গল্প এক
প্রতীকের বয়স পঁচিশও হতে পারে, বত্রিশও হতে পারে। তবে চব্বিশের নীচে না, আবার তেত্রিশের বেশিও না। গল্পের নায়কের বয়স তো আর যেমন তেমন হতে পারে না। নায়ক হবে টগবগে, তারুণ্যে ভরপুর, ঝলমলে-উচ্ছ্বল, স্বচ্ছল, সুন্দরী পরিবেষ্টিত!
দূর্ভাগ্যজনক হলেও বয়স ছাড়া আর কোন কিছুই আমাদের গল্পের নায়ক প্রতীকের নেই। তাকে নায়ক বলা যায় কিনা সে বিতর্কও বোদ্ধারা করতে পারেন, আমরা সেই বিতর্কে যাব না। প্রতীক তার বিধবা মা’কে নিয়ে বাসাবো’র একটা পুরনো দোতলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় থাকে। বাড়িটি দোতলাই তবে অন্য নায়কদের মতো প্রতীকদের বাসার সামনে ছোট একটা খোলা ছাদ নেই, চারিদিকে সুউচ্চ ভবনে ঢাকা, তাদের তাই কখনও বাইরে আকাশের দিকে তাকানো হয় না। প্রতীক কি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে কি না তা অনেক চেষ্টা করেও আমরা জানতে পারিনি। ওদের সংসার কিভাবে চলে তাও আমরা জানিনা, তবে এতটুকু জানি ওদের দু’জনের সংসারটা বেশ চলে যাচ্ছে।
প্রতীক চাকরি খুঁজছে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা খুলে চাকরি খোঁজা এখন প্রতীকের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। চাকরি খুঁজে, ইন্টারভিউ দিয়ে, চাকরি না ফিরে বাসায় এসে আবার একই চক্রে ঘুরতে ঘুরতে প্রতীকের দিনগুলি কিন্তু খারাপ কাটছিল না।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতে ঘুমুবার আগে একটা চমৎকার বিদেশি কোম্পানীতে চাকরি করবার স্বপ্ন দেখে প্রতীক, মনে হয় আহারে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার আট নম্বর পাতায় অমন একটা চাকরির বিজ্ঞাপন যদি পাওয়া যেত! তারপর হালের নায়িকা দিশানের মতো কাউকে নিয়ে সে ধানমন্ডির কোন একটা চকচকে কফি শপে বসে কফি খেত বিন্দাস!
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে প্রতীকের জীবন বদলে যায়। সে দেখে তার স্বপ্নে দেখা চাকরির বিজ্ঞাপন পত্রিকার পাতায়। বিকেলে দেখা হয়ে যায় কফি শপে দিশানের সাথে একই টেবিলে বসে! তারপর ঘটনার মোড় দ্রুত ঘুরতে থাকে। প্রতীকের কল্পনার সবকিছু বাস্তবের রূপ নিতে থাকে অলৌকিকভাবে! জীবনের
এই অভাবিত পরিবর্তনে বিহ্বল হয়ে যায় প্রতীক।
এর পর কি হয় ওর জীবনে?
গল্প দুই
তমা আর রায়ানের প্রথম দেখা হয় শ্যাওড়াপাড়ার কাছের হাসান পেট্রল পাম্পের সামনে। এখানে সহজে সিএনজি পাওয়া যায়, অন্ততপক্ষে মিরপুরের অন্য যে কোন জায়গার চাইতে সহজে।
তমা আর রায়ানের দ্বিতীয় দেখা বনানীর প্রবেশমুখে, আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে বনানী কাকলীর কাছের ট্রাফিক জ্যামে।
তমা আর রায়ানের তৃতীয় দেখা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে – একটি দেশীয় বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের হঠাৎ ঘোষিত ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করবার সময়।
রায়ান আর তমার এই প্রথম তিনবার দেখা হয় মাত্র আড়াই ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে!
ওদের চতুর্থ দেখা থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, পঞ্চম দেখা পাতায়ার নির্জন বীচে এক নিরালা সন্ধায়; এরপর থেকে তাদের দেখা হতেই থাকে।
তমা আর রায়ানের চতুর্থ আর শততমবার দেখা হবার মাঝে ব্যবধান একসপ্তাহেরও কম সময়ের!
রায়ান আর তমার কি একশ একবার দেখা হয়েছিল? তারা কি একসাথে ফিরেছিল পাতায়া থেকে ঢাকাতে? এতবার যে দেখা; ওদের কি কখনও নিজেদের মাঝে কথা হয়েছিল? ওরা কি পূর্বপরিচিত ছিল?
ওদের কি ভালবাসা হয়েছিল? ঘৃণা? বিয়ে? বিচ্ছেদ? প্রেম!
আমরা এখনও জানি না।
এ দু’টি গল্পেরই পরিণতি জানা যাবে ২০১৫ বইমেলায় প্রকাশিতব্য শামীম আহমেদ এর গল্পগ্রন্থ অদ্ভুত ইঙ্গিত আসে ঈশ্বর থেকে'র পাতায় পাতায়!
কিংবা হয়ত জানা যাবেনা! কে জানে!
শুভ সকাল
১৯ অগাস্ট ২০১৪
https://www.facebook.com/shamimahmedjitu