এই শহরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ছিলো দুই নরনারী। তারা কেউ কারো দিকে সরাসরি তাকাতো না। আড়চোখে তাকাতো। সরাসরি কথা বলতো না যেন কথা প্রসঙ্গে কথা বলতো, সম্বোধনহীন। ফেসবুক তাদের একদিন কাছাকাছি নিয়ে এলো। তারা একে অপরের বন্ধু হলো। এরপর গুটুর গুটুর করে চলতে লাগলো তাদের কথামালা। সহকর্মী হিসেবে দু’জনের মনের লেনদেনের কিছু টুকিটাকি জানতে পেরেছিলাম সময়ে সময়ে। সেই সব নিয়ে এই ফেসবুক কথামালা। অপূর্ব আর মৃদুলা। তাদের ভেতরের সম্পর্কগুলো আজও আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। তাদের হৃদয়ের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা মাপার নিক্তি আজো পাইনি আমি। তবে সেই সব কথামালাগুলো হারিয়ে যেতেও ইচ্ছে হলো না। এর জন্য যদি কোনো শাস্তি পেতে হয়, মাথা পেতে নেবো।
কথামালা-১০
- দু’ দিন দেখলাম না, কোথায় ছিলেন?
- ট্রেনিংয়ে
- হুম, ট্রেনিং। কি শিখলেন?
- অনেক কিছু…
- ও, তার কিছু কিছু কি জানতে পারি?
- ট্রেনিংয়ে গেলেই জানবেন।
- ও জানাবেন না?
- না, না, মজা করছিলাম।
নতুন প্রডাক্ট আসছে, তার সম্পর্কেই জানলাম।
- আচ্ছা…
- কেমন লাগে ট্রেনিং করতে?
- ভালোই
- শুধু ভালো?
- আসলে অনেকের সাথে দেখা হয়, কথা হয়
পরিচয় হয়, এইটা বেশ লাগে।
- আর?
- আর অফিস করতে হয়না,
বাসা থেকে খাবার আনতে হয়না,
ছয়টার পরেও অফিসে থাকতে হয়না,
- আর কিছু?
- আর আবার কী?
- কোথায় জানি পড়েছিলাম জানেন?
যে কোনো পেশার মানুষেরই ফী বছর
কম হলেও চল্লিশ ঘন্টা ট্রেনিং করা উচিত।
- তাই নাকি?
- হুম!
- আর কয় ঘন্টা ট্রেনিং দিতে হয়?
- মানে?
- আপনি যে ট্রেনিং দিতে ডাক পেয়েছেন সে তো জানি
- কি করে,
আমি তো কাউকে বলিনি!
- স্যারের কাছে যে ফ্যাক্স আসছে সেইটা দেখেছি।
- ও, আর কে কে জানে?
- খুব কম মানুষই জানে, তবে
কাল মিটিংএ হয়তো সবাই জানবে।
- আসলে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি, জানেন?
- কেন?
- না, আমি যে ট্রেনিং দিতে পারি বা
আমি অন্যদের ট্রেনিং দিবো এইটা কখনো মাথাতেই আসেনি।
- এখন কেমন লাগছে?
- এইতো, একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছি
- বিষয় কী?
- ওই আমার যা বিষয়, গ্রাহক সন্তুষ্টি।
- আমাকে একটা স্লাইড দিবেন?
- হ্যাঁ, কেন না? কিন্তু আপনি এটা দিয়ে কি করবেন?
আপনার ডিপার্টমেন্ট তো আলাদা।
- আপনি কিভাবে আমাদের গ্রাহকদের সন্তুষ্টি করেন
এইটাই জানা আর কী বলতে পারেন।
- বেশ, মেইলে পাঠিয়ে দিবো
- হুম, মনে থাকে যেন
আপনার যে ভুলো মন।
- এখনই পাঠিয়ে দেয়া যায়, তবে
একটু বাকী আছে যে।
- শেষ করেই পাঠান, সমস্যা নেই।
যাচ্ছেন কোথায় কোথায়?
- এখনো ঠিক জানিনা।
- কি মজা আপনার না,
অফিস করাও হলো, আবার ঘোরাঘুরিও হলো।
- আর ঘোরাঘুরি, বৃহস্পতিবার রাতে যাও
শুক্রবার সারা দিন ট্রেনিং করিয়ে
রাতেই ঢাকা ফিরো
- কিন্তু সম্মানতো অনেক
- হ্যাঁ, এই একটা কথা চিন্তা করেই বেশ লাগে।
আমার সাথে জয়েন করেছে এমনতো আছে অনেকেই
আবার অনেকেই আমার বেশ সিনিয়র,
সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকে যে সিলেক্ট করেছে
এতেই আমি খুশি।
- ফিরছেন কবে?
- আরে এখন তো ঢাকাতেই হবে,
পরে পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে।
- ও, আজ আসি।
- যাবেন?
- হুম, বেস্ট অব লাক
- ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৭