somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসর্গ হেলেন

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে? কে এলো এত রাতে?
জয়নাল চাচা দেখেন তো কে এলো? চাচা?
সব দেখি ঘুমে পড়ে আছে!
ব্রাশফায়ার করে যেন মেরে রেখে গেছে সবাইকে!
অগত্যা আমাকেই উঠতে হলো!
বাতির সুইচটা কোথায় গেল! এখানেই তো ছিল।
এখন আর কিছুই মনে থাকে না! বার্ধক্য এসে যাচ্ছে!
অথচ আমার বাবাকে কিনা লোকে এখনও জোয়ান মর্দ বলে হাঁকে।
বার্ধক্য তো আর বয়সের মাপে আসে না!
যাক, হাতড়ে হাতড়ে মোমবাতি-দেয়াশলাইটা পেলাম।
খস খস খসাত...
কে?
খোলা দুয়ারে চাঁদের আলোয় আগন্তুকের দীর্ঘ ছায়া
মোমবাতির হালকা আলো আগন্তুকের উপরে ফেলতেই...
চোখে চোখ পড়ল, আর
হাত কেঁপে মোমবাতি পড়ে গেল।
স্তভিত হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ!
‘তুমি?’
বহুদিন পর নিজের কন্ঠে নিজেই চমকে উঠলাম।
শরত শেষে মেঘমুক্ত রাতের আকাশ, তারই
বান ভাঙ্গা চাঁদের আলোয় লীন হয়ে যাওয়া এক পরিচিত অবয়ব
উত্তরীয় হাওয়ায় উড়তে থাকা তার চন্দ্রালোকিত কেশ
আমার বুকের ভিতর সুপ্ত আগ্নেয়গিরিকে প্রজ্বলিত করল আবার।

সেদিনও এভাবেই হাওয়ায় উড়ছিল তার চুল
জলপাই রঙের শাড়িতে সেদিন ক্যাম্পাসে প্রথম দেখা,
এরপর পরিচয়, আড্ডা, ভ্রমণ, ভাললাগা, ভালবাসা।
বুকের ভিতর আমার স্বপ্ন, আমার জনপদ, অনুভূতি সব
বেয়ারা ঘোড়া হয়ে যখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল
মনস্থির করে ছুটে গেলাম তোমার কাছে।
গিয়ে বললাম- ‘তোমাকে ভালবাসার অধিকার চাই।’
আমি তোমাকে বুঝিনি কখনও, বুঝিনি সেদিনও।
যখন বার কয়েক কাঁপা ঠোঁটে কথা জড়িয়ে
অতঃপর আমার চোখে স্থির দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে বললে-
‘তোমার হাতে যত সময় আছে, আমার হাতে তত নেই।
তাই আমি এসবে ভয় পাই। ভাল থেকো।’
তোমার সেদিনের সে নীল রঙের শাড়ির প্রতি কণা নীল
আমার রক্তে মিশে বিষাক্ত করে তুলছিল প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস
যখন তুমি আমাকে কোন প্রত্যুত্তরের সুযোগ না দিয়েই চলে গেলে।
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আমার উপকূলে হানা সুনামির আঘাতে

হঠাতই লন্ডভন্ড অথচ শান্ত করে দিয়ে গেল আমার জনপদ।
আজও কি সেই নীল রঙের শাড়িটি পড়ে এসেছো?
ঠোঁট কি মৃদু কাঁপছে? সে কি!
তোমাকে সাদা-কালো দেখাচ্ছে কেন? নাকি চাঁদের আলোয় দৃষ্টিভ্রম!
স্নিগ্ধতার পরশ মাখা তোমার হাতে ছুঁতে যাব, দেখি-
আমার ভাঁজ পড়া লোমশ চামড়ায় বার্ধক্যের ছাপ
ঝটকা মেরে হাত ফিরিয়ে নিলাম।
আমার দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। আমি দুর্বল নই, ছিলাম না।
আচ্ছা, সত্যি করে বলবে- আমার কি দোষ ছিল?
আমি কি ছিলাম অক্ষম, অযোগ্য?
তোমার চোখে আমি কি তবে ভুল দেখেছিলাম?
বলেছিলে- ভাল থেকো।
ভাল আমি ঠিকই আছি।
জীবনের অর্থ আমি বুঝে গেছি, স্থির-শান্ত এই আমি ভালই আছি।
অনেক কষ্টে তোমার স্মৃতি ভোলা আমি ভালই আছি।
বাঁচার জন্য হেরে গিয়ে আমি ভালই আছি।
তবে কেন আজ আবার তোমার আগমন?
স্মৃতি ভোলা পাল ভাঙ্গা জাহাজীর ভাঙ্গা বাড়িতে
এই মধ্যরাতে, বাইশ বছর পরে, হঠাত কেন এসেছো?
কেন তুমি আসো? কেন তুমি চলে যাও না? কেন?
কেন?
ঝন-ঝনাত
জয়নাল চাচার চিৎকার কানে আসলো- কি হল বাবু?
আবার সেই রোগে ধরেছে? ওখানেই দাঁড়ান, আসছি।
নাহলে ঘুমের ভিতর আরও অনেক কিছুর সাথে ধাক্কা খাবেন।

মধ্যরাত, ১০ অক্টোবর,
ঢাকা

উৎসর্গঃ হেলেন
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্টারের কাচ্চি বিরিয়ানী

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩১



শেষ কবে স্টারের কাচ্চি খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। আগে একটা সময় ছিল যখন কাচ্চির নাম নিলে যে নামগুলো সবার প্রথমে সামনে আসতো তার ভেতরে এই স্টারের নাম থাকতো। এখনকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিনিক চা

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৯



একটা গান আছে- পিনিক পিনিক লাগে।
ফালতু গান। পচা গান। পিনিক নামে একটা বাংলা সিনেমাও হয়েছে। আসলে 'পিনিক' শব্দটির আভিধানিক কোনো অর্থ নেই। সাধারণত নেশাদ্রব্য সেবন করার ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নটীদের আড্ডাখানা ছিল সংসদ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪


বাজারে যত নটী আছে হাসিনা সবগুলোকে একছাদের নিচে দক্ষতার সংগে জমায়েত করতে পেরেছিল। সেই নটীদের ছিলনা কোন যোগ্যতা কিংবা না ছিল কোন রাজনৈতিক ব্যকগ্রাউন্ড; তারপরও নটীরা সংসদে যেতে পেরেছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগঃ প্রকৃতি

লিখেছেন সামিয়া, ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১



কিছুক্ষণ আগে পাতায় পাতায় গড়িয়ে পড়েছে বৃষ্টির ধারা; তার চিহ্ন রয়েছে জমে থাকা পাতার ফোঁটাগুলায়, মাঝে মাঝে নিচে পড়ে গিয়ে ছোট্ট শব্দ তুলছে, বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ, আর দূর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×