশুর বিবাহিত জীবন নিয়ে আলোকপাত করার ঘটনা এই প্রথম নয়৷ ১৯৫৩ সালে নিকোস কাজানজাকিস তাঁর বিতর্কিত বই 'দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অফ খ্রাইস্ট' এবং তার কয়েক দশক পর মিশেল বেজঁ, রিচার্ড লেই ও হেনরি লিঙ্কন মিলিত ভাবে বেশ কয়েকটি বইয়ে এই বিষয়ে বহু অজানা তথ্য জানিয়েছেন৷
সম্প্রতি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করা ড্যান ব্রাউনের 'দ্য দা ভিঞ্চি কোড' বইয়েরও মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল যিশু ও মেরির সম্পর্ক৷ যে ঐতিহাসিকরা এই তত্ত্ব বিশ্বাস করেন, তাঁদের বিশ্বাস যিশুর সমসাময়িক লেখকরা যিশুকে নিয়ে বহু কিছুই লিখেছিলেন৷ এর মধ্যে ছিল একেবারে শুরুর দিকে পশ্চিম এশিয়ায় কী ভাবে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল, তার বিবরণও৷
কিন্ত্ত, চার্চ শক্তিশালী হওয়ার এবং রাজানুগ্রহ পাওয়ার পর থেকেই সেই অমূল্য তথ্য নষ্ট করার কাজ শুরু হয়৷ ঐতিহাসিকরা মনে করেন, আজ আমরা সেই সময়ের যে তথ্য জানতে পারি, তার বেশিরভাগটাই চার্চের 'তৈরি করা' ইতিহাস৷ কিন্ত্ত 'দ্য লস্ট গসপেলের' মতো কিছু তথ্য চোখের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে এখনও৷
“যিশু তাঁদের বললেন, আমার স্ত্রী...”। ছোট্ট এক টুকরো প্যাপিরাসের উপর কালো কালি দিয়ে লেখা আছে এ কথাই।
আর এর দৌলতে আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বহুচর্চিত সেই প্রশ্ন যিশু কি বিবাহিত ছিলেন?
কপটিক ভাষার এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন ‘হাভার্ড ডিভিনিটি স্কুলের’ অধ্যাপক ক্যারেন কিং। প্রমাণ হিসাবে তিনি হাজিরও করেছেন কপটিক ভাষায় লেখা প্যাপিরাসের এক টুকরো। কিংয়ের দাবি, খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের বিয়ে বা যৌনতা নিয়ে প্রচলিত ধারণা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায় এই লেখা।
লম্বায় সাকুল্যে চার সেন্টিমিটার, আর চওড়ায় আট সেন্টিমিটারের এক হলদেটে প্যাপিরাস। ভাষা প্রাচীন মিশরীয় কপটিক। উল্টো পিঠে মোটে তিনটি শব্দ পড়া গেলেও আর এক দিকের লেখা স্পষ্ট। ‘আমার স্ত্রী’ ছাড়াও ‘সে আমার শিষ্যা হবে’ অথবা ‘আমি তার(মহিলা অর্থে) সঙ্গে থাকি’-বেশ পড়া যায় এই কথাগুলো।তবে প্যাপিরাসটি কোথাকার, তা জানা যায়নি। একরাশ গ্রীক ও কপটিক ভাষার প্যাপিরাসের মধ্যে হঠাৎই এক দিন এই প্যাপিরাসটি খুঁজে পেয়েছিলেন এক সংগ্রহকারী। ভাষার মর্মোদ্ধার করতে তিনিই ওই টুকরো তুলে দেন ক্যারেন কিংয়ের হাতে।
ভাষা-ভঙ্গিমা, লেখার কায়দা আর প্যাপিরাসের অবস্থা দেখে কিংয়ের ধারণা, ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয়ার্ধে লেখা হয়েছিল প্যাপিরাসটি। আর এর উৎসস্থল সম্ভবত উত্তর মিশর। প্যাপিরাসটি যে আসল সে ব্যাপারে ক্যারেনের সঙ্গে একমত কপটিক ভাষা বিশেষজ্ঞ ও প্যাপিরাস বিশারদ দুই অধ্যাপক। যদিও লেখার কালির রাসায়নিক বিশ্লেষণ বাকি আছে, জানিয়েছেন ক্যারেন নিজেই।
ক্যারেন কিংয়ের কথায়, এই প্যাপিরাস থেকে এটা স্পষ্ট যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রথম যুগে অনেকেই মনে করতেন, যিশু বিবাহিত। ধর্মগুরুদের অকৃতদার হতে হবে কি না, তা নিয়ে সে সময় তাত্ত্বিক বিতর্কও কম হয়নি। পরে খ্রিস্ট ধর্মকে রোম সাম্রাজ্যের রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করে কনস্টানটাইন ৩০০ বিশপকে আহ্বান জানান ধর্মের চূড়ান্ত রূপ দিতে। কিংয়ের বক্তব্য, বিয়ে সংক্রান্ত যাবতীয় কড়াকড়ির আমদানি এর পর থেকে।
এর আগেও যিশুর স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বহু। ২০০৩ সালে লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এ লেখক ড্যান ব্রাউন যিশুকে কল্পনা করেছিলেন বিবাহিত বলেই। তবে সরাসরি কোনও প্রমাণ মেলেনি আগে। কিংয়ের ‘প্রমাণ’ নতুন করে উস্কে দিল পুরনো বিতর্ক।
ভার্জিন মেরি আদতে যিশু খ্রিস্টের মা নন! তিনি না কি যিশু খ্রিস্টের স্ত্রী! এত দিন ধরে আসলে ভুল বুঝে এসেছি আমরা! কেন না, এই নারী যিশুর জন্মদাত্রী মেরি নন। তিনি মেরি ম্যাগডালেন।
গণিকা হিসেবে সমাজে ঘৃণা এবং কৌতূহল দুটোই কুড়িয়েছিলেন মেরি ম্যাগডালেন! তার সঙ্গে যিশুর বিয়ে হয়। যিশু খ্রিস্টর ঔরসে দুই পুত্রসন্তানের জন্মও দেন মেরি। তার মানে, মেরির কোলে যে শিশুটিকে দেখে আমরা অভ্যস্ত, তিনি আদতে যিশুর সন্তান! ভারতীয় গণমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এই সংবাদ প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত ১৫০০ বছরের একটি প্রাচীন পুঁথি এ ঘটনার সত্যতা দাবি করেছে। বইটির নাম `লস্ট গসপেল`। হারিয়ে যাওয়া এই সুসমাচার সম্প্রতি দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার পরে প্রাচীন আর্মাইক ভাষা থেকে পাঠোদ্ধার করেছেন অধ্যাপক ব্যারি উইলসন এবং লেখিকা সিমচা জ্যাকোবোভিক। ঘটনা জানার পর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছেন তারা। তারপর সংবাদটি প্রকাশ করে সারা দুনিয়াকে বাকরুদ্ধ করে তুলেছেন এই দুই গবেষক।
তবে, এই খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু হুলুস্থুল শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই শিউরে উঠছেন ঘৃণায়। বলছেন, এ সব একটা নয়া অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। বাকিদের বক্তব্য, হয়তো এই হারিয়ে যাওয়া সুসমাচার যিশুর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে পারবে!
সম্প্রতি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সন্ধান মেলা প্রায় ১৫শ' বছরের পুরোনো একটি পাণ্ডুলিপিতে এমন তথ্য পাওয়ার দাবি করছেন এর অনুবাদকারীরা।
ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকা এধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কয়েক মাস ধরে কাজ করে ‘লস্ট গসফেল’ নামে পরিচিত প্রাচীন আরামাইক ভাষা থেকে পাণ্ডুলিপিগুলোর অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ব্যারি উইলসন ও লেখক সিমকে ইয়াকোবোভিচ।
এছাড়া, ভার্জিন মেরি যিশুর মা ছিলেন না বরং তিনিও তার স্ত্রী ছিলেন বলে নতুন ওই বইয়ের দাবি।
মেরি ম্যাগডালেন চরিত্রটি প্রচলিত গসফেলও বেশ আলোচিত। যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়া, তার পুনরুত্থানসহ তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। পুনরুত্থানের পর ম্যাগডালেনই প্রথম যিশুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বলে খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে।
তবে আলোচিত চরিত্র ম্যাগডালেনকে যিশু বিয়ে করার দাবিটি এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক এমন দাবি তুলেছিলেন।
১৯৫৩ সালে নিকোজ কাসানসাকি তার ‘দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট’ এবং ডেন ব্রাউনের ‘দ্য ড্য ভিঞ্চি কোড’ বইতেও মেরি ম্যাগডালেনকে যিশুর স্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩