অনেক দিন ধরেই চলছে সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের কিছু ব্লগারদের আড্ডা। যাকে আমরা সাহিত্য আড্ডাই বলি। কেমন চলছে এই সাহিত্য আড্ডা? এই নিয়ে পোস্ট দেয়া হয়না অনেক দিন। তাই বলে সাহিত্য আড্ডা থেমে যায়নি।
এইবার সাহিত্য আড্ডার সময় বেশ আগে জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। নিয়মিত ব্লগাররা চলে এসেছেন সময় মতোই। আড্ডা শুরু হয় বিকাল ৫.০০ টায়। এই মাসের শেষ সপ্তাহের শেষ শুক্রবার হওয়ার কথা থাকলেও রোজা চলে আসার জন্য আর আমাদের প্রকাশনার ব্যপারে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই গেলো শুক্রবার নির্ধারণ করি।
প্রথমে কে এসেছেন বলতে পারছিনা। আমি আসি প্রায় ৫.২০ মিনিটে। এসেই দেখি মাহবুবুল আজাদ ভাই, কুহক ভাই আর ব্লগার সাদরিল বসে আছেন। কুহক ভাই তুলছেন ছবি। ফুলের ছবি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এই ক্যাফেটারিয়েটার রেলিংয়ে সাজানো হয়েছে ফুল গাছগুলো। আমাদের আড্ডা শুরু হলে এক সময় পাখি ডেকে উঠে। কুহক ভাই আশ্চর্য হন, পাখি ডাকে এখানে? কামাল ভাই উত্তর দেন এটা সায়ীদ স্যার দেখেই সম্ভব। যাক সে কথা হবে আরো পরে। আজাদ ভাই বললেন তাদের নাকি গলা শুকিয়ে আসছে। তাই চা এর অর্ডার দিলেন আজাদ ভাই। সাদরিলের অভ্যাস না থাকলেও খেলেন।
আমাদের পরবর্তী ম্যাগাজিনের লেখা গুলো আজাদ ভাই প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছেন। আরো কিছু লেখা আসছে। এখনো এসে পৌছায়নি। তাই সেগুলো আর দেখা হলোনা। একটা প্যাড তৈরি করা হয়েছে। যেন আমরা বিজ্ঞাপণ নিতে পারি। এই কথা সেই কথার মধ্যেই চলছিলো আমাদের আড্ডা। এর মধ্যে এসে গেলেন আমাদের এ, টি, এম মোস্তফা কামাল ভাই। জ্যামের জন্য আজ তার প্রথম দেরী। নয়তো সময়ের আগে আসা তার সময়ানুবর্তীতার কথা আমরা সকলেই জানি। এমনও দেখা গেছে কেউ আসেনি কিন্তু কামাল ভাই ঠিক ঠিক সময়ে চলে এসেছেন।
কি নিয়ে হলো আমাদের আড্ডা? আসলে কি নিয়ে হলো বা সাহিত্যের কোন দিক নিয়ে হলো, সেটা আজ আর বড় না। আড্ডাকে আপনি যে নামই দিন না কেন, সে কিন্তু আর তার চরিত্র আর বৈশিষ্ট্য এক জায়গায় থাকবেনা। বারবার পরিবর্তন হবে। আড্ডা কখনো নির্দিষ্ট জায়গায় থাকেনি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক থেকে ছবি, বর্তমান বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যর্থতা। এর মধ্যে এক দফা খাওয়া হয়ে গেলো সমচা। এটা সাদরিলের পক্ষ থেকে।
কথা হচ্ছিলো কুহক ভাইয়ের সাথে, অনুপ্রাণন এর থেকে এবার একটা প্রবন্ধ এর উপর বই বের হবে। বের হবে কবিতার বই। বেশ কিছু কাজ করতে চান সামনের বই মেলায়। কথা প্রসঙ্গে চলে এলো সাহিত্যিকদের তৃপ্তি নিয়ে। সাহিত্যিক বা শিল্পী মাত্রই কি তৃপ্ত হতে পারেন? আমার তো মনে হয়, যিনি তার লেখা নিয়ে তৃপ্ত, ঠিক সেই মুহূর্তেই তিনি নিঃশেষ হয়ে গেছেন। আর কিছু দেবার তার নেই। বলা যায় এরপর যা তিনি দিবেন তা আর বিশেষ কোন সৃষ্টি হবেনা। সে কেবলই অনাসৃষ্টি।
কথা হচ্ছিলো কামাল ভাইয়ের লেখা রক্তে ভেজা ভাষার মহিমা নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, ভাষার জন্য কেবল রক্ত আমরাই দিয়েছি। এই বাংলা ভাষার জন্য আমাদের চেয়ে বেশি লোক মারা গেছেন আসামে। আমাদের বাংলা ভাষাকে লড়াই করতে হয়েছে পাঁচটি ভাষার সাথে। এ ভাষাগুলো হলো সংস্কৃত, আরবী, ফারসী, উর্দু ও ইংরেজি। এতো কিছুকে পেছনে ফেলে আমরা এখনো আমাদের মাতৃভাষা বাংলাতেই কথা বলি। কামাল ভাই কাজ করছেন, অনেক কিছু নিয়ে, বাংলা ভাষা নিয়ে, বাংলা সন নিয়ে, বাংলা ভাষার শক্তি নিয়ে। একটা মজার তথ্য দিলেন তিনি, তা হলো আমাদের এই দক্ষিন এশিয়াতে বা পূর্ব এশিয়াতেও যেখানে সংসারের বন্ধন বেশি সে অঞ্চল গুলোর বর্ণমালাতে যুক্তাক্ষর রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের পরিবারগুলোতে যেমন রয়েছে পারিবারিক বন্ধনের ঘাটতি তেমনি বর্ণমালাতে তেমন কোনো যুক্তাক্ষর নেই। এর মনস্তাত্তিক ব্যাখ্যা কি আছে? সে নিয়েও তিনি কাজ করছেন।
দেখতে দেখতে চলে এলেন আশরাফুল ইসলাম দুর্জয়। আস্তে আস্তে আড্ডাটা তার রূপ মেলে ধরলো। আর সূর্য ঢলতে ঢলতে কখন যে নেমে গেছে বৃষ্টি বৃষ্টি মেঘলা আকাশে টের পাইনি। এরপর চলে এলো ছোলা মুড়ি আর চা কামাল ভাইয়ের সৌজন্যে। এই খেতে খেতে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা হতেই সাদরিল ধরলেন আমাদের তার মাষ্টার্সের কোর্সের কিছু তথ্য নেয়ার জন্য। তার বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক আর ব্লগের ভূমিকা। কার কতটুকু। কে কত বেশি শক্তিশালী? এখন অনেক ব্লগাররাই কেন ফেসবুক মুখী? আমদের দেশের ব্লগ কেনো এতো সাহিত্য নির্ভর? এরকম আরো অনেক বিষয় শাহবাগ আন্দোলন, নিউজ পোর্টাল, নাগরিক সাংবাদিকতা, এই সব কিছু নিয়ে খোলামেলা কিছু প্রশ্ন এবং এর উত্তর খোঁজা। ব্লগ হিসেবে সামু কোথায় এবং কেন অনন্য? কেনো ব্লগার ক্ষরায় সামু? আগের অনেক ভালো ব্লগাররা কেনো এখন আর লেখেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতে সাবলিলভাবে সকলেই অংশগ্রহণ করেছেন। তবে শেষ দিকে কুহক ভাই যেন কেবল শ্রোতা। তার ক্যামেরা আর লেন্স এর ব্যাগের ভারে নুয়ে পরেছিলেন কিনা জানিনা। তবে যেন মৌন শ্রোতা, যেন শিখছেন, যেন জানছেন। তার মুখ দিয়ে কথা বের করা খুবই দুসাধ্য। এতো কথার তোড়ে কখন যে সাড়ে আটটা বেজে গেছে টের পাইনি। উঠতে হলো। আবার আড্ডা হবে ঈদের পর। এই রমজানে হয়তো আর হবে না, কে জানে ইফতার পার্টি হবে কিনা এখনো নিশ্চিত নই। সাহিত্য আড্ডার পক্ষ থেকে ইফতার পার্টি হলে অবশ্যই সপ্তাহ খানেক আগে জানিয়ে দেয়া হবে।
সময়ের অভাবে ছবি সংযুক্ত করতে পারলাম না। অন্য এক সময় ছবিগুলো যুক্ত করে দিবো। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।