somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারিডোলিয়া এবং প্রকৃতিতে ধর্মীয় নিদর্শন

২৭ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখেছেন: বেঙ্গলেনসিস এই লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে বোধকরি এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি কোনো পুরোনো দেয়ালের মধ্যে মানুষের মুখাবয়ব আবিষ্কার করেন নি, কিংবা মেঘের দলার মাঝে ঘোড়ার ছবি দেখেন নি অথবা আধো অন্ধকারে কোনো অবয়ব দেখে ভুত দেখেছেন বলে চমকে ওঠেন নি। অনেকেই হয়তো নির্জন ঘরে ফিসফাস শব্দ শুনেছেন (সেখান থেকে বিশেষ বিশেষ শব্দার্থও বের করে ফেলেছেন) এবং ভয়ে আধমরা হয়ে গিয়ে আবিষ্কার করেছেন সেটা বাতাসের শব্দ। কখনো কখনো টেলিফোনের রিংও শুনে থাকবেন যদিও ঘরে হয়তো কোনো টেলিফোনই নেই। সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত বিষয় থেকে অর্থপূর্ণ কোনো ইঙ্গিত খুঁজে নেয়ার এই প্রবণতার নামই হল প্যারিডোলিয়া (Pareidolia)।

Pareidolia শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দ para (পরিবর্তিত, পাশাপাশি) এবং eidolon (ছবি, আকৃতি) নিয়ে গঠিত। এই বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হচ্ছে বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত নকশার মধ্যে মানুষের মুখাবয়ব খুঁজে পাওয়া। নিচে কয়েকটি উদাহরন দেয়া হল:


প্যারিডোলিয়া আত্মরক্ষার একটি কৌশল যা বিবর্তনের ধারায় মানুষের মধ্যে উৎসাহিত হয়েছে। মূলত জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে অপর মানুষের মুখাবয়ব চিনে নেয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। একটি শিশুর জন্মের দুদিনের মধ্যেই সে অন্যান্য মানুষের বিভিন্ন মুখভঙ্গি শনাক্ত করা এবং সেগুলো অনুকরন করা শিখে ফেলে। শিশুর বয়স যখন সাতমাস হয় তখন সে একটি ভীতিপূর্ণ মুখভঙ্গী এবং একটি হাসিখুশী মুখভঙ্গীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং ভীতিপূর্ণ মুখভঙ্গীর প্রতি বেশী মনোযোগ দেয় যা তাকে বিপদ-আপদ থেকে সতর্ক থাকার অভ্যাস তৈরি করে দেয়। ধীরে ধীরে শিশুর সামাজিকীকরন ঘটে এবং শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বুঝে ফেলার ক্ষমতা তৈরি হয়। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরী একটি বৈশিষ্ট্য। চেহারা সনাক্তকরন যথেষ্ট জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং এই কাজে মস্তিষ্কের বিরাট একটি অংশ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ এর এক গবেষণা থেকে দেখা যায় মুখমন্ডলের সাথে মিল পাওয়া যায় এমন যে কোনো বস্তু মস্তিষ্কের কর্টেক্সে অত্যন্ত দ্রুত উদ্দীপনা তৈরি করে এবং বস্তুটিকে দ্রুত(অন্য অনুভূতি আসার আগেই ) মুখমন্ডল হিসেবে সনাক্ত করতে সহায়তা করে। এই কারনেই কয়েকটি বৃত্ত ও রেখায় সমন্বয়কে আমরা মানুষের চেহারা হিসেবে ধরে নিই। শুধু তাই নয়, কয়েকটি রেখার সমন্ধয়ে মানুষের অনেক রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করা সম্ভব যদিও বাস্তব চেহারার সাথে সেই সব রেখা সমষ্টির কোনো মিলই থাকে না। নিচের ছবি দুটি লক্ষনীয়।


তিনটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখা দ্বারা মানুব মুখাবয়ব বোঝা যাচ্ছে।


কয়েকটি রেখা, বৃত্ত ও বিন্দুর সমন্বয়ে বিভিন্ন রকম মৌখিক অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে।

ধর্মে ব্যাবহার:
প্রায় প্রত্যেকটি বড় ধর্মই প্যারাডোলিয়ার মাধ্যম্যে অলৌকিকত্ব(!) প্রদর্শন করে থাকে। সাধারণ মানুষ প্রকৃত ব্যপারটি ধরতে না পেরে সেগুলোকে মিরাকল মনে করে থাকে। অথচ একটু সচেতন হলে দেখতে পেত প্রত্যেকটি ধর্মেরই এ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হল:

১. ইসলাম ধর্ম: আজকাল প্রায়শ:ই ফেসবুক বা ব্লগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তুর আরবীতে আল্লাহ (الله) লেখা দেখানো হয় এবং সেগুলোকে মিরাকল বলে প্রচার করা হয়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, আরবী বর্ণগুলো বেশ সরল প্রকৃতির এবং আরবী ক্যালিগ্রাফী অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। যার ফলে একই বর্ণ বিভিন্ন আকৃতিতে লেখা যায়। এই কারনে কয়েকটি লাইন এবং লুপের মাধ্যমেই কোনো লেখা ফুটিয়ে তোলা যায়। নিচে কয়েকটি উদাহরন দেয়া হল:



খ্রীষ্ট ধর্ম: খ্রীষ্ট ধর্মে মীরাকল হিসেবে প্রায়ই কুমারী মেরি কিংবা যীশুর ক্রুশবিদ্ধ ছবি দেখানো হয়ে থাকে। নিচের কয়েকটি নমুনা দেখুন:



হিন্দু ধর্ম: হিন্দু ধর্মের ও’ম প্রতীকটি বিভিন্ন সময় সনাক্ত করা হয়েছে। যেমন:



২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×