somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@আমার ঈদ- ফরিদাবাদের ঈদ@

২৯ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ঈদ কেমন ছিলো? এই সময়ে এসে চিন্তা করলে আউলা ঝাউলা লাগে। ফরিদাবাদে যখন ছিলাম তখন ঈদ ছিলো এক রকম। আবার এই মুরাদপুরে আসার পর ঈদ হয়ে গেলো অন্য রকম।

এখন আমরা বলি ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা। কিন্তু ছোটবেলায় বলতাম, রোজার ঈদ, কোরবানী ঈদ। এখন রোজার ঈদের কথাই বলি। ছোট বেলা থেকেই আমি রোজা রাখতে চাইতাম। কিন্তু আম্মু রোজা রাখতে দিতে চাইতেন না। আমার কষ্ট হবে এই ভেবে। যখন একদম ছোট ছিলাম তখন আম্মু বলতোঃ সবাই দিনে মাত্র একটা রোজা রাখে, তুমি তিনটা রোজা রাখবা ঠিক আছে?
আমিঃ এক দিনে তিনটা?
আম্মুঃ হুম
আমিঃ কিভাবে?
আম্মুঃ সেহেরি থেকে সকালের নাস্তা পর্যন্ত একবার। সকালের নাস্তা থেকে দুপুর পর্যন্ত এক বার আর দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত একবার। মোট তিনবার।
ব্যস, আমি সানন্দে প্রতিদিন তিনটা করে রোজা রাখতে লাগলাম। তবে শর্ত হচ্ছে সেহেরি খেতে হবে। তা হলেই দিনে তিনটা রোজা হবে। সেহেরি না খেলে হবে না। কিন্তু, সেহেরিতে আমাকে ডেকে তোলা আরেক যন্ত্রণার। আমি কিছুতেই উঠতে চাইতাম না। তবু আমাকে ডাকা হতো।

এরপর একটু বড় হলে আমার চেয়ে একটু বড়রা আমাকে বললো, আমার তো আসলে রোজাই হয়না। আমিও বুঝলাম তাই তো দিনে তো তিনটা করে রোজা হতেই পারেনা। তখন আম্মু বললেনঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সারা মাস রোজা রাখতে চাও?
আমিঃ হ্যাঁ।
আম্মুঃ ঠিক আছে, প্রথম রোজা আর শেষ রোজা রাখো তবেই তোমার সারা মাস রোজা হয়ে যাবে।
আমিঃ তাই?
আম্মুঃ হুম।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে আমি প্রথম রোজা আরা শেষ রোজা রাখে সারা মাস রোজা রাখবো। কিন্তু এই ফাঁকিও বেশি দিন দেয়া গেলো না। এরপর প্রতি দশদিনে একটা করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে একটা দুটো করে রোজা রাখতে লাগলাম। আমি রোজা রেখে কাহিল হচ্ছি এই দেখে আম্মু একদিন বললেনঃ ধর তুমি রোজা রেখে কিছু খেয়ে ফেলো আর কেউ তা দেখলো না। তাহলে কিন্তু তোমার রোজা হয়ে যাবে।
আমিঃ এটা হয় নাকি?
আম্মুঃ হুম, ছোটদের জন্য হয় তো।
আমিঃ আচ্ছা, তাহলে তুমিও কিন্তু দেখবা না।
আম্মুঃ আচ্ছা, আমিও দখবোনা। এইবলে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমিও পেটের চুচু সহ্য করতে না পেরে খেয়ে মুখ মুছে দেদারছে ঘুরতে লাগলাম। ভাব এমন আমিতো রোজা রেখেছি কই, আমারতো কষ্ট হচ্ছে না।

এরপর ইতিমধ্যে আমি জেনে গেছি, এভাবে আসলে রোজা হয়না। তখন শুরু হলো নতুন কৌশল। আমাকে ঘুম থেকে উঠানো যায়না। তাই আমাকে অনেক ডাকাডাকির পরও আমি উঠিনি। তাই রোজা রাখতে পারিনি। আসলে এমন অনেক দিন আমাকে ঘুম থেকে ডাকেইনি।

এভাবেই আস্তে আস্তে রোজাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এখন আসি ঈদের আগের রাত চান রাতের কথা। চান রাতের দিন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম সন্ধ্যার সময়। এর জন্য উঠে যেতাম তিনতলার ছাদে। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে থাকতাম, সূর্য ডুবে গেলে উঠবে চাঁদ। চাঁদ দেখতে পেলে সে কি আনন্দ! সেই আনন্দ ধরা দিতো তারাবাত্বি জ্বালিয়ে। এরপর সবারই কেমন একটা ধোয়া মোছা, গোছ-গাছ লেগে যেত। কাল ঈদ তাই আজ রাতেই সব কিছু সুন্দর করে সাজিয়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে।

ঈদের জামা অবশ্যই কাউকে দেখানো যাবেনা। এটা খুবই গোপনীয়। ঈদের জামা দেখানো মানেই হলো ঈদ শেষ। আমার ঠিক মনে পরেনা, আমি ঈদে একটার বেশি দুইটা জামা পেয়েছি। কিন্তু রনি-কেয়া আপাদের দেখতাম ওদের দুই-তিন সেট করে ঈদের জামা হয়। একটা সেট হয়তো মামা দিলো, একটা সেট চাচা এই করে ওদের দুই-তিন সেট হয়ে যেত। তাই একটা সেট দেখালেও ওদের ঈদ থেকে যেত।

ঈদের দিন সকালে উঠে আব্বুর সাথে যেতাম নামাজ পরতে। নামাজ পরতে যাওয়ার আগে সেমাই খেয়ে যেতে হতো। কোরবানীর ঈদের নিয়ম হলো, নামাজ পরার পর সেমাই খাওয়া। এখন কোরবানীর পর সেমাই খেতে হয়। নামাজ পরে এসে চলতো সালাম করার ধুম। সালাম করলেই সালামি। তখন সালামি পাওয়া যেত ২টাকা থেকে ১০ টাকা। কদাচিত কেউ বিশ টাকা দিতো। সারা দিন ঘুরতাম এই সালামি আদায় করা যাবে যেখানে সেখান সেখানে। সব বাসাতেই সেমাই, পায়েস, ফিন্নি কিছু না কিছু মিষ্টান্ন খেতে দিতো। এই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়েই আর দুপুরে খাওয়া হতোনা। অথবা দুপুরেও খেয়ে নিতাম কারো বাসায়। খিচুরি, পোলাও আর মাংস (গরুর অথবা মুরগীর)।

সন্ধ্যায় এসে সব টাকা আম্মুকে দিয়ে দিতাম রাখতে। বলা বাহুল্য, সেই টাকা আর কোনো দিন ফেরত পাওয়া যায়নি। ঈদের দিনের মজা হলো, পড়তে বসতে হয় না। এই দিন যেখানে খুশি ঘোরাঘুরি কর, খেলো কোনো মানা নেই। সন্ধ্যার পর টিভি দেখতাম। নাটক, আনন্দ মেলা, এরপর এক সময় শুরু হলো ইত্যাদি। রাতে খাবার খেতাম আব্বু-আম্মুর সাথে। এরপর ঘুম।

বলতে গেলে আমার ফরিদাবাদের ঈদগুলো এমনই ছিলো। পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত আমি ফরিদাবাদে ছিলাম। এরপর চলে আসি মুরাদপুর। মুরাদপুরের ঈদের কথা না হয় হবে অন্য কোনো এক সময়। সকলকে ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×