পাকিস্তানে বাঙ্গালি
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
বাংঙ্গালিদের সম্পর্কে একটা বহু প্রচলিত কথা হচ্ছে,পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে বাঙ্গালী নেই । সত্যিই কি তাই ? কথাটা মাথায় আসতেই আরেকটা কথা মাথায় এলো পাকিস্তানেও তো তাহলে বাঙ্গালী থাকবে । চিন্তাটা আরো জোড়াল হল যখন ভাবলাম বাংলাদেশটা আগে পূর্ব পাকিস্তান ছিলো । এমনও তো হতে পারে যে বাংলাদেশ থেকে ভাগ্যের সন্ধানে কেউ পাকিস্তান এসেছিল । ইউ টিউবের কল্যানে বেশ কিছু ভিডিওতে দেখলাম পাকিস্তানে বসবাসকারি বাঙ্গালিদের । সব থেকে আশ্চর্য্যের কথা কি জানেন, এরা ফেসবুকে নিজেদের একটি পেজও চালান ।
পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালিদের একটি পল্লী করাচির বাফার জোন এলাকার গোদরা নামক জায়গায় অবস্থিত । এই পল্লীর বাঙালিদের সম্মন্দে জানা জায় এদের কিছু স্বাধীনতার পূর্ব থেকে করাচিতে বসবাস করছে ।করাচির নাকি ১০ শতাংশ বাঙালি। সংখ্যায় - কেউ বলে ১০ লাখ, কেউ বলে ৩০ লাখ। ১০ লাখের কম কেউ বলে না। ভোটের সময় নেতারা এদের সংখ্যা দেখায়। ভোটের পর আবার এরা বেআইনে যায়। বেলাইনেও যায়। আর কিছু রাজাকার আছে যারা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে এখানে বসবাস শুরু করে । তাছাড়া এই পল্লীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা চাকরির জন্য ৮০ ও ৯০-এর দশকে নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে । যাদের অধিকাশই দেশ প্রেমী বাংলাদেশি । ঐ সময় টাকার তুলনায় পাকিস্তানি মুদ্রার দাম দ্বিগুন ছিল ।
এই পল্লীর ৯৬% বাসিন্দাই স্বপরিবারে আছে, যাদের অধিকাংশই খুলনা ও কুমিল্লা অঞ্চলের বাসিন্দা । এখানকার রাজাকাররা বাংলাদেশের সন্তান হয়েও সব সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে । বাঙালি রাজাকার ও তাদের সন্তানরা নিজেদেরকে পাকিস্তানি মনে করে যদিও পাকিস্তান সরকার এবং পাকিস্তানের জনগন তাদেরকে মোটেও পাকিস্তানি মনে করে না । কাগজে-পত্রেও বাঙালিরা পাকিস্তানের ঘোষিত নাগরিক নয় ।রাজাকার হোক বা ১৯৭১ পূর্ব বাসিন্দা হোক, পাকিস্তানে বাঙালিরা মারাত্বক ভাবে বৈষম্যের শিকার । পুলিশের অত্যাচারও তুঙ্গে, দোষ একটাই- তাঁরা বাঙালি । এই পল্লীর ১০০% বাঙালিই মুসলমান । বাঙালিদের নির্মিত দুটি মসজিদও এখানে আছে । কিন্তু সমস্যা হলো পাকিস্তানিরা ধর্মের চেয়ে জাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে । যা আমরা ১৯৭১-এও দেখেছি ।
এক তো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মন্দা অন্য দিকে পুলিশের নির্যাতন ও বৈষম্যে অতিষ্ঠ হয়ে বাঙালি পরিবার গুলো বাংলাদেশে ফিরে যেতে শুরু করেছে । প্রতি দিনই করাচিস্থ বাংলাদেশি কনসুলেটে গিয়ে নিজের দেশের ভিসার জন্য বাঙালিরা ভীড় করছে । এখানেও কনসুলেট কর্মীদের নানান হয়রানির শিকার হচ্ছে এই হতভাগা বাঙালিরা । তবে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার পরিবার গুলো তেমন একটা বাংলাদেশ মুখী নয় ।
লেখাটা শেষ করব আমার এক বাংলাদেশী ভাইয়ের মর্মান্তিক জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে,সুলতান ২৮০০০ পাকিস্তানি মুদ্রা ব্যায় করে একটা পরিচয় পত্র বানিয়ে ছিলো । ও একদিন পরিচয় পত্র ছারা রাস্তায় বের হয় এবং ওর ১২ বছরের কারাদন্ড হয় । এই সব পরিচয় পত্রের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে তার পর আবার ২৮০০০ ব্যায় করে পরিচয় পত্র তৈরি করতে হয় । এই ভাবেই চলছে । সুলতানের মতন না জানি কত ভাইরা আছেন যারা কারাগারেরর অন্ধকার কুঠুরিতে ভয়ঙ্কর দিন কাটাচ্ছেন । তাদের কথা কজনই বা ভাবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৫