somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু প্রিয় বইয়ের রিভিউ ০৬: দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বইয়ের নামঃ দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক
লেখকঃ এরিখ মারিয়া রেমার্ক



দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক অদ্ভুত কিছু চরিত্রের গল্প ।

ওয়ার্ডেনবার্গ শহরের ঠিক বাইরে গীর্জার আশ্রমটা যেন বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন । ওখানে থাকে এক পাগল যার ধারণা তার মাথাটা কাঁচের তৈরী। সবসময় খুব সাবধানে হাঁটাচলা করে সে, ভুলেও মাথা এদিক ওদিক করে না। সেখানে আরও আছে ইসাবেল, দিব্যি সুস্থ এক নারী যার একমাত্র সমস্যা সে নিজের আসল পরিচয় ভুলে গেছে। কখনো সে জেনি, কখনো বা ইসাবেল; অথচ তার আসল নাম জেনেভিব টারোভান। অবশ্য বডমারের মাঝেমাঝে সন্দেহই হয় জেনেভিব কি আসলেই মানসিক রোগী, নাকি ভান করে আছে কেবল?

দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক অদ্ভুত এক সময়ের গল্প ।

কবরের ফলক বিক্রেতা ক্রাল কোম্পানীতে একসাথে তিন পদে চাকরি করা লাডউইগের ইচ্ছা ছিল একটা টাই কিনবে । শুনে মালিক জর্জ একবারে তার বেতন বাড়িয়ে দিলেন দশ হাজার মার্ক! কিন্তু বাজারে যেতে যেতে দেখা গেলো এক ডলারের বিনিময় হার লাফ দিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ছত্রিশ হাজার মার্কে, টাই তো দূরে থাক, দশ হাজার মার্কে একটা রুমালও হয় না ।

১৯২৩ সালের মার্চ মাস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ। জার্মানি পরাজিত, যুদ্ধবিধ্বস্ত, দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কলঙ্কের ভার্সাই চুক্তি। দেশের মেরুদন্ড অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে গেছে পুরোপুরি। রাস্তায় রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল, যুদ্ধফেরত আহত-অঙ্গহীন সৈনিকদের ঢল। দেশে কাজ নেই, খাবার নেই। মুদ্রাস্ফিতী পৌঁছে গেছে অকল্পনীয় অবস্থায়, মানুষ দিনে দুইবার লাখ লাখ জার্মান মার্ক মজুরি পেয়েও একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারছে না, ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করছে। হিটলার পাঁয়তারা করছেন ক্ষমতা দখলের, একের পর এক রক্তগরম করা অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন রেডিওতে । জার্মানিকে তিনি আবার ঢেলে সাজাবেন। চোখে অন্ধকার সাধারণ মানুষ দ্বিধাবিভক্ত। কী করবে তারা?

রেমার্কের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পল বোমার (অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ) আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নায়ক যুদ্ধ ফেরত সৈনিক লাডউইগ বডমার। মাত্র সতেরো বছর ছয় মাস বয়সে তাকে চলে যেতে হয় ফ্রন্টে। চার বছর ট্রেঞ্চে বিভীষিকাময় যুদ্ধ করে কেবল ঈশ্বরের আশীর্বাদেই জীবিত ফিরে আসে দেশে। এসে কাজ নেয় তারই সহযোদ্ধা জর্জের কবরের ফলক বিক্রি করার ক্রাল কোম্পানীতে ।

কোম্পানীতে সে একই সাথে ম্যানেজার, একাউন্ট্যান্ট এবং পাবলিক রিলেশন্স অফিসার। কিন্তু তবুও কেবল বেঁচে থাকার জন্যে তাকে আরও হাজারও ধান্দায় ঘুরে বেড়াতে হয় দিন রাত । সে মুচি কার্ল ব্রিলের চার ছেলে-মেয়েকে পিয়ানো শেখায়, মিঃ বয়ারের মাথামোটা ছেলেকে পড়ায়, গীর্জায় প্রার্থনা সঙ্গীতে বাজায় অর্গান । গীর্জার কাজটা সে করে একমাত্র সপ্তাহে একবেলা ভালো নাস্তা খেতে পাওয়ার জন্যে। ওখানেই তার পরিচয় হয় আত্নবিস্মৃত তরুণী ইসাবেলের সাথে। ইসাবেল তাকে কখনো ডাকে রুডলফ, কখনো বা রলফ্। বডমার জানে ইসাবেল যে কোন দিন সুস্থ হয়ে যেতে পারে এবং সুস্থ হওয়ার পর সে হয়তো বডমারকে আর চিনতেই পারবে না কখনও। তবুও কি সে মনে মনে ইসাবেলকে ভালোবাসে?

বডমারের কাছে ইসাবেল যেমন অপরিচিত একজন, তেমনি অপরিচিত হয়ে যেতে থাকে দেশ জার্মানিও । আবার নেমে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । বডমার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসাবেল, জর্জ, ওয়ার্ডেনবার্গ থেকে । বহুদিন পর যখন যুদ্ধ থামে, বডমার আবার ফিরে আসে নিজ শহরে । কী দেখে সে??

পার্ল এস বাক, হেমিংওয়ে পাশাপাশি এরিখ মারিয়া রেমার্ক বিংশ শতাব্দীর সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক। আমার অন্যতম প্রিয় এ রচয়িতার অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক, থ্রি কমরেডস, স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা সহ কালজয়ী প্রতিটা লেখা পড়ে মুগ্ধ আপনাকে হতে হবেই। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কখনও হাসবেন, কখনও নিজের অজান্তেই চোখ আর্দ্র হয়ে উঠবে ।

আর সেবা প্রকাশনীর সাথে পরিচিত সবার কাছে শেখ আবদুল হাকিমও অতি পরিচিত নাম । রেমার্কের অসাধারণ সৃষ্টি আর তার দুর্দান্ত রুপান্তরে দা ব্ল্যাক অবিলিস্ক মনে রাখার মতোই এক বই ।

হ্যাপি রিডিং :)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৬
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×