somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসার কাজের মানুষ এবার মানুষ হোক!

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

আজকে থেকে কোটি কোটি বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া আর কিছু ছিল না এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন নিয়েই আমরা বেজায় খুশী ছিলাম। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে 'মুভি অফ দ্যা উইক' হতো আর আমরা সারা সপ্তাহ তার অপেক্ষায় থাকতাম। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই মিলে সেই সাদা-কাল চলচ্চিত্র দেখা। আমার পছন্দের ছবি ছিল বিমান অথবা জাহাজ সংক্রান্ত যেগুলো সেগুলো। সারা সপ্তাহ দোয়া করতাম যাতে এই সপ্তাহে একটা জাহাজ কিংবা বিমান নিয়ে মুভি হয়।

দুই

এমনই এক বৃহস্পতিবার আমার দোয়া কাজে লাগল। জাহাজ নিয়ে মুভি, Wow! সবাই মিলে জাঁকিয়ে বসেছি মুভি দেখবার জন্য। আমার আব্বা সেই মুহুর্তে বাসার কাজের ছেলেকে ডাকতে গেলেন যাতে আমাদের সাথে মুভি দেখতে বসে। আমাদের বয়স তখন ৮-১০ বছর হবে। আমরা বাবার এহেন অবিবেচকের মতন কান্ডে নেহাত বিরক্ত। বাসার কাজের ছেলের 'মুভি অফ দ্যা উইক' দেখতে হবে কেন? কাজের ছেলে থাকবে কাজের ছেলের মত। আমরা প্রতিবাদ জানালাম তীব্রভাবে। আমাদের আব্বা তার রিএক্ট করলেন আরও তীব্রভাবে। বললেন কারও মুভি দেখার দরকার নাই। সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন।

তিন

আজকে অফিসের কাজকর্ম শেষে রাতের খানা খেতে গেছি চট্টগ্রামের একটি অভিজাত রেস্তরার ছাদে! কিছুক্ষণ পর একটি অত্যন্ত অভিজাত সম্ভ্রান্ত পরিবারের ১৪ জন সদস্য আসলেন খানা খেতে। তারা খেতে বসলেন - কতরকম যে উপাদেয় খাবার দাবার আসল। আস্ত মাছ-মুরগী কত কি! হঠাৎ খেয়াল করলাম তাদের পিছে একটা টেবিলে বাসার কাজের মেয়েটি একাকী বসে আছে। আমি নিশ্চিত ওদের সবার খাবার বিল ২০,০০০টাকার নীচে হবে না। যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হবে তাতেই অমন ১০টা কাজের মেয়ের খাবার হয়ে যায়, তবু তারা রেস্তরায় মেয়েটিকে খাবার দিল না। মেয়েটি পুরো সময় মানুষের চাইতে অনেক নীচু জাতের কোন প্রাণীর অবস্থান নিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকল।

চার

আমার আব্বার সাথে সেই ঘটনার পর লক্ষ লক্ষ বছর পার হয়ে গেছে। Maturity বেড়েছে আরও যুগখানেক আগে। মানুষ যে মানুষ সেটা বুঝতে শিখে গেছি। আরও বুঝেছি মানুষের মর্যাদা কোথা থেকে আসে। আপনার বাসার কাজের মানুষটিকে মাছের লেজটি, অথবার মুরগীর ডানা, গলা দিয়ে আপনি নিজেই কিভাবে পশুর শ্রেণীতে নেমে যাচ্ছেন একটু খেয়াল করে দেখবেন প্লিজ। একজন মানুষের শুধু শাকসব্জি খেয়ে বেঁচে থাকতে কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু আপনি তাকে বঞ্চিত করে মানুষ থাকতে পারেন না কিছুতেই। কাজের মানুষটিকে খাবার কষ্ট দিয়ে, প্রচন্ড গরমের মধ্যে ফ্যান চালাতে না দিয়ে, প্রচন্ড মশার মধ্যে মশারী দিয়ে ঘুমুতে না দিয়ে আপনি নিজেকে কোন স্তরে নামান নিজেই একান্তে একটু চিন্তা করুন।

পাঁচ

আপনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন, রোযা রাখতে পারেন, হজ্বও করতে পারেন কিন্তু বাসার কাজের মানুষটিকে নির্যাতন করলে আপনার ধর্মের ওসব ওজনদার কাজ-কর্ম কোন কাজে আসবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অন্যদিকে কোন মানুষ হয়ত ধর্মের মূল বিষয়গুলো পালন করছে না ঠিকঠাক মতো কিন্তু মানুষকে মানুষের যথাযোগ্য মর্যাদা দিচ্ছে, সে আপনার আমার চাইতে অনেক ভাল অবস্থানে থাকবেন আমি নিঃসন্দেহ।

ছয়

যে পরিবারটি আজ ছোট বাচ্চাদের সামনে কাজের মেয়েটির প্রতি অবিচার করল তারা প্রকারান্তে কিছু শিশুর ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল। এই বাচ্চাগুলো কতটুকু সুনাগরিক হতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বাসার ছোট ছোট কাজের মানুষগুলোকে দয়া করে প্রাপ্য মর্যাদা দিন। তাদের অধিকার তাদের দিয়ে আপনার হারাবার কিছু নেই উপরন্তু ধর্মীয় এবং মানবিক দুই বিচারেই আপনি ভাল থাকবেন।

সাত

এত নীতিবাক্যের মধ্যে আমিও আমার দায় স্বীকার করে নেই। আমি নিশ্চিত আমার হাজারখানেক ফেইসবুক ফ্রেন্ডসদের অনেকের বাসায় শিশু, কাজের লোক নির্যাতন হয়। আমার স্ট্যাটাসটি পড়ে আমার ওপর বিরক্ত হবেন না প্লিজ। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন এবং আপনার পরিবারে আপনার অবস্থান যাই হোক না কেন, আপনার বয়স যাই হোক না কেন - আপনি আপনার যুক্তি, ধৈর্য এবং নৈতিকতা দিয়ে আপনার কাজের মানুষটির পক্ষে দাড়ান। আমি বাজি দিয়ে বলতে পারি দিনের শেষে মানুষ হিসেবে আপনি অনেক ভাল অনুভব করবেন।

আমার এই স্ট্যাটাস পড়ে যদি কারও বাসার একটি কাজের মানুষেরও ভাগ্যের উন্নয়ন হয় তাহলে নিজেকে সার্থক মনে করব।

শামীম আহমেদ
১৩ অগাস্ট ২০১৪
চট্টগ্রাম।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×