এক
আজ শুক্রবার।
কাল রাতে বাসায় ফিরেছি খানিকটা দেরিতে।
বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
গল্প-সল্প-আলাপ!
রাতে বাসায় এসে স্বভাবসুলভ অভ্যাসে NDTV দেখছিলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র বক্তৃতা Clean India বিষয়ক!
এই ভদ্রলোক চায়ের দোকান চালাতেন।
এই ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পিছনে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন।
এই ভদ্রলোক এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতে কোন দাঙ্গা নেই।
দাঙ্গার আশংকাও দেখতে পাচ্ছিনা তেমন।
এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ভদ্রলোক এবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গান্ধীজীর কথা স্মরণ করে ভারতবাসিকে শপথ করিয়েছেন পরিষ্কার হবার জন্য, পরিষ্কার করবার জন্য।
মোদি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই বলেছেন আগে শৌচালয়, তারপর দেবালয়।
তিনি কাল রাতে বলেছেন ভারতবাসির লজ্জিত হওয়া উচিৎ যে তাদের মা-বোনেরা এখনও খোলা জায়গায় টয়লেট ব্যবহার করেন। তিনি বলেছেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এই লজ্জা থেকে দেশকে মুক্ত হতে হবে।
মোদি সমস্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, করপোরেটদের ডেকে তাদের CSR এর টাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ল্যাট্রিন খাতে ব্যয় করতে অনুরোধ করেছেন।
মোদি ধর্মকে দূরে রেখেছেন। দুই যুগ আগের সাম্প্রদায়িকতার গুরু শান্তি, সম্প্রীতি এবং টয়লেটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
ধন্যবাদ মোদি। আমাদের দেশে অবস্থা ঠিক উল্টো। আমরা সরকারের শীর্ষস্থানীয় কাউকেই গত কিছুদিন ধরে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যভ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পাচ্ছিনা!
দুই
লতিফ সিদ্দিকী এবার ফেঁসে গেছেন। তার নানা কর্মকান্ড অনেকদিন ধরেই বিতর্কের জন্ম দিচ্ছিল কিন্তু অবশেষে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবার কারণে তার মন্ত্রীত্ব গেল। অনেকে বলছেন দুর্নীতির কারণে চাকরি যায় না, ধর্মের কারণে যায়।
কথা সত্য। কারণ হেফাজতে ইসলামির আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ, সারা দেশে লক্ষ লক্ষ গাছ নিধন এবং হাজার হাজার মানুষ হত্যা একটি সরকারকে এই বিষয়েই সতর্ক করবে - এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের মন্ত্রীরা যখন ১ লক্ষ টাকার নিচে ঘুষ নেই না বলেন, দেশের সবাইকে GPA 5 পাইয়ে আকাশে তোলেন তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নব্বই শতাংশ ফেল করে বোঝে তাদের আগা শক্ত কিন্তু গোড়া নরম - তখন আমরা কেউ প্রতিবাদ করিনা, মাঠে নামিনা, তাই সরকারও ওসব বিষয়ে গা করেনা। শিক্ষা হচ্ছে আমাদের অন্যায়ের মৌলিক বিষয়গুলোতে আরও প্রতিবাদী হতে হবে।
আপনার এলাকায় পানি, স্যানিটেশন না থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ, পরিষদের সদস্য, উপজেলা পরিষদের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরুন। ঢাকা শহরে রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা তারপরও কখনও আপনার ভোটে নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনারকে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন? ঢাকা শহরে কেন ১ যুগ ধরে কোন নির্বাচিত মেয়র নেই সেই প্রশ্ন করেছেন?
করতে হবে।
না হলে ধর্ম এবং তার প্রতিক্রিয়াতেই সরকার ব্যস্ত থাকবে। উন্নয়নে নয়।
তিন
লতিফ সিদ্দিকী'র বিতর্কিত মন্তব্য আমাকে যতনা ব্যথিত করেছে তার চাইতে বেশি ব্যথিত করেছে তার প্রতিক্রিয়ায় যখন কিছু উন্নত বুদ্ধিবৃত্তির বন্ধুরা তাকে হজ্জ্ব এবং হযরত মুহম্মদ (সাঃ) নিয়ে মন্তব্য করায় বীরের খেতাব দিচ্ছেন।
বন্ধুরা, এটা ঠিক না!
কেউ কেউ আবার বলছেন এ দেশে প্রতিমা ভাংচুর হলে কিছু হয় না হজ্জ্ব নিয়ে বক্তব্য দিলে অনেক কিছু হয়!
এই তুলনাগুলোও ঠিক নয়। আমি আমার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে প্রতিমা-মূর্তি ভাঙলে খুশী হতে দেখিনি। আমি দেখিনি আমার কোন বন্ধু (মুসলমান কিংবা অন্য ধর্মালম্বী) ফেইসবুকে মূর্তি ভাঙ্গার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন কিংবা যারা মূর্তি ভাঙছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমার বন্ধুদের মধ্যে একজনও না। ভবিষ্যতেও কেউ যদি করেন, আমার বন্ধুত্ব হারাবেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমারই বন্ধুদের (মুসলমান এবং অন্য ধর্মালম্বী) অনেককেই দেখেছি লতিফ সিদ্দিকি'কে তার বক্তব্যের জন্য বাহবা দিচ্ছেন, নায়ক বানাচ্ছেন। আপনাদের বক্তব্য দিয়ে আপনারা লতিফ সিদ্দিকিকে তো আঘাত দিতে পারছেন না, আহত করছেন আপনার বন্ধুদের। কেন ভাই নবী করিম ছাড়া, হজ্জ্ব ছাড়া আপনাদের উর্বর মস্তিষ্ক দেশের রাস্তাঘাট-শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য-খাত নিদেনপক্ষে পানি, টয়লেট এবং মেয়েদের ঋতুকালীন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নকল্পে ব্যয় করতে পারেন না?
চার
আমার অনেক মুসলমান বান্ধবী-ই কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেয় কিভাবে শারদীয় পূজা উদযাপন করবে। তারা ঘিয়ে রঙের লাল পাড়ের শাড়ি কেনে, টিপ দিয়ে পূজামন্ডপে যায়।
এই হচ্ছে রঙিন বাংলাদেশ।
ভালবাসার বাংলাদেশ।
সেই বান্ধীদের আবার যদি জিজ্ঞেস করি ঈদের কি প্ল্যান তারা বলবে - ঘুমাব।
I hate blood and killing animals!
এই হচ্ছে বাংলাদেশ।
নিশ্চিতভাবেই অনেক সহনশীল এবং উতসবমুখর।
এই শান্ত, নিরিবিলি সম্প্রীতির দেশটিকে অহেতুক উস্কে দেবেন না।
তারপরও এই দেশে অঘটন ঘটে।
তার প্রতিবাদ করি।
যেকোন মন্ডপে মূর্তি-প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদ করি।
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন সকল ধর্মের মানুষকে তার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ দিতে হবে।
নবী করিম (সাঃ), হজ্জ্ব নিয়ে যে কোন বিতর্কিত মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
পাঁচ
গতকাল বিকেলে অফিস থেকে আসার সময় সহকর্মীদের আড্ডায় ঢুকে বললাম, "তো এবার কোরবানীতে কে কি আত্মত্যাগ করছেন? হিংসা, লোভ, সমালোচনা, মিথ্যা, পরনিন্দা, পরচর্চা?"
ছয়
সনাতন ধর্মালম্বী সকল বন্ধুদের শারদীয় শুভেচ্ছা।
আনন্দে ভরপুর হোক উৎসবের মুহুর্তগূলো।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হোক আমাদের বাংলাদেশ।
আসুন সবার জন্য একশত ভাগ পানি, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করি।
উঠতি মেয়েদের মাসিকের সময় স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করা এবং উপযুক্ত ল্যাট্রিন এবং সুলভ-স্বাস্থ্যকর প্যাডের ব্যবস্থা করি।
ঈদ মোবারক
#ShamimAhmedJitu2014