মার্কেটিং বা বিপণনের একটা প্রবাদ আছে--"নো মার্কেটিং ইজ ব্যাড মার্কেটিং", অর্থাৎ কিনা, ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবে হোক পণ্য বিক্রি করতে হবে, সবাইকে জানাতে হবে, বদনাম হয়েও যদি প্রচার হয়, পণ্য বিক্রি হয়, পকেটটা ভারি হয়, মন্দ কি? বিপণনের কৌশল এখন পাল্টে গেছে, ক্যানভাসারের যুগ আর নেই, জোর করে গছিয়ে দেয়া বা "পুশিং সেল" জিনিসটাও নেই, যেখানে ক্রেতার কাছে গিয়ে বিক্রেতাকে কাকুতি-মিনতি করতে হতো পণ্য কেনার জন্য। এখন বরং বিপণনের মূলমন্ত্র হচ্ছে, মানুষের চাহিদা সর্বদাই সুপ্ত থাকে, সেটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে, তাতিয়ে দিতে হবে, এমনভাবে সেই চাহিদাকে ব্যবহার করতে হবে যেন ক্রেতা নিজেই পাগলের মত ছুটে আসে বিক্রেতার কাছে। সেটা ক্রেতার চাহিদাগুলো আগাম বুঝে নিয়ে পণ্যের মাঝে যোগ করা যেতে পারে, আবার এমন সুপ্ত চাহিদাও বুঝে নিতে হবে যেটা ক্রেতা নিজেই জানতো না। মার্কেটিয়ার বা বিপণনকারীর কাজ হলো সেটা সম্পর্কে সম্ভাব্য ক্রেতাকে জানিয়ে দেয়া। দরকার থাকুক বা না থাকুক, সেই "প্রয়োজন"টা সৃষ্টি করাই হলো আধুনিক বিপণনকারীর কাজ। এজন্য ক্রেতাকে লোভ দেখানো যায়, তার আবেগকে ব্যবহার করা যায়, কোন কিছুই অবৈধ বা অনৈতিক নয় এখানে, কাগজে-কলমে হলেও বাস্তবে নয়।
আবেগভিত্তিক বিপণনের সবচেয়ে পুরানো পদ্ধতি সম্ভবত ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্ককে ব্যবহার করা। যেমন ধরুন, অনেক ছোটবেলায় দেখা রেডকাউ-এর বিজ্ঞাপনের কথা। প্রবাসে পড়াশোনা শেষ করে এক তরুণ দেশে ফিরছে, বিমানবালার কাছে চাইলো একগ্লাস দুধ (আমি মূর্খ মানুষ, জানা নেই বাংলাদেশ বিমানে দুধ দেবার ব্যবস্থা আছে কিনা, নিয়মিত যাত্রীরা জানবেন)। সেই দুধের গ্লাস দেখে তার মনে পড়ে গেল ছেলেবেলার হাজারো স্মৃতি, ভাই-বোন, মা-বাবার কথা। চমৎকার বিজ্ঞাপন, রেডকাউ খাই বা না খাই, ছাপ ফেলতে বাধ্য, কারণ খুব বড় একটা আবেগের জায়গাকে স্পর্শ করতে পেরেছে বিজ্ঞাপনটা, সফল বলা যায়। ব্যক্তি বা পরিবার ছাড়িয়ে এরপর চলে এল জাতীয় আবেগকে ব্যবহারের সময়, কাজেই আমেরিকানরা যেমন সব পণ্যেই "আমেরিকানিজম" নিয়ে আসার চেষ্টা করে, কোকা-কোলার গায়েও দেখা যায় "মেড ইন গ্রেট ব্রিটেন"। আমাদের টেলিটক চেষ্টা করেছিল "আমাদের ফোন" নাম দিয়ে বাজার ধরার, কিন্তু আজকাল এত সোজাসাপ্টা কথায় কাজ হয় না, কাজেই দেশী মোবাইল কোম্পানির বদলে ভিনদেশী বাংলালিংক অনেক বেশি সফল হলো মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের গল্প বলা বোনের কান্নার বিপণন করে, বা কবি নির্মলেন্দু গুণ আর মুক্তিযোদ্ধা গায়ক আজম খানকে দিয়ে দেশপ্রেম ভিত্তিক বিজ্ঞাপন করে। দেশ বুঝি বা না বুঝি, বাংলালিংকের পকেট ভারি করতে সমস্যা হয়নি, বিজ্ঞাপনের এমন-ই গুণ।
ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আবেগের চেয়েও প্রাচীন এবং অনেক বেশি স্পর্শকাতর আবেগের নাম হলো ধর্ম। বেশিরভাগ মানুষ-ই মা-বাবা-প্রেমিকার দোহাই দিলে যে কাজটা করবে না, কোনভাবে সাথে ধর্ম জুড়ে দিতে পারলে সেটা করবেই। কাজেই "লাক্স মেখে সুন্দরী" হবার চেয়েও অনেক বেশি সাড়া পড়েছিল "হালাল সাবান" অ্যারোমেটিক ব্যবহার করার আহ্বানে, ইউনিলিভারের মত বহুজাতিক একটা কোম্পানির সাবানকে বাজার থেকে প্রায় বের করে দিয়েছিল দেশী কোম্পানির অ্যারোমেটিক সাবান, ধর্মের এমন-ই শক্তি। কিন্তু আমরা না হয় তথাকথিত "পশ্চাৎপদ, ধর্মান্ধ, মূর্খ" জাতি, আমাদের আজকালকার নব্য প্রগতিশীল, আধুনিক, পশ্চিমমুখী প্রজন্ম যেসব দেশকে সেক্যুলার ধারা আর গণতন্ত্রের পথিকৃত মেনে কথায় কথায় উদাহরণ দেন, সেই আমেরিকা বা পশ্চিমের অন্যান্য দেশের কি অবস্থা? সেটা শুরু করার আগে বলে নেয়া ভাল, আমেরিকার "ন্যাশনাল মটো" হিসেবে ১৯৫৬ সালেই গৃহীত হয়েছে--"ইন গড উই ট্রাস্ট", এবং তাদের ডলার বিলে সেটা লেখাও আছে, বেশ বড়সড় করেই।
ঈশ্বরের আমেরিকা
কারণটা, উইকিপিডিয়া অনুসারে, আমেরিকানদের মাঝে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় আবেগ। ব্রিটেন তারচেয়েও বেশি, তাদের জাতীয় সঙ্গীত শুরুই হয় "গড সেভ দ্য কুইন" দিয়ে। পশ্চিমা রাজনীতিতে, বিশেষ করে আমেরিকায়, এখনো ভোট পাওয়ার জন্য কে পোপের চেয়ে (রূপকার্থে, কারণ পোপ সব খ্রিস্টানের নমস্য নয়) কত বড় খ্রিস্টান সেটা প্রমাণ করতে হয়।
যাকগে, রাজনীতি আপাতত দূরেই থাকুক, কথা হচ্ছিলো বিপণন নিয়ে। সাদা চোখে যদিও আমেরিকা একটা সেক্যুলার দেশ (যেখানে ক্রিসমাসের লম্বা রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকলেও ঈদের ছুটি নেই), পরসংখ্যান সেটা বলে না। ৯৬% আমেরিকান তাদের ধর্মীয় সম্পৃক্ততা স্বীকার করে, ৩৬% নিয়মিত ধর্মীয় কাজকর্মে অংশ নেয়, এবং ৫১% মনে করে ধর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমেরিকার ৮০% খ্রিস্টান, বৌদ্ধ আর মুসলিম ১% করে, ২% ইহুদী, এবং মাত্র ২% করে সন্দেহবাদী (অ্যাগনস্টিক) এবং নাস্তিক। খ্রিস্টানদের মাঝেও ভাগ আছে, আমেরিকায় বেশিরভাগ-ই প্রোটেস্টান্ট, এবং এরাই মূলধারা, প্রায় ৫১%। ক্যাথোলিক, যারা মূলত: পোপের অনুসারী, আছে ২৪%, আর ইভান্ঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টান আছে ৩%, বাকিরা আরো নানা শাখা-প্রশাখায় ছড়ানো, যারা বিপণনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ক্যাথোলিকদের চার্চ আছে ১২৫৯ খানা, প্রোটেস্টান্টদের ১২২২ খানা, ইভান্ঞ্জলিক্যালদের ১৫৭ খানা। [তথ্যসূত্র: Pew Research Center]
তো, এমন একটা জমজমাট ধর্মীয় ভাবের সুযোগ নেবে না বিপণনকারীরা, সেটা হতেই পারে না। তবে তার আগে দরকার খানিক গবেষণা, কোন বিশ্বাসের লোকজনের স্বভাব কেমন, জীবনযাত্রা কেমন, তাদের পছন্দ-অপছন্দ, ধর্মীয় বিধিনিষেদ কেমন সেটা জানা। প্রোটেস্টান্টরা অপেক্ষাকৃত উদার, দলবদ্ধটার চেয়ে ব্যক্তিগত আচারকেই গুরুত্ব দেয়। এদের বিশ্বাসে পরিশ্রম আর সোজাসাপ্টা কাজকে উৎসাহ দেয়া হয়, এবং আমেরিকান ধনী এবং অভিজাতদের মাঝে এদের সংখ্যা বেশি, সরকার এবং সশস্ত্র বাহিনীর নানা পদেও এদের প্রভাব বেশি। প্রোটেস্টান্টদের শিক্ষার হার বেশি, রোজগারও বেশি, তার মানে দাঁড়াচ্ছে এদের "পারচেজিং পাওয়ার" বা ক্রয়ক্ষমতাও বেশি। ক্যাথোলিকরা অপেক্ষাকৃত গোঁড়া, পোপের অনুসারী, বিধিনিষেধও বেশি। সাধারণভাবে এরা গর্ভপাত এবং বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক সমর্থন করে না, এদের পরিবার বড়। ইভান্ঞ্জেলিক্যালরা আরেক কাঠি ওপরে, এরা এমনকি কোন সিনেমা বা বিজ্ঞাপন বেশি খোলামেলা হলে সেটাও পছন্দ করে না, গর্ভপাত তো দূরের কথা। এদের মাঝে কালোরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং যথেষ্টই রক্ষনশীল, ওদিকে ক্যাথোলিকদের একটা বড় অংশ হলো হিস্পানিক ও স্প্যানিশ ভাষাভাষীরা। ক্যাথোলিক আর ইভান্ঞ্জেলিক্যাল পরিবারগুলো পুরুষতান্ত্রিক, এবং রোজগারের দিক দিয়ে ইভান্ঞ্জেলিক্যালরা সমাজের নিচের স্তরে বলা যায়, একই সাথে এরা অনেকেই অ্যালকোহল বিরোধী। প্রোটেস্টান্টদের মাঝে কলেজ গ্রাজুয়েট ১৬%, ক্যাথোলিকদের ১৫%, ইভান্ঞ্জেলিক্যালদের সেখানে মাত্র ৯%।
এই সম্মিলিত আমেরিকান খ্রিস্টান জনগণের বার্ষিক ক্রয়ক্ষমতা প্রায় ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলার। এই কেনাকাটার একটা বড় অংশ আবার হয় ক্রিসমাস, থ্যাংকসগিভিং বা ইস্টারের মত ধর্মীয় উৎসবগুলোর সময়ে। কাজেই বিপণনকারীরা শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের লক্ষ্য করেই যে অনেকগুলো বিজ্ঞাপন বানাবে, সেটায় অবাক হবার কিছু নেই। মেল গিবসনের "দ্য প্যাশন অভ ক্রাইস্ট" ম্যুভিটার বিপুল জনপ্রিয়তার কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ম্যুভির সাথে সাথে "জেসাস" বা যীশু'র জনপ্রিয়তাও বেড়েছিল সমান তালে, সেই সুযোগে যীশু সম্পর্কিত পণ্যের ব্যবসাও বেড়েছিল ব্যাপকভাবে। একটা উদাহরণ হলো "জেসাস ইজ মাই হোমবয়" স্লোগান সম্বলিত টি-শার্ট, মগ বা চাবির রিংয়ের রমরমে বিক্রি। সম্প্রতি রিপাবলিকান রমনির ধর্মীয় ইমেজের সাথে পাল্লা দিতে ওবামা শিবির এই স্লোগানকে কাজে লাগাচ্ছে; http://www.jesusismyhomeboy.com সাইটে গেলেই দেখা যাবে "ওবামা ইজ মাই হোমবয়" লিখে বারাক ওবামার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ওবামার বিজ্ঞাপন, নাকি যীশু'র?
বিপণনকারীদের মূল লক্ষ্য সবসময়ই থাকে তরুণ-তরুণীরা, আর মহিলারা, খরচের দিক থেকে এরা অগ্রণী। কাজেই ক্যাথোলিকদের এখনকার লক্ষ্য এই তরুণ প্রজন্ম, ক্যাথোলিক রক্ষণশীলতার কারণে যারা ধর্মের দিকে খুব একটা উৎসাহী নয়। কাজেই এদের পাকড়াও করবার জন্য নিয়মিত প্রচার চলে, http://www.romanticcatholic.com ওয়েবসাইটে এই ধরণের আধুনিক "ক্যাথোলিক" পণ্যের প্রচার চলে। ল্যাটিন ক্যালিগ্রাফিতে "মারিয়া" লেখা টাইটফিটিং টি-শার্টখানা অবশ্যই মাতা মেরি হলে পরতেন না, কিন্তু আমেরিকান তরুণীদের পছন্দ হবে তাতে সন্দেহ নেই।
মারিয়া'র সবকয়টি অক্ষর এখানে আছে
একইভাবে "রোমান্টিক ক্যাথোলিক" স্লোগান লেখা "হুডি" যেমন কিশোর-তরুণদের টানবে, সেরকমভাবে "রিয়েল কিং ওয়্যার থর্নস" ধরণের স্লোগানটাও ধর্মের সাথে একটা রাফ অ্যান্ড টাফ মাচো ভাব এনে দেয় নিশ্চিতভাবেই, না কিনে যাবে কোথায়!
রাফ অ্যান্ড টাফ
ক্যাথোলিকদের পরিবার সাধারণত বড় হয়, কাজেই তাদেরকে লক্ষ্য করে বানানো বিজ্ঞাপনগুলোতে জোর দেয়া হয় "ফ্যামিলি ডিসকাউন্ট", "বান্ডল অফার" এই জাতীয় ব্যাপারগুলোর দিকে, বা ফ্যামিলি অফারগুলোর দিকে, যেমন "পুরো পরিবারের হলিডে প্যাকেজ"। ক্যাথোলিকদের নিজস্ব ম্যাগাজিন, রেডিও, টিভি চ্যানেল সব-ই আছে, সেগুলোর ভোক্তা প্রচুর, আমাদের জামাতীদের মত ক্ষুদ্র একটা অংশ নয়, বিজ্ঞাপনের জন্য এগুলো-ও বেশ ভাল জায়গা, বিশেষ করে শুধুমাত্র ক্যাথোলিকদের জন্য যেসব বিজ্ঞাপন বানানো হয়।
প্রোটেস্টান্টদের বাজারটা আরো অনেক বড়, এবং মূলধারার আমেরিকান বলে আরো বেশি আকর্ষণীয়। এদের পরিবার ছোট, রোজগার অন্য ধারাগুলোর চেয়ে বেশি, এবং ব্যক্তিসত্ত্বা আর পরিশ্রমে বিশ্বাসী। এদেরকে লক্ষ্য করে বানানো দারুণ জনপ্রিয় একটা বিজ্ঞাপন ছিল জেরক্স-এর। ১৯৭৬ সালের এই বিজ্ঞাপনে একজন পাদ্রীকে দেখা যায় জেরক্সের ফটোকপিয়ারের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো, স্লোগানটা ছিল--"দ্য ডুপ্লিকেটরস ফর দোজ হু অ্যাপ্রেশিয়েটস দ্য ভারচু অভ সিম্প্লিসিটি" অর্থাৎ "তাদের জন্য এই ডুপ্লিকেটর যারা সহজ-সরল কায়দায় বিশ্বাস করেন।"
ড
জেরক্সের পাদ্রী
এই পাদ্রীকে এরপরেও জেরক্সের নানা বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, এবং দারুণ সফল এক ক্যাম্পেইনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। সময়ের সাথে প্রোটেস্টান্টরা আরো বেশি উপরে উঠেছে, এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ধর্মের ব্যাপারে গোঁড়া নয় বলে আলাদাভাবে এদের জন্য ধর্মকে খুব একটা তুলে ধরা হয় না, তবে অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে দামী এবং বিলাসদ্রব্যের বিজ্ঞাপনগুলো প্রোটেস্টান্টপ্রধান রাজ্যগুলোতে বেশি দেয়া হয়। ম্যুভি বা থিয়েটারের মূল দর্শক এরাই, কাজেই সেখানকার বিজ্ঞাপন এবং পণ্য বাছাই করা হয় এই শ্রেণীকে সামনে রেখে, একই সাথে রোজগারের দিক দিয়ে উপরের দিকে বলে গলফ ক্লাব, অভিজাত রিসোর্টেও এদেরকে লক্ষ্য রেখে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।বেশি দামী, কাস্টমাইজড বা স্পেশাল অফারগুলো-ও এদের কথা মাথায় রেখে করা হয়।
এখানে একটা মজার জিনিস না জানলেই নয়, (যদিও আমেরিকার সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে ক্রিস্টিয়ানিটির সাথে সম্পর্কিত অবশ্যই), স্রেফ উৎপাদনের এলাকার জন্য একটা হুইস্কির পরিচয় হয়ে গেছে ক্যাথোলিক হুইস্কি, আরেকটা প্রোটেস্টান্ট হুইস্কি। Jameson whiskey উৎপাদিত হয় ক্যাথোলিকপ্রধান রিপাবলিক অভ আয়ারল্যান্ডে, ওদিকে Bushmills whiskey উৎপাদিত হয় প্রোটেস্টান্টপ্রধান নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে। Jameson-এর বোতলের রঙ সবুজ যেটা কিনা ক্যাথোলিকদের রঙ, আবার Bushmills-এর বোতলের রঙ কমলা যেটা কিনা প্রোটেস্টান্টদের রঙ। (একই ব্যাপার দেখা যায় ক্যাথোলিক আর প্রোটেস্টান্ট অধ্যুষিত এলাকার ফুটবল ক্লাবগুলোতেও)। কাজেই লোকজনের এই ধারণা, আর বিপণনকারীরা সেটা ভাঙিয়ে খাচ্ছে দিব্যি।
এবার আসা যাক ইভান্ঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের কথায়। এদের মাঝে শিক্ষার হার কম, এবং কালো-দের মাঝে এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। রোজগার-ও কম, এবং অত্যন্ত গোঁড়া, বলা যায় বাইবেল অনুসরণ করে অক্ষরে অক্ষরে, কাজেই অ্যালকোহল, ড্রাগস এবং বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক একদমই নিষিদ্ধ এদের মাঝে। কাজেই তাদের জন্য যেসব পণ্যের বিজ্ঞাপন বানানো হয় সেগুলো অপেক্ষাকৃত কম দামী, এবং বিজ্ঞাপনগুলোতে পুরুষ প্রধান এবং পারিবারিক মূল্যবোধের গুরুত্ব থাকে বেশি। বিজ্ঞাপন দেয়াও হয় এমন সব অনুষ্ঠানের মাঝে যেগুলো রক্ষণশীল, অর্থাৎ কিনা যৌনতামুক্ত এবং সুশীল। এছাড়াও ইভান্ঞ্জেলিস্টদের নিজস্ব চ্যানেল আর ম্যাগাজিন আছে, সেগুলোতে নিয়মিত এসব বিজ্ঞাপন যায়।
তিনজন ভাবগম্ভীর সত্যিকারের পাদ্রী, ভেসপা'র বিজ্ঞাপনে, গোঁড়া ধার্মিকদের পছন্দ হতেই হবে
তবে ধর্মীয় "থিম" বা চরিত্র নিয়ে বিজ্ঞাপন বানাবার সময় বিপণনকারীদের খুব-ই সতর্ক থাকতে হয় যেন কোনভাবে কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগে না যায়। যাদের ধারণা মুসলিমদের ঈমানেই কেবল আঘাট লাগে, তারা কয়েকটা "ব্যর্থ" ধর্মভিত্তিক বিজ্ঞাপনের খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আইনের মাঝে পড়ে না বলে এরা হয়তো লাঠিসোটা নিয়ে ঠ্যাঙাতে পারে না, কিন্তু পুরো ক্যাম্পেইনটা বর্জন করতে কোন সমস্যা নেই, বিপণনকারীর ১২টা বাজাতে সেটাই যথেষ্ট। এরকমই একটা ক্যাম্পেইন ছিল ইএসপিএন-এর, যেখানে অ্যাথলেটদের তুলনা করা হয় যীশু'র সাথে।
ইএসপিএন-এর যীশু
স্বাভাবিকভাবেই তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে, এবং কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় সেটা প্রত্যাহার করতে। কোমল পানীয় ডক্টর পিপার-এর আরেক বিজ্ঞাপনে আবার দেখানো হয় একটা বানর ডক্টর পিপার খেয়ে খেয়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে।
বিবর্তনবাদী ডঃ পিপার
এখন গোঁড়া খ্রিস্টানরা যেহেতু বিবর্তনবাদ জিনিসটাই মানে না, কাজেই এই বিজ্ঞাপন-ও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। একই সাথে, ক্যাথোলিক এবং ইভান্ঞ্জেলিস্টপ্রধান চ্যানেলগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী এবং অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন-ও সযত্নে পরিহার করা হয়।
কয়েকটা ক্রিসমাসভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখিয়ে লেখাটা শেষ করবো, তবে তার আগে একটা প্রায় অজানা, বা বলা ভাল, ইচ্ছাকৃতভাবে ধামাচাপা দিয়ে দেয়া একটা কাহিনী বলে নিই। খ্রিস্টান দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র কোনটি? আপনি খ্রিস্টান না হলেও একবাক্যে বলে দেবেন, সান্টা ক্লজ। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় কোনটি? খুব একটা বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, কোকা-কোলা। এবার বলুন তো এই দু'টির সম্পর্ক কি? একদম চট করে যেটা মাথায় আসবে তা হলো, দু'টোতেই লাল রঙের প্রাধান্য। অর্থাৎ কিনা, সান্টা'র হাতে কোকা-কোলার বোতলটাই সবচেয়ে বেশি মানায়, আর কোনটা নয়। কিভাবে? কয়েকটা ছবি দেখলে বুঝবেন, ১৯৩০-এর আগে সান্টা ক্লজের অতি পরিচিত এই লাল রঙের সাথে সাদা বর্ডার দেয়া কস্টিউমটা ছিল না। লোকজন যে যেভাবে খুশি সান্টা'র পোশাক বানাতো, সবুজ-নীল-হলুদ-বেগুনি-লাল, অর্থাৎ কিনা, সান্টা'র রঙ কি সে নিয়ে কোন ধর্মীয় নির্দেশনা নেই।
পার্পল সান্টা
সবুজ সান্টা
নীল সান্টা
১৯৩১ সালে কোকা-কোলা প্রথমবারের মত তাদের থিম এবং পানীয়ের রঙের সাথে মিলিয়ে লাল পোশাকে সাদা বর্ডার দেয়া সান্টা ক্লজ উপস্থাপন করে, এবং কোক আর সান্টার জনপ্রিয়তা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়ে সেই সান্টা ক্লজ-ই আস্তে আস্তে সব জায়গায় চালু হয়ে যায়।
চিরচেনা কোকা-কোলার লাল সান্টা
কোকা-কোলা অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের বিপণনকারী, সান্টা'র এই ব্যাপারটা যে তারাই প্রথম চালু করেছে সেটার কথা তাদের ওয়েবসাইটে থাকলেও সহজে কোথাও তারা বলে না, ঢোল পেটানো তো দূরে থাক। আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে ব্যাপারটা উঠে গেছে, এখন সান্টা ক্লজ দেখলেই কোক আর কোক দেখলেই সান্টা, একের সাথে অপরকে চমৎকার মানিয়ে যায়। ব্যাপারটাকে বলা হয় "কালার সাইকোলজি", এর এত সার্থক প্রয়োগ আর কোথাও হয়েছে কিনা জানা নেই।
রূহ আফজা'র বিজ্ঞাপন দেখলে মনে হয় এরপর থেকে আর খুব একটা খারাপ লাগবে না, তাই না?
CreAds স্টেশনারিজ
Fedex
Sky Cinema HD
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন