ঢাকা
মোশাররফ হোসেনের উত্তেজনায় সারা শরীর কাঁপছে। আজ ২০ অক্টোবর। আগামীকাল ২১ অক্টোবর। আগামীকাল মোশাররফ বাড়ি যাবে। নড়াইল জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে তার বাড়ি। ঢাকার বনানী মিউনিসিপ্যালটি মার্কেটে একটা ছোট টেইলারের দোকান তার। ঈদে প্রচন্ড ব্যস্ততায় বাড়ি যেতে পারেননি এবার। অথচ ঈদের মাত্র ৭ দিন আগে মোশাররফের একটা মেয়ে হয়েছে। মেয়ের নাম জবা। জবা তারই দেয়া নাম। জবা আর জবার মা শিউলিকে দেখবার জন্য মোশাররফের মনটা ছটফট করেছে পুরোটা সময়জুড়ে। মেয়ের জন্য যে কত কিছু কিনেছেন তিনি। চুড়ি, দুধ, টিপ, ছোট ছোট প্যান্ট এমনকি বেঁচে যাওয়া কাপড় থেকে জামাও বানিয়েছেন অনেকগুলো। মেয়েকে প্রথমবার দেখে কি করবেন ভাবতে ভাবতে মোশাররফের চোখে পানি চলে আসে।
নাটোর
সোলায়মান সাহেবের মন খারাপ। ঈদের ছুটি শেষ। গ্রামের বাড়িতে থাকবার মুহুর্তগুলো কিভাবে কখন শেষ হয়ে যায় টেরই পান না। অনেকদিন ধরে ঢাকায় ব্যবসা করছেন। পরিবার-পরিজন সাথে নিয়ে কুলাতে পারেন না। বছরে ৩-৪ বার আসেন। এর মাঝেই তিল তিল করে জমানো টাকা দিয়ে নাটোর পৌরসভার ২নং ইউনিয়নে একটা আধাপাকা দালান তুলছেন কোনমতে। একমাত্র ছেলেটাকে পলিট্যাকনিকে ভর্তি করিয়েছেন। মেয়েটা মাত্র স্কুলে পড়ে। আসার আগে আগে আজ ছেলেটাকে বকাঝকা করেছেন। রাত করে বাড়ি ফেরাতে তাদের উদ্বেগের শেষ নেই, কিন্তু ছেলের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। ছেলেকে সকালবেলা আচ্ছা করে বকে দিয়েছেন, কিন্তু এখন বাসে উঠে মনটা খুব খারাপ লাগছে। ছেলেটা তার খারাপ না, একটু বেশি আড্ডা দেয় এই আর কি। মানুষের ছেলে-পেলেরা তো নেশা-টেশা আরও কত কি করে। সেদিক দিয়ে তার ছেলের কোন বাজে অভ্যাস নেই। আবার কবে নাটোর আসবেন, ছেলেটাকে আদর করে দেবেন, মনটা শান্ত হবে - ভেবে কুল কিনারা পান না সোলায়মান সাহেব। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে তার।
আয়না
শিউলি আজ খুব করে সেজেছে। আয়নার সামনে বসে নিজের দিকে তাকায় সে। শিউলির গায়ের রঙ চাপা, লম্বা চুল। মেয়েমানুষের বাচ্চা হলে নাকি মোটা হয়ে যায়, শিউলির কিছুই হয়নি, আগের মতোই আছে। নিজের দিকে নিজেই খানিকটা মুগ্ধ হয়ে তাকায় শিউলি। বিয়ের আগে বাপের বাড়িতে গায়ের রঙ কালো হওয়াতে অনেক কথা শুনেছে, কিন্তু তার নিজের মানুষটা তার গায়ের রঙটাই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে, তাকে আদর করে ডাকে পরী বউ। বিছানায় জবা শুয়ে আছে চুপচাপ। কতদিন পরে যে মানুষটাকে দেখবে শিউলি। যতবারই মানুষটাকে দেখে শিউলির ইচ্ছে করে তার গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে, কিন্তু পারেনা লজ্জায়। এবার আয়নার দিকে তাকিয়ে প্রতিজ্ঞা করে যা হয় হোক, এবার লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে জবার বাপের গায়ের ওপর সে ঝাঁপিয়ে পড়বে তো পড়বেই, যে যাই ভাবুক না কেন। ভাবতেই কেমন শরীরটা শিউরে ওঠে শিউলির, মাথা ঝিমঝিম করে - আর কিছু ভেবে উঠতে পারেনা সে!
পরকাল
"বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নাটোরের বড়াইগ্রামে এক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে।
ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছ আরও অন্তত অর্ধশত যাত্রী। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন যে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনা কবলিত দুটি বাসের একটি গুরুদাসপুর এবং আরেকটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই বিষয়ে বলেন, “এটা হলো রেজির মোড়। রাস্তার বাম দিকে অথৈ পরিবহনে গাড়িটি উল্টে পড়ে আছে। আর কেয়া পরিবহন খাদে পড়ে গেছে। দেখলাম লাশগুলো পড়ে আছ। পিছনের দিকে যাত্রীরা কম আহত হয়েছেন”।"
মোশাররফের আর কখনই জবাকে দেখা হয়নি।
শিউলির আর মোশাররফের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়নি।
জবার আর জানা হয়নি বাবা কি জিনিস।
সোলায়মান সাহেব ছেলেকে কখনই আর বলতে পারেননি তিনি তাকে কত ভালবাসতেন।
ছেলে আর কখনই সোলায়মান সাহেবকে দেখাতে পারেনাই পলিটেকনিকে তার ফলাফল সবার চেয়ে ভাল।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ
দুনিয়া কাঁপানো হুদহুদ ঝড়ে ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ২৩ জন মানুষ মারা যান।
তার দুদিন আগে ঈদের সময়ে বাংলাদেশের এক মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় ২৪ জন মানুষ মারা যান।
তারও দু'সপ্তাহ পর নিরাপদ সড়ক দিবসের আগের দিন বাংলাদেশের নাটোরে সড়ক দূর্ঘটনায় ৪১ জন মানুষ মারা যান।
তবুও শুভ রাত্রি।
শামীম আহমেদ
২২ অক্টোবর ২০১৪
নিকেতন, ঢাকা।
#ShamimAhmedJitu2014
#অদ্ভুত ইঙ্গিত আসে ঈশ্বর থেকে
#একফোঁটা বৃষ্টি হতে যদি