অসহিষ্ণুতার কাণ্ডারী কট্টরপন্থীদের রণহুঙ্কার ও দুন্দুভিনিনাদে যখন এ দেশে কান পাতাই দায়, বহু শতাব্দী ধরে এই দেশ তার অন্তর্লীন ঐক্যটাকে ধরে রেখেছে কী ভাবে এই প্রশ্নটাই যখন লক্ষ টাকার বলে প্রতিভাত হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়েই তার উত্তরটা এল চেন্নাইয়ের বন্যাদুর্গত এক এলাকা থেকে। এক দম্পতি তাঁদের সদ্যোজাত কন্যার নাম রেখেছেন ‘ইউনুস’।
প্রসববেদনায় কাতর স্ত্রী চিত্রাকে নিয়ে চারদিকে জল থইথই বাড়ির মধ্যে যখন আটকে গিয়েছিলেন মোহন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, ঠিক সেই সময়েই ঈশ্বরপ্রেরিত দূতের মতো এসেছিলেন মহম্মদ ইউনুস। নৌকায় তুলে নেন তাঁদের, হাসপাতালে পৌঁছে দেন নির্বিঘ্নে। মেয়ের জন্ম দেন চিত্রা। এই দম্পতি নাম রাখেন তার, ইউনুস।
এটা ঠিক, মানুষ যেখানে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, সেখানে হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসাটাই আসা অনাকাঙ্খিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সময়ে, অনাকাঙ্খিত অসহিষ্ণুতার পরিবেশে কখনও কখনও কিছু কথা এ রকম ভাবেই বলতে হয়। দুর্ভাগ্যজনক সেটাই। কট্টর শক্তিগুলো রাজনীতি, ধর্ম মিশিয়ে যখন স্বার্থান্বেষী আবহ তৈরি করে, তখন আসল ভারতের আসল মানুষ মোহন-ইউনুস-চিত্রাদের কথা বলার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অলোর রোখাটা এসে পড়লেই অন্ধকারের গহনতার সম্যক উপলব্ধি হয় আমাদের।
এক একটা দিন, মনটা খুব ভাল হয়ে যায়। এক একটা দিন, নতুন করে বাঁচার আশাটাকে আরও জাগ্রত করে তোলে। রাজধানীর ক্ষমতার অলিন্দে দাপাদাপি করে বেড়ানো রাজনীতি ও ধর্মের কাণ্ডারীদের বাইরেও একটা বিশাল ভারত আছে, সেই ভারতই আসল— এই কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের, ইউনুস-চিত্রা-মোহন।
আপনারা একটা বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিলেন আমাদের উপর। ওই যে শিশু, ইউনুস, পৃথিবীটাকে ওর জন্য বাসযোগ্য করে যেতে হবে আমাদের।
সূত্র আনন্দবাজার
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩