প্রাচীনকালে বিয়া-শাদি'র খানা-দানা হইতো এলাহী কারবার। তখন এখনকার মতো বিয়াতে ১০ টা প্রোগ্রাম, জন্মদিনে ১০টা প্রোগ্রাম, মুসলমানিতে ১০টা প্রোগ্রাম, বাচ্চা পেটে আসলে ১০টা প্রোগ্রাম, বাচ্চা হওয়ার পর ১০টা প্রোগ্রাম, নাম রাখার পর ১০টা প্রোগ্রাম, প্রতি ক্লাসে সারা বাংলাদেশে আরও সাড়ে ৩ লক্ষ বাচ্চার সাথে ক্লাসে ফার্স্ট হইলে ১০টা প্রোগ্রাম ছিল না। আমার এক বন্ধু বউ আবার তার সাথে ডিভোর্সের পর যে টাকা পয়সা পাইসে সেটা সাবেক স্বামীরই বন্ধুদের নিয়ে থাইল্যান্ডে ঘুরায় খাওয়ায় শেষ করছে
সুতরাং আগের দিনে বিয়ার খানা-দানা হইতো বিন্দাস, আনলিমিটেড প্যাকেজ - এখনকার মতো একটা রোস্ট, একটা ফিরনি প্লেটের সামনে রাইখা যাইতো না বয়-বেয়ারারা। সবাই কবজি ডুবায়ে গ্রামের মাঠের মধ্যে প্যান্ডেলের নীচে সিল্কের শাড়ি, সিল্কের পাঞ্জাবিতে ঘামে জব-জব করে গলা পর্যন্ত খাইত। সাথে থাকত বাচ্চা-কাচ্চা। খাওয়ার মধ্যে বেশি ডিস্টার্ব করলে বাচ্চাকে খাসির রেজালা মাখানো হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে থাবড়া দিয়ে বাবা-মা আবার খানা-পিনায় মন দিতেন - কোন টেনশন ছিলনা।
খানা দানার পর মহিলারা বাচ্চাদের জামাইর কাছে গচ্চা দিয়ে হাওয়েলির অভ্যন্তরে যেয়ে শাড়ির আঁচল বুক থেকে খসিয়ে, ভরদুপুরে বিছানার ওপর একত্রে মিলে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়তেন দেদারসে। তারপর শুরু হতো হাওয়েলিতে উপস্থিত নেই এমন বাকি সব মহিলার চরিত্র হনন এবং গীবতের বেহেশস্তখানা। এদিকে দুপুরের গলা পর্যন্ত খাবার শুয়ে পড়লেও জায়গা করে উঠতে পারেনা ছেড়ে দেয়া শরীরে। মহিলারা হাঁসফাঁস করে, তাদের বুক ওঠা-নামা করে নিরন্তর। বয়স্ক নানি-দাদিরা তখন অপেক্ষাকৃত কম বয়েসি মেয়েছেলেদের পরামর্শ দেয় ব্লাউজের ওপর থেকে দু'টো বোতাম খুলে দিতে - তাহলে নাকি হাঁসফাঁস কমে - শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারে দু'দন্ড [এই দন্ড সেই দন্ড না রে ভাই! খালি আজে-বাজে চিন্তা আপনাদের!]।
বাকিটুকু ইতিহাস। আজকে দুপুরে খানা খাইতে গেসিলাম চট্টলার বিখ্যাত বনেদি রেস্তোরা Ambrosiaয়। বাঙ্গালির বাফে খাবার অভিজ্ঞতা সুবিধার না। তিন কোর্সের মিলে প্রথম অংশটা বেশ ভাল যায়। পূর্বপুরুষ কৃষক হওয়া সত্বেও কোলের ওপর আলতো করে রুমাল রেখে কাঁটা চামচ গোল চামচ ছুরি চামচ মিলিয়ে নানা কসরত করে স্যুপটা বেশ তারিয়ে তারিয়ে খাওয়া যায় বটে কিন্তু তারপরই বাধে গোলমাল। মূল কোর্সের সিকি ভাগ খেতে না খেতেই পেট ভরে আসে, চোখে নামে ঘুম, আর নিজের অজান্তেই পিঠ খুঁজতে থাকে চেয়ারের পিছের অংশ। দ্বিতীয় সিকি অংশ খেতে হয় চোখের ক্ষিদায়, ঠেসে-ঠুসে। তারপর আসল মজা। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত অতীত ইতিহাসের কারণে টাকা উসুল করার ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বাঙ্গালী আরও এক সিকি খেয়ে নেয় জোর করে, শেষ সিকিটা আর পেরে ওঠেনা। ওই সিকিতেই লাভ তুলে নেয় বাফেওয়ালারা।
যাইহোক বিন্দাস বাফে খেয়ে হাঁসফাঁস লাগে। ছেলেদের তো আর ব্লাউজ নাই যে দুটো বোতাম খুলে সামলে নেব, আর তাদের হাঁসফাঁসটাও হয় খানিকটা নীচে। হাত দিয়ে দেখি সেখানে তো বেশ ক'টা বোতাম আছে। খুলি খুলি করছি এমন সময় মনে পড়ল আরে এতো উস্তাদ সালাউদ্দিন কাদের চৌ'র এলাকা। বোতাম তা ব্লাউজ কিংবা প্যান্তালুন যেটারই হোক না কেন, খুলবার প্যাটেন্ট রাইট তো উস্তাদ করে নিয়েছে সেই ৭১ এ। আমি শুধু শুধু সেইখানে বা-হাত ঢুকিয়ে জিনিসটাই খোয়াই নাকি!
অতঃপর বোতামগুলো অক্ষত রেখেই বেরিয়ে পড়ি বৃষ্টিস্নাত চট্টলার রাস্তায়। পিছে থেকে যায় না-খোলা কত শত বোতামেরা না-জানা কাব্য!
শামীম আহমেদ
জি।ই।সি মোড়
চিটাগাং।
১৮ জুন ২০১৪
https://www.facebook.com/shamimahmedjitu