১
মামার বাড়িতে একবার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচ হয়েছিলো। জার্সিবিহীন প্রীতি ম্যাচ। যে যার খুশিমত পোষাক পরার প্রীতি ম্যাচ। কেউ শার্ট পরে, কেউ টি-শার্ট পরে, কেউ বা খালি গায়ে...
আমি ছিলাম রেফারি।
নিরপেক্ষ রেফারি।
ব্রাজিল দলের সবাই মানলেও আর্জেন্টিনা দলের কয়েকজন সেটা মানতে নারাজ। কেন না আমি হলাম ব্রাজিলের একজন কট্টর সমর্থক। তাদের দাবী আমি সাউড টানবো। ফাউল না হলেও ব্রাজিল দলের পক্ষে ফ্রি-কিক দেবো...
প্রতি বছর এই ব্রাজিল - আর্জেন্টিনার ম্যাচে ঝগড়া হওয়ার কারণে অন্য কেউ রেফারি হতে চাই না...
তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই রেফারির দ্বায়িত্ব পালন করতে হলো...
দর্শকও ছিলো বেশ...
২
শুরুতেই আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে এগিয়ে। টেনশন যতটা না ব্রাজিল দলের, তারও বেশি আমার। এদিকে কারসাজিও করা যাচ্ছে না, যদি ধরে ফেলে!
আর দর্শকসারির আওয়াজেও মনের ভেতর একধরণের ভীতি কাজ করছিলো...
সবকিছুই ঠিকঠাক মত খেলছিলো। হঠাৎ এক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়, তার পক্ষের খেলোয়াড়কে ডি-বক্সের ভেতর বল এ মারতে গিয়ে পায়ে মেরে দিলো। জার্সিবিহীন হওয়ায় আমি না চিনে সাথে সাথে বাঁশি এবং পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিয়ে দিই। ওদিকে প্রিয় ব্রাজিল দলের ক্যাপ্টেন বাবু দা বলতে লাগলেন, ওই ওইটা ওদের দলের খেলোয়াড়। আমি শুনেও না শোনার ভান করে পাশ কেটে চলে গেছি...
অনেক তর্কাতর্কির পরও আমি ছিলাম আমার সিদ্ধান্তে অনড়। মাঝে রেগে গিয়ে একজনকে বললাম, রেফারি তুই নাকি আমি? একটা হলুদ কার্ড দেখিয়ে ভয় দেখালাম, সে বোকাটা লালকার্ড দেখার ভয়ে আর তর্ক করলো না...
হাফ টাইম শেষ। ১-১ এ ড্র।
৩
২য় হাফে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা রাফ খেলতে শুরু করলো। ওরা হুদাই হলেও বল না মেরে প্রিয় ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়দের পায়ে মারতে লাগলো। আমি নীরব ছিলাম। কারণ বিরতির সময় চা-সিগারেট খেতে গিয়ে কার্ডগুলো কোথায় রেখেছি ভুলে গেছি। বাঁশি দিয়ে কার্ড খুঁজতে যেয়ে দেখি, পকেটে কোন কার্ড নাই। মুখে লাল কার্ড বললে ওরা সেটা মানতে নারাজ। ওদের দাবি কার্ড ছাড়া মুখের কোন সিদ্ধান্তে ওরা মাঠ থেকে যাবে না...
কী আর করার!
আমার কাজিন প্লাবনও রাফ খেলার জন্য গোলকিপার থেকে স্ট্রাইকারে চলে গেলো...
সে কী মাইর। এরে মাইর, ওরে মাইর...
শেষে মি. টুইস্ট চিপসের লাল প্যাকেটকে কার্ড বানিয়ে তাকে মাঠ থেকে বের করে দিলাম...
যত্তসব ফাউল খেলোয়াড়...
৪
আর্জেন্টিনার ডি-বক্সের ভেতরে হাতে বল লাগলো এক ব্রাজিলের খেলোয়াড়ের, অথচ সেটা আমি জানি না, সে যে ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়!
মনে করেছিলাম সে আর্জেন্টিনার!
যা হবার তাই হলো, দিলাম পেনাল্টি। ফলাফল ব্রাজিল ২-১ গোলে জিতে গেলো...
খেলা শেষে আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়রা আমার দিকে তেড়ে আসলেও কাজ হয় না। একে তো আমি সিনিয়র, তার উপর সবাই জানে আমার ঘাড় একটু ত্যাড়া...
কয়েকজন তাও সাহস করে বলতে আসলেও, তখন দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়রা...
তাই ভয়ে কেউই আর সামনে এলো না...
ম্যাচ শেষে আমার প্রশংসাই পঞ্চমুখ সবাই...
দর্শক থেকে শুরু করে, ব্রাজিল দলের খেলোয়াড় পর্যন্ত...
অসৎ রেফারিরা বরাবরই একদলের প্রিয় থাকে, সেটার প্রমাণ আমি নিজে...
নয়ন বড়ুয়া
ডিসেম্বর, ২০২২
(বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স - আর্জেন্টিনার ফাইনাল ম্যাচের পর লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩০