মুসার এই দাবীটা দেশের ট্রেকিং - মাউন্টেনিয়ারিং কমুনিটিতে যঠেষ্ট সমালোচিত হয়েছে । প্রায় অসম্ভব একটা কাজ , গানিতিক ভাবে একরকম সম্ভব হলেও তার বাস্তবতা কতটুকু সেটা এখনও অপ্রমাণিত একটা বিষ্ময় । যদিও আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মুসাকে এ বিষয়ে সমালোচনা করার পক্ষপাতি না । আমার চিন্তা বা উৎকন্ঠার বিষয় মুসা নিজেও তার বক্তব্যের পক্ষে কোন যুক্তি প্রমাণ দিলেন না , আর বিরোধীরাও কোন কারণ ডর্শালেন না , কেন টারা মনে করছেন পঞ্চগড় থেকে এভারেষ্ট দর্শণ অসম্ভব । গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী 'চুলোচুলি স্টাইল' বাদ দিয়ে যক্তি - গণিত - ভৌগলিক জ্ঞান নির্ভর তর্কাতর্কি হলে সেটা অবশ্যই অনেক উপভোগ্য হত ।
আমরা জানি পৃথীবীর বক্রতার কারণে দূরের কোন বস্তুর গোড়াটা দেখা যায় না । সাগরে দূরের জাহাজের মাস্তুল আগে দেখা যায় , পরে কাছে এলে পুরা জাহাজটা দেখা যায় । বস্তুর কতটা দিগন্তের নীচে হারিয়ে যাবে তা নির্ভর করে তার কৌণিক দূরত্ব কতটা তার উপর । পঞ্চগড় এভারেষ্ট চুড়া থেকে ২৫০ কিলো মিটারের কাছাকাছি দূরত্বে অবস্হিত । পৃথিবীর পরিধী ৪০,০০০ কিলো মিটার । এই চল্লিশ হাজার কিলোমিটার পথ বৃত্তের কোন হিসেবে ৩৬০ ডিগ্রী । আর হিসেব করলে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্রে ২.২৫ ডিগ্রী কোন তৈরী করবে । আর পৃথিবীর ব্যাসর্ধ ৬৩৭০ কিলো মিটার হিসেবে ২.২৫ ডিগ্রী দূরের কোন বস্তুর গোড়া থেকে ৪.৯ কিলোমিটার অংশই দেখা যাবে না ! মানে প্রায় ১৬০০০ ফুটের বেশী গায়েব হয়ে যাবে।
উদাহরণ দিলে বিষয়টা সোজা হতে পারে কিছুটা । মনে করেন আপনি সাড়ে চার/ পোনে পাচ কিলোমিটার উচ্চতার একটা টাওয়ার তৈরী করলেন অনেক দূর থেকে লোকেরা দেখবে এই আশায় । আপনি যদি ২৫০ কিলোমিটার দূর থেকে এটা দেখার চেষ্টা করেন এর কিছুই আপনার নজরে আসবেনা , পুরাটাই দিগন্তের নীচে 'গায়েব' হয়ে যাবে । কোন শক্তিশালী দূরবিণ - মেশিন পত্র ফিট করে কোন কাজ হবে না ।
গণিত থেকে এখন যদি বাস্টবে আসেন তবে বাংলাদেশের আব হাওয়ার প্রেক্ষিটে বলতে হয় অধিক আদ্রতার কারণে বাংলাদেশে ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরের জিনিষটাই ঠিকমত দেখা যায় না । আমি নিজে ১০ বারের বেশী কেওক্রাডং গিয়ে কমপক্ষে ৬ বার ২৬ কিলো দূরের সাকা'র ছবি ূলতে চেষ্টা করে একটাও মোটামুটি স্পষ্ট ছবি পাইনি ! তাই পঞ্চগড় থেকে এভারেষ্ট বা এতটুকু দুরত্বের দর্শন কতটা দূরুহ তা বলার অপেক্ষা রখে না । আর যদি দেখাও যায় ত্রিকোণোমিতির হিসেবে তার আকৃতি এক ডিগ্রীর চেয়েও কম হবে । মানে আপনার হাত সামনে বাড়িয়ে ধরলে কেনি আংগুলের নখের চেয়েও ক্ষুদ্র হবে তার আকৃতি !
সেটাও সমস্যা না , বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের পাহাড় পর্বত নিয়ে যে 'বিশ্ব মান' এর জ্ঞান , তাতে এই ক্ষুদ্র অস্পষ্ট বস্তুপিন্ডের মাঝে উনারা এভারেষ্ট চিনবেন কি করে ? সেখানে এভারেষ্টকে চিনলেন কি করে , কোনটা এভারেষ্ট ? একটা অস্পষ্ট লাইনে কোনটা পাহাড় কোন টা চুড়া আর কোনটাই বা এভারেষ্ট এটা ভেবেই আমি একেবারে টাসকিত । সেখানে তো একই সরল রেখায় বেশ কয়েকটি পর্বতের সাথে এভারেষ্ট মাখামাখি অবস্হায় থাকবে ( আদৌ যদি কিছু দেখা যায় )! অবশ্য আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব মানের এডভেঞ্চার একটিভিষ্ট ওয়াসফিয়া নাজরিন যখন নুপসে চুড়া দেখিয়ে মাকালু আর লোসে ডাবী করতে পারেন , সেখানে সেই দেশ সম্ভব অনেক কিছুই । ওনাদের অনৈতিক কাজ গুলো আমাকে যতটা বিব্রত করে তার থেকে বেশী আহত হই যখন দেখি ওনার দেশের মানুষকে পুরাই বলদ মনে করেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০০