বইয়ের নামঃ হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প
অনুবাদঃ দিলওয়ার হাসান
প্রকাশনীঃ মওলা ব্রাদার্স
১৯৭৯ সালে " Here The Wind Sings " দিয়ে আত্নপ্রকাশ করা জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামি এখন সারা বিশ্ব জুড়ে অতি পরিচিত এক নাম । নিজ দেশে তো বটেই, পুরো পৃথিবীর পাঠকদের কাছেই তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় । বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে তার সাহিত্য কর্ম, পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার, তার একাধিক গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র । আমার ধারনা তিনি অচিরেই সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারও পেতে যাচ্ছেন ।
জাপানি লেখকদের মধ্যে ইউকিও মিশিমা ব্যাতীত অন্য কারও নামই যেখানে শোনা যায় না, সেখানে মুরাকামি কিভাবে এতো সুপরিচিত হয়ে উঠলেন?
নিঃসন্দেহে তার রচনার বিষয়বস্তু এবং অতি সাধারণ ঘটনা বা চিন্তাকে বাস্তব ও ফ্যান্টাসির মিশেলে উপস্থাপন করার দুর্দান্ত ক্ষমতার জন্যে । তার লেখার সম্বন্ধে সমালোচকরা বলেন - " Simple yet profoundly complex " . আর নিজের ব্যাপারে তার নিজের মূল্যায়ণ হলো - " I like horror films, Stephen King, Raymond Chandler, detective stories. I don't want to write those things. What I want to do is use those structure, not the content. I like to put my content is this structure. That's my way, my style.... "
সেজন্যেই তার প্রতিটা গল্প বাস্তব আর পরাবাস্তবের মিশেলে ধাক্কা খাওয়ার মতো, যেখানে চরিত্ররা মুখোমুখি হয় অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনার । " ব্যাঙ বাঁচালো টোকিও " গল্পটার কথাই প্রথমে বলি । টোকিওর ট্রাস্ট ব্যাংকের মাঝবয়সী কর্মকর্তা কাটাগিরি এক রাতে নিজের অপার্টম্যান্টে ঢুকে দেখতে পান তার ঘরে বসে আছে ছয় ফুট লম্বা স্বাস্থ্যবান এক ব্যাঙ । ব্যাঙ ঐ ব্যাংক কর্মকর্তাকে গম্ভীর গলায় জানায় টোকিও শহর বিশাল এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে ধ্বংস হয়ে যাবে কয়েকদিন পর । ধ্বংস ঠেকানোর একমাত্র উপায় হলো সেই ব্যাঙের জীবন বাজি রেখে পাতালে নেমে ভয়াবহ এক লড়াইয়ে নামা । সে লড়াইয়ে নামতে রাজি, কিন্তু তার ব্যাংক কর্মকর্তা কাটাগিরির সাহায্য দরকার । " কিডনি আকৃতির এক পাথর যেটি রোজই চলাফেরা করে " গল্পের কাহিনী কোন এক হাসপাতালে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া এক পাথরকে নিয়ে, যে পাথর চলাফেরা করতে পারে । আবার কোন গল্প সুন্দরী এক তরুনীর সাথে হোটেলের লবিতে দেখা হয়ে যায় তুষার মানবের। তুষারমানব সেখানে বসে একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলেন। তার আঙুলগুলো সাদা তুষারে ঘেরা, মাথার চুলে ছোপ ছোপ সাদা দাগ - যেন গলে না যাওয়া বরফ । তরুনী তুষার মানবের প্রেমে পড়ে যায় এবং তাদের বিয়ে হয় । সামনে গ্রীষ্ম । তরুনী ভয় পায় সূর্যের উত্তাপে তুষার মানব গলে যাবে না তো আবার? তাদের সন্তানেরা কি হবে? সাধারণ মানুষ, নাকি তুষার মানব? তারা বেড়াতে যায় দক্ষিন মেরুতে কি ঘটে তারপর?? আবার " বেকারিতে হামলা " গল্পে একদল ক্ষুধার্ত মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় পেটের ক্ষুধা মেটাতে বেকারিতে হামলা করে বেকারির মালিককে খুন করে ইচ্ছামতো রুটি লুট করে নিজেদের জীবন বাঁচানো । বাম্তবে দেখা গেলো খুনের হুমকির কথা শোনার আগেই বেকারির মালিক তাদের এমনিতেই যতো খুশী রুটি নিয়ে যেতে দিতে রাজি আছেন এক শর্তে । সে শর্ত অদ্ভুত এক শর্ত, হামলাকারীদের তার পছন্দের একটা গান শুনতে হবে । হামলাকারীরা ঐ গান শোনে এবং অভিশপ্ত হয়ে যায়, চিরতরে বদলে যায় তাদের জীবন । কিভাবে? ..... সে অদ্ভুত অভিশাপ কাটাতে বহু বছর পর হামলাকারীদের একজন আবার সিদ্ধান্ত নেয় বেকারিতে হামলা করার, তা নিয়ে আরেক গল্প ।
মুরাকামি মূলত উপন্যাসিক হলেও বেশ কিছু গল্পও লিখেছেন । তার রচিত দুই গল্প গ্রন্থ থেকে বাছাই করে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ১৫ টি গল্প নিয়ে দেশের প্রবীন ও সুপরিচিত সাংবাদিক দিলওয়ার হাসানের প্রাঞ্জল অনুবাদে এ বই । প্রতিটা গল্পের ভেতরেই যেন লুকিয়ে আছে পাঠককে ভাবানোর মতো আরেকটা গল্প, যার অর্থ বুঝতে হলে আপনাকে পূর্ন মনোযোগ দিয়ে এবং সময় নিয়ে অনুধাবন করে করে পড়ার মানসিকতা সহ মুরাকামি সাহেবকে নিয়ে বসতে হবে ।
হারুকি মুরাকামির রচনার বিষয়বস্তু আধুনিক যুগের বিচ্ছিন্ন, লক্ষ্যহীন মানুষের জীবন, চিন্তা । একটু খটমটে মনে হচ্ছে কি? নিশ্চিন্ত থাকুন মোটেও তা নয় । মুরাকামির লেখার ধরনের সাথে নিঃসন্দেহে ফ্রানৎস কাফকার ছায়া বিদ্যমান । তবে পার্থক্য এখানেই যে, মুরাকামির রচনা সাধারণ পাঠকের কাছে কাফকার রচনার মতো দুর্বোধ্য ঠেকবে না ।
বইটি সংগ্রহ করতে পারেন এখান থেকে - http://rokomari.com/book/7487 . আশা করি এ গল্প সংকলনটি আপনার কাছে ভালো লাগার চেয়েও বেশী কিছু লাগবে ।
হ্যাপি রিডিং
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬