এই শুক্রবার আড্ডার কথা আমাকে প্রথম জানান নাঈম ভাই। তিনিই আমাকে জানান আমি যেনো একটা পোস্ট দিয়ে দেই। মজার বিষয় হলো আমি সেই সময় সিলেটে মামুন রশীদ ভাইয়ের সাথে। সামনে বসা ছিলো গণ্ডমূর্খ (ভালো নাম সুমন)। তাদেরও জানালাম আমাদের আড্ডা হচ্ছে এই শুক্রবার। এ রকম একটা আড্ডা যেন তারাও করে সপ্তাহে না হোক, অন্ততঃ মাসে একটা হোক। কি ছিলো সেই আড্ডার বিষয় তা নিয়ে কেউ হয়তো পোস্ট দিলো। এরকম আড্ডা কি চট্টগ্রামেও হতে পারে না? আশা করি মাহমুদ ভাই, চেষ্টা করবেন একটা আড্ডার আয়োজক হতে। আমরা ঢাকা থেকে সেই আড্ডায় আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রইলাম। আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র ছুটে যাবো।
কথা ছিলো আড্ডা শুরু হবে ৪.৩০ মিনিটে। আমি এক দাওয়াতের প্যাচে পরে, সি এন জি না পেয়ে (ভাড়া দরদাম না মিলায়), বাসে করে আসতে যেয়ে বিশাল ট্যাফিক জ্যামে পরে পৌছাতে পৌছাতে বেজে যায় ৬ টা। তাই, আড্ডার প্রথম এক ঘন্টা যে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলতে পারবো না। আশা করি আমার পোস্টের মন্তব্যে কেউ এই নিয়ে কথা বলতে পারেন। বা আরো সুন্দর একটা পোস্ট দিতে পারেন। আমি বিশেষ করে আশা করবো মাহমুদ ভাই এর প্রতিক্রিয়া। কেমন দেখলেন আমাদের আড্ডা অন্ততঃ সেই সম্পর্কে কিছু একটা পোস্ট দিবেন।
এবার আসি আড্ডা কি নিয়ে দিলাম। এ অবশ্যই আমি যাওয়ার পর থেকে যা হলো তা নিয়ে বলছি। সমালোচনা সাহিত্য নিয়ে কথা উঠলো। এ বিষয়ে আমাদের এ, টি, এম কামাল ভাই বললেন, আসলে একটা কথা বলা হয় যে রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে তেমন একটা কাজ করেন নাই তাই আমাদের দেশে সমালোচনা সাহিত্য তেমন সমৃদ্ধ হয়নি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, সমালোচনা শোনার মতো মানসিকতা কি আমাদের গড়ে উঠেছে কিনা। সেটা তো এখনো গড়ে উঠেনি। সত্যি তাই, আমরা এখনো আমাদের সাহিত্য কর্মের সমালোচনা শুনতে অভ্যস্ত নই। আর সমালোচনা যিনি করবেন তাকে তো জানতে হবে। সেই জানাটা যেনে কারো সমালোচনা করবে এমন মানুষই ক'জন? সমালোচনা করে যদি অন্যের চক্ষুশূল হন, এমন ধারণাও থাকতে পারে। কিন্তু সাহিত্যের সমালোচনা তো আসলে সমালোচনা নয়, বিস্তারিত আলোচনা। যেমন মান্নান সৈয়দ করেছেন জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে "শুদ্ধতম কবি"। যাকে বলে চুল চেড়া বিশ্লেষণ। এখানে কবিতায় কোন অক্ষর বা বর্ণ বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তারও উদাহরণ দেয়া হয়েছে। এক কবিতায় কোনো শব্দ কতবার এসেছে, এক লাইনে কতগুলো অক্ষর এসেছে, যে শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে দেশি শব্দের সাথে আরবী-ফার্সি শব্দের ব্যবহার কেমন, আবার ইংরেজি শব্দের ব্যবহার কেমন। এরকম অদ্ভুত এবং হরেক রকমের বিশ্লেষণ করেছেন। এখন, এভাবে সমালোচনা করার মতো ধৈর্য্য কি আছে বর্তমান সময়ের সমালোচকদের? না আছে এমন করে দেখার এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা?
যাই হোক, কামাল ভাই আমাদের দেশের ইতিহাস নিয়েও কিছু বক্তব্য রেখেছেন। বিশেষ করে, বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ইতিহাস। এই জাতি যে কোনো শৃঙ্খলা মেনে নেয়নি কোনো কালেই তারই কিছু ইতি কথা জানান। সেই ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ সম্রাজ্য শুরুর পর এই বাংলায় যে সকল বিদ্রোহ হয়েছে তার খুব অল্পই দেখা দিয়েছে সমগ্র ভারত বর্ষে। যেমনঃ তেভাগা আন্দোলন, সাওঁতাল আন্দোলন, ভিক্ষুক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন এমনতর আরো অনেক আন্দোলন হয়েছে এই বাংলায়। এর আগেও মুগলরাও সহজে পোষ মানাতে পারেনি এই বাংলার বার ভূইয়াদের। এই জাতী সব সময় স্বাধীনচেতা। কারো বশ্যতা স্বীকার করেনি কোনোদিন, আজো করবেনা, করবেনা ভবিষ্যতেও।
একটা প্রস্তাব উঠে আড্ডা থেকে একটা প্রবন্ধ লেখার অনুরোধ করা হয়, মাহমুদ ভাইকে। তিনি যেন সাম্প্রতিক গল্পগুলোর উপর একটা প্রবন্ধ লেখেন। বিষয়, বৈচিত্র আর চরিত্র চিত্রনের দিক থেকে আমাদের গত শতাব্দীর গল্পের সাথে এখনকার গল্পের একটা তুলনামূলক চিত্র। যেহেতু মাহমুদ ভাই নিজে গল্পের সংকলন করছেন তাই তার পক্ষে এই প্রবন্ধ লেখাটা সহজ হবে এজন্য যে গল্প নির্বাচনের আগে তাকে গল্পগুলো পড়তে হয়েছে।
কাল্পনিক_ভালোবাসা (জাদিদ) ভাই, এসেছিলেন তার জন্ডিস নিয়েও। অত্যন্ত মজার মানুষ সব সময় জমিয়ে রাখেন। রোগ বালাইও শরীরে জমছে এই খবর খুব একটা গুরুত্ব না দেয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে। এখন খাওয়া-দাওয়া খুবই সতর্কতার সাথে করতে হচ্ছে। আশা করি তিনি খুব দ্রুতই সেড়ে উঠবেন।
আড্ডার মধ্যে থাকলেও মোবাইল স্ক্রিনে সদা ব্যস্ত দুর্জয় ভাই দুটো তথ্য জানালেন, সেদিনই আমাদের মাহবুবুল আজাদ ভাইয়ের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে (তথ্যটির সত্যতা জানিনা, ঘটনার পর থেকে তার ফেবুর নিক'টি ডিএক্টিভ রয়েছে।) আর লঞ্চ ডুবার পর আসমার মতোও নাকি একটা অতি মানবীয় উদ্ধার কার্য দেখানো জন্য লোক ভাড়া করা হয়েছিলো যা ধরা পরেছে। দারুন! দেশ এগিয়ে চলছে। সারা বিশ্বে ঘটনা ঘটে আর আমরা ঘটনার জন্ম দিই।
এসেছিলো নাঈম ভাই, স্বপ্নবাজ অভি, আহমেদ আলাউদ্দিন, নেক্সাস ভাই। আমি সহ এই দলের তেমন কোনো বক্তব্য ছিলো না। তবে আমাদের কান ছিলো সদা প্রস্তত।
এ ছাড়াও ব্যাপক আলাপ করেছেন, মাহমুদ আর অভি। আশা করি তাদের আলোচনার বিষয়ও জানতে পারবো মন্তব্যে।
খাওয়া দাওয়াঃ খাওয়া দাওয়া ছিলো মোটামুটি চা আর সিঙ্গারা দিয়ে শুরু আর ছোলা আর চা দিয়ে শেষ হয়। সেদিন আর তেমন কিছু ছিলোনা সাহিত্য কেন্দ্রে।
নাঈম ভাইয়ের বাসা সেই সাভার হওয়ায় তাকে উঠতে হলো আগে। এরপর আমরাও বেড়িয়ে এলাম আটটার পর। আসলে আড্ডার আসল মজার জন্য অবশ্যই রেকর্ডার নিয়ে যাওয়া উচিত। কথা উঠে থাকবে, পরে তা শুনে শুনে পোস্ট দেয়া হবে বা সেই আলোচনাটাই ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া যায়।
এখন দেখা যাক যারা উপস্থিত ছিলো এই আড্ডায়। নাম বলা হবে না। হাঃ হাঃ হাঃ
অনেক কষ্ট করে এই আড্ডার পোস্ট পড়লেন। এ জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৭