লেখকঃ এরিখ মারিয়া রেমার্ক
দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক অদ্ভুত কিছু চরিত্রের গল্প ।
ওয়ার্ডেনবার্গ শহরের ঠিক বাইরে গীর্জার আশ্রমটা যেন বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন । ওখানে থাকে এক পাগল যার ধারণা তার মাথাটা কাঁচের তৈরী। সবসময় খুব সাবধানে হাঁটাচলা করে সে, ভুলেও মাথা এদিক ওদিক করে না। সেখানে আরও আছে ইসাবেল, দিব্যি সুস্থ এক নারী যার একমাত্র সমস্যা সে নিজের আসল পরিচয় ভুলে গেছে। কখনো সে জেনি, কখনো বা ইসাবেল; অথচ তার আসল নাম জেনেভিব টারোভান। অবশ্য বডমারের মাঝেমাঝে সন্দেহই হয় জেনেভিব কি আসলেই মানসিক রোগী, নাকি ভান করে আছে কেবল?
দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক অদ্ভুত এক সময়ের গল্প ।
কবরের ফলক বিক্রেতা ক্রাল কোম্পানীতে একসাথে তিন পদে চাকরি করা লাডউইগের ইচ্ছা ছিল একটা টাই কিনবে । শুনে মালিক জর্জ একবারে তার বেতন বাড়িয়ে দিলেন দশ হাজার মার্ক! কিন্তু বাজারে যেতে যেতে দেখা গেলো এক ডলারের বিনিময় হার লাফ দিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ছত্রিশ হাজার মার্কে, টাই তো দূরে থাক, দশ হাজার মার্কে একটা রুমালও হয় না ।
১৯২৩ সালের মার্চ মাস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ। জার্মানি পরাজিত, যুদ্ধবিধ্বস্ত, দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কলঙ্কের ভার্সাই চুক্তি। দেশের মেরুদন্ড অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে গেছে পুরোপুরি। রাস্তায় রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল, যুদ্ধফেরত আহত-অঙ্গহীন সৈনিকদের ঢল। দেশে কাজ নেই, খাবার নেই। মুদ্রাস্ফিতী পৌঁছে গেছে অকল্পনীয় অবস্থায়, মানুষ দিনে দুইবার লাখ লাখ জার্মান মার্ক মজুরি পেয়েও একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারছে না, ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করছে। হিটলার পাঁয়তারা করছেন ক্ষমতা দখলের, একের পর এক রক্তগরম করা অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন রেডিওতে । জার্মানিকে তিনি আবার ঢেলে সাজাবেন। চোখে অন্ধকার সাধারণ মানুষ দ্বিধাবিভক্ত। কী করবে তারা?
রেমার্কের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পল বোমার (অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ) আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নায়ক যুদ্ধ ফেরত সৈনিক লাডউইগ বডমার। মাত্র সতেরো বছর ছয় মাস বয়সে তাকে চলে যেতে হয় ফ্রন্টে। চার বছর ট্রেঞ্চে বিভীষিকাময় যুদ্ধ করে কেবল ঈশ্বরের আশীর্বাদেই জীবিত ফিরে আসে দেশে। এসে কাজ নেয় তারই সহযোদ্ধা জর্জের কবরের ফলক বিক্রি করার ক্রাল কোম্পানীতে ।
কোম্পানীতে সে একই সাথে ম্যানেজার, একাউন্ট্যান্ট এবং পাবলিক রিলেশন্স অফিসার। কিন্তু তবুও কেবল বেঁচে থাকার জন্যে তাকে আরও হাজারও ধান্দায় ঘুরে বেড়াতে হয় দিন রাত । সে মুচি কার্ল ব্রিলের চার ছেলে-মেয়েকে পিয়ানো শেখায়, মিঃ বয়ারের মাথামোটা ছেলেকে পড়ায়, গীর্জায় প্রার্থনা সঙ্গীতে বাজায় অর্গান । গীর্জার কাজটা সে করে একমাত্র সপ্তাহে একবেলা ভালো নাস্তা খেতে পাওয়ার জন্যে। ওখানেই তার পরিচয় হয় আত্নবিস্মৃত তরুণী ইসাবেলের সাথে। ইসাবেল তাকে কখনো ডাকে রুডলফ, কখনো বা রলফ্। বডমার জানে ইসাবেল যে কোন দিন সুস্থ হয়ে যেতে পারে এবং সুস্থ হওয়ার পর সে হয়তো বডমারকে আর চিনতেই পারবে না কখনও। তবুও কি সে মনে মনে ইসাবেলকে ভালোবাসে?
বডমারের কাছে ইসাবেল যেমন অপরিচিত একজন, তেমনি অপরিচিত হয়ে যেতে থাকে দেশ জার্মানিও । আবার নেমে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । বডমার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসাবেল, জর্জ, ওয়ার্ডেনবার্গ থেকে । বহুদিন পর যখন যুদ্ধ থামে, বডমার আবার ফিরে আসে নিজ শহরে । কী দেখে সে??
পার্ল এস বাক, হেমিংওয়ে পাশাপাশি এরিখ মারিয়া রেমার্ক বিংশ শতাব্দীর সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক। আমার অন্যতম প্রিয় এ রচয়িতার অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক, থ্রি কমরেডস, স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা সহ কালজয়ী প্রতিটা লেখা পড়ে মুগ্ধ আপনাকে হতে হবেই। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কখনও হাসবেন, কখনও নিজের অজান্তেই চোখ আর্দ্র হয়ে উঠবে ।
আর সেবা প্রকাশনীর সাথে পরিচিত সবার কাছে শেখ আবদুল হাকিমও অতি পরিচিত নাম । রেমার্কের অসাধারণ সৃষ্টি আর তার দুর্দান্ত রুপান্তরে দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক মনে রাখার মতোই এক বই ।
হ্যাপি রিডিং
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৬