এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখবো সে আমি চিন্তাও করিনি। কিন্তু অবশেষে লিখত বসলাম। একটা বিদেশি ম্যাগাজিনের অবলম্বনে এই লেখাটা লিখছি। মূল লেখাটির সূত্র দিচ্ছিনা। কেননা, আমার এতো কাঁচা অনুবাদ পড়ে কেউ কেউ হাসতে পারেন। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার ছয়টি উপায়।
একটা বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেমন একটা নতুন ব্যবসা শুরু করা বা একটা উপন্যাস লেখা শুরু করা বা নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য উৎপাদন অভিজ্ঞরা আপনাকে সকাল সকাল উঠতে পরামর্শ দিতে পারে। একটা শান্ত পরিবেশে হয়তো আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন কোনো রকম বিরক্তি বা মনোসংযোগ ব্যাহত হওয়া ছাড়াই। কিন্তু যদি পরিবেশটি হয় শব্দের মধ্যে তবে এটা বলা অনেক সহজ করে দেখানোর চেয়েতো বটেই।
জুলি মর্গানস্টেইন বলেন, 'আপনি হয়তো মনে করতেই পারেন সকাল সকাল উঠা এক ধরনের শৃঙ্খলা মাত্র কিন্তু এটা আসলে তার চেয়েও বেশি কিছু। সত্যটি হলো, আপনার সমস্ত ইকোসিস্টেমটি গড়ে উঠেছে এই দেরী করে ঘুমতে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।' (অভিজ্ঞ সময় ব্যবস্থাপক এবং Never Check Email in the Morning এর লেখক)
যখন আপনি আপনার সকালের রুটিন পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন তখন অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে। এগুলোকেও অতিক্রম করা সম্ভব। রাতের পূর্বেই চাবি ঘোরানো শুরু করা যেতে পারে। মর্গানস্টেইন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার জন্য ছয়টি উপায় বাতলে দিচ্ছেন।
১) নিজের মনকে পরিবর্তন করুনঃ অনেক মানুষ ঘুমতে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করে কেননা তারা অনেক কিছু করতে চায়- তাদের একটি দিন থেকে বিচ্যুতির অনিশ্চিয়তাবোধ রয়েছে। বোধহয় দিনটি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু মর্গানস্টেইন তার গ্রাহকদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
"ধরে নিন ঘুম হচ্ছে পরবর্তীদিনের শুরু", তিনি বলেন, এ ধরনের চিন্তা ঘুম সম্পর্কে আপনার চিন্তাকে পরিবর্তন করবে ঘুম সম্পর্কে আপনাকে আগ্রহীও করে তুলবে। "ঘুম হচ্ছে একটি সক্রিয় উপাদান, এতে আপনি নিজের ব্যাটারি চার্জ করে নিতে পারেন"।
২) ঘুমের সময়কে সমন্বয় করুনঃ আমাদের অনেকেই আছেন যারা ঘুম বঞ্চিত এবং অতিরিক্ত কয়েক ঘন্টা ঘুম চুরি আমাদের ব্যর্থতার দিকেই ঠেলে দিবে। সফল হওয়ার অন্যতম উপায় হলো তাড়াতাড়ি বিছানায় যাওয়া। ঠিক করুন আপনার শরীরের জন্য ক'ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন আর সেখান থেকেই ঘুমানো শুরু করুন।
"তাড়াতাড়ি উঠার জন্য মস্তিষ্কের মধ্যেই একটা মৌলিক পরিবর্তন দরকার।" তিনি বলেন, " এই পরিবর্তনটি দিনের পূর্বেই আপনার সমস্ত চেতনাকে তৈরি করবে যে কালকের দিনটি আপনার জন্য খুবই পরিশ্রমের হবে আর এর পূর্বে আপনার কিছু মাত্রায় বিশ্রাম দরকার।"
৩) রাত্রিকালীন অন্যান্য কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়ঃ আপনাকে রাত্রিকালীন খাবার এবং খাবার খাওয়ার পরে মানসিক ভাবে হালকা হওয়ার কাজের (যেমন বই পড়া) মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলছেন, "আপনি কোনোভাবেই বাস্তবিক নন যখন আপনি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে চান কিন্তু সময়ের মধ্যেই সব কিছু সম্পন্ন করতে পারবেন না। আপনাকে রাতের খাবার অবশ্যই দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে শেষ করতে হবে যদি আপনি সময় মতো ঘুমতে যেতে চান বা ভালো ঘুম দিতে চান।"
৪) দিনের কাজ গুলো তৈরি করুনঃ মাঝেমাঝে কিছু একটা বিছানায় শুয়ে থাকাকেও ক্লান্তিকর করেনা অথচ আমাদের পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা বেশ ভারী। ইচ্ছে করলেই এই রাতেই কালকের কাজগুলোকে একটু গুছিয়ে নেয়া যেতে পারে। যেমনঃ যদি জিমে যান তো আজ রাতেই জিমে যাওয়ার কাপড়গুলো, ইয়োগার ম্যাট, জুতো গুছিয়ে রাখতে পারেন। যদি কাল অফিস যান তো আজ রাতেই কালকের জামা-কাপড়গুলোকে গুছিয়ে রাখতে পারেন।
মর্গেস্টেইন বলেন, "নতুন কিছু শুরু করা একটু ঝক্কিরই বটে। তবে তৈরি হতে যদি একটু সময় নেন তবে সফল হওয়ার সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে নেয়া যায়।"
৫) ইলেক্ট্রনিকস বন্ধ করুনঃ অন্ততঃ দেড় ঘন্টা আগে আপনি আপনার সমস্ত ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রগুলোর সুইচ বন্ধ করুন। টিভি বন্ধ করুন। বন্ধ করুন মেইল চেক করা, সোসাল মিডিয়ায় বিচরণ এমনকি ই-বই পড়াও।
তিনি বলেন, "বিজ্ঞান বলে এগুলো আমারদের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এবং অতিরিক্ত উদ্দীপ্ত করে জাগিয়ে রাখে। এটা অনেকটা ঘুমতে যাওয়ার আগে এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করার মতো যা কোনো মতেই ঘুমতে সাহায্য করেনা।"
তিনি এর পরিবর্তে বরঞ্চ যা আমাদের মনকে হালকা করে এমন কিছু করতে উপদেশ দেন। যেমনঃ বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা অথবা পরবর্তী দিনের জন্য নাস্তা তৈরি করা।
৬) ঘুমতে যাওয়ার আগে একটি রুটিন তৈরি করুনঃ ঘুমতে যাওয়ার আগে কিছু কাজ করুন যা আপনার মনকে শান্তি দিবে এবং হাপ ছাড়ার জন্য সময় নিন। যেমনঃ দরজা-জানালা বন্ধ হলো কিনা দেখুন।, পানির কল বন্ধ কিনা, গ্যাসের চুলা বন্ধ কিনা দেখুন। বাত্বিগুলো নিভিয়ে দিন। প্রয়োজনে কিছুক্ষন হাটাহাটি করুন।
"এই রুটিন কাজগুলো আপনাকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়া পরতে সাহায্য করবে", তিনি বলেন, "এই অভ্যাস আপনাকে সকাল সকাল উঠার সম্ভাবনাকেও বেশ অনেক খানি বাড়িয়ে দিবে।"
অনুবাদ এখানেই শেষ। তবে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। সেটা আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বলা হয় যে আমাদের মস্তিষ্ক হলো সুপার কম্পিউটার এর চেয়েও বেশি শক্তিশালী। তাই কখন উঠতে চান সেই সময়টাকে ঘড়ির কাটায় কলিং বেল এর সাথে একটু এই মস্তিষ্কেও যদি সেট করা যায় তবে সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যেতে পারে।
কষ্ট করে এই লেখা পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত অন্ততঃ একটি বিষয় আজ আপনি জানলেন যা আগে জানতেন না। এটা যদি কাজে লাগান তবে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা খুব বেশি কষ্টকর হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৭