নির্বাচনে বাংলাদেশ বরাবরই ৩টি দেশকে মূল্য দিয়ে থাকে- ভারত, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র। সেজন্যে প্রত্যেক দলেরই এই ৩ দেশের সাথে লবিং থাকে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে কুটনৈতিক তৎপরতায় এদের সাপোর্ট পাওয়ার জোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু, এদের মনোভাব কেমন তা কি আমরা জানি?
চীন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি। ১৯৭৫ সালের পর করেছে। সে জন্য বিএনপিপন্থীদের ধারণা হয় চীন বিএনপির অকৃত্রিম বন্ধু। আসলে চীন কখনও কারও অকৃত্রিম বন্ধু হয়নি। বন্ধুত্বের দাম এক সময় দিত সোভিয়েত ইউনিয়ন। পুঁজিবাদী চীন সব রাষ্ট্রেই সমান মনোযোগ দেবে। চীন সুপার পাওয়ার। হ্যা, বাংলাদেশের কৌশলগত মূল্য আছে তার কাছে, তবে চীন উৎসাহী বিনিয়োগে।
ক্ষমতায় যে-ই থাকুক তাতে ভারতের কিছু যায় আসত না শুধু একটাই বিষয়- তার নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুন্ন ও অটুট থাকলেই হত। সব দল ভারতের বন্ধু, সব দলই ভারতের শত্রু। কিন্তু, ভারত আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে তার নিজের স্বার্থেই। (পরে বলছি সে কথা)! কিন্তু, এবারে সে পরিস্থিতি লীগের অতটা অনুকূলে নেই। কেননা, ভারতে আওয়ামী লীগ প্রীতি দেখানো কংগ্রেসের এখন নড়বড়ে অবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বেশ কিছু বলার আছে। গ্রামের ২ বাড়ি কিংবা ২ ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া না বাঁধলে যেমন গাঁয়ের মোড়লের কাছে যাওয়া পড়ে না, মোড়লেও মোড়লগিরি থাকে না, তেমনি যেকোন ২ দেশের মধ্যে বিবাদ না থাকলে এই বিশ্ব মোড়ল দেশটারও মাতব্বরি থাকে না। তাই, মৌলবাদী নিয়ে হাজারবার অভিযোগ করা এই দেশটিই বিশ্বের মৌলবাদীদের পালছে-পুষছে (বড় প্রমান- তালেবান ও পাকিস্তান জামাতে ইসলাম), যাতে এই মৌলবাদীদের দিয়ে কোন দেশের বারোটা বাজাতে পারে এবং মৌলবাদী নির্মূলের অযুহাতে সে দেশে যুদ্ধ করতে পারে।
আমেরিকা বহুদিন ধরে চেষ্টায় আছে ভারত-পাকিস্তান এর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধানোর। অন্যতম কারণ, আমেরিকাকে টেক্কা দিয়ে দ্রুত গতিতে বিশ্ববাজার দখল করতে যাওয়া ভারতকে কব্জায় আনা। যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিবে আমেরিকা, আর ভারতের? চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভাল নয়, তাই সে নাক গলাবে না। রাশিয়ার তো পেটই চলে অস্ত্র বেঁচে, যুদ্ধ-টুদ্ধ বাঁধলেই তো তার লাভ। (তাইতো, বিশ্বের বেশিরভাগ যুদ্ধে কোন না কোনভাবে রাশিয়ার হাত থাকে।) পাকিস্তানের থেকে আগ্নেয়াস্ত্রে ভারত এগিয়ে থাকলেও এসব কারণে যুদ্ধে সে হেরে যাবে। এবং, যুদ্ধও হবে ক্ষণস্থায়ী- কেননা যুদ্ধের সময়ে ১০০ কোটি জনসংখ্যার খাদ্যের চাপে দুর্ভিক্ষে পড়বে সে, মানে ভারতের অর্থনীতি ধ্বংস।
পাকিস্তানকে সাহায্যের জন্যেই আমেরিকা এত বছর ধরে বাংলাদেশের কাছে গভীর সমুদ্র বন্দর চেয়ে আসছে। জামাতের কারণে আমেরিকার সাপোর্টটা বরাবর বিএনপি'র পক্ষেই থাকে। গতবারে বিএনপি সরকারের সময় আমেরিকা অনেক আশায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকার সমুদ্র বন্দর করেনি। আমেরিকার সাপোর্টে ক্ষমতায় আসার জন্য লীগ তখন নির্বাচনী ইশতেহারেই গভীর সমুদ্র বন্দরের কথা বলে বসল। এ খবরে আমেরিকার তখন চক্ষু চড়কগাছ। প্রথমবারের মত আমেরিকা লীগকে সাপোর্ট করে ক্ষমতায় আনল। সবিশেষে লীগ সরকারও ৫ বছরে মূলা ঝুলায় রাখল। এ কারণেই ভারত নিজের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে লীগ পড়ল দোটানায়। ভারত নাকি আমেরিকা? শেষমেশ ইশতেহারে গভীর সমুদ্র বন্দর করার ঘোষণাও দিল, সেই সাথে এও লিখে দিল- 'বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের বিপক্ষে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না'।
তবে, আমেরিকা মনে হয় এবার লীগের সাথে থেকে দ্বিতীয়বার রিস্ক নেবে না। কেননা, এ করে করে আমেরিকার অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে, ওদিকে ভারত এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩ নম্বরে চলে এসেছে।
ভয়ানক হলেও আরও একটি সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না, তা হলো- ইরাক, সিরিয়ার মত আমেরিকার বাংলাদেশে সৈন্য প্রেরণ।
তারানকোর রিপোর্টে সেরকম আভাস কিন্তু আছে। তারানকো জাতিসংঘকে বাংলাদেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে 'প্রয়োজনে জাতিসংঘের সামরিক শক্তি প্রয়োগ' করতে বলেছেন। আর জাতিসংঘ মানেই তো আমেরিকা!