۞۞ যারা আলেম সমাজকে "মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত" বলে তাদেরকে বলছি ۞۞
আমাদের দেশে মাদ্রাসায় কারা পড়ে?
আমাদের দেশে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা মাদ্রাসায় পড়ালখা করে। স্কুল-কলেজে পড়ালেখার খরচ বেশী বলে মাদ্রাসায় বিনা বেতনে ও কম খরচে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে তারা তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে। বড় লোকেরা তাদের সন্তানকে ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্টিত করতে সন্তানদের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকে। অন্যদিকে গরীব ও মধ্যবিত্ত বাবা-মারা তাদের সন্তানকে কম খরচে অথবা ফ্রিতে পড়ালেখা করার জন্য মাদ্রসায় পড়াতে বাধ্য হয়।
অনেক কষ্ট করে একজন মাদ্রাসার ছাত্রকে পড়ালেখা করতে হয়। লজিং থেকে, অথবা হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয়। মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে স্কুলের বইসহ কোরআন, হাদিস, ফেকাহ, উর্দ্দু,ফার্সি ও আরবী সাহিত্য পড়তে হয়। মাদ্রাসার পড়ালেখা করা যে কত কঠিন একমাত্র মাদ্রাসার ছাত্ররাই বলতে পারে।
মাদ্রাসা থেকে পাশ করার পর আলেমদেরক চাকরীর জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। আলেমদের জন্য কর্মক্ষেত্র সীমিত। যোগ্যতা থাকা সত্বেও তারা অনেক প্রতিষ্টানে কাজের জন্য দরখাস্তও করতে পারেনা। তাই তারা বাধ্য হয়েই ছোট খাট চাকরী করে সংসার চালায়। কেউবা বিদেশে পাড়ি জমায়।
উপরের শিরোনাম "মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত" বাক্য উচ্চারণ করে যারা মাদ্রাসার ছাত্র ও আলেম সমাজকে কটুক্তি করে তাদেরকে বলতে চাই, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্ন্ত আলেমের প্রয়োজন আছে।
আলেমরা আমাদের কতটুকু উপকার করছে আসুন দেখে নিই।
১. প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে আলেমরা আযান দিয়ে থাকেন। আমাদেরকে আলেমদের পেছনে জামায়েতে নামায পড়তে হয়।
২. আলেমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে কোরআন, হাদিস ও বিভিন্ন মাসআলা শিক্ষা দেন।
৩. প্রতি শুক্রবারে জুমার খুতবা ও নামায আলেমরা পড়িয়ে থাকেন।
৪. রমযান মাসে আলেমরা খতমে তারাবিহ এর নামায পড়ান।
৫. আলেমরা মুসলিম পরিবারে বিয়ে পড়িয়ে থাকেন।
৬. কোন বিপদ-আপদ হলে আমরা আলেমদের কাছে ছুটে যাই। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দোয়া নিয়ে থাকি।
৮. আলেমরা মুসলমানদের জানাযার নামায পড়িয়ে থাকেন।
৯. দুনিয়ার চাকচিক্য নিজেকে বিলিয়ে না দিয়ে মাদ্রাসা থেকে পাস করা আলেমরা সারাক্ষন আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন করতে ব্যস্ত আছেন।
১০. কিছু কিছু আলেম হয়ত ভুল পথে চলে তাই বলে সকল আলেমকে ঘৃনা করা বা দোষারোপ করা উচিত নয়।
হে প্রিয় ভাই-বোন! আপনি যদি সত্যিকারের মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে মাদ্রাসা ও আলেম সমাজ নিয়ে আজে বাজে কথা বলবেন না। "মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত" এই বাক্য উচ্চারণ করবেন না। আলেমদের কাছ থেকে ইসলামের গুরত্বপূর্ন মাসআলা জেনে নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করুন।
কোরআন ও হাদিসে আলেমের মর্যাদা কতটুক আসুন জেনে নিইঃ
অলেমের মর্যাদাঃ
আলেমের মর্যাদা ইলমের কারণে। আল্লাহ তায়ালা আলেমদের সাধারণ মানুষের ওপর মর্যাদা দান করেছেন।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আলেম এবং যারা আলেম না; তারা কি সমান হতে পারে?’ (জুমার : ৯)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আলেমদের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? (রাদ : ১৬)।
কুরআনে আলেমদের মর্যাদাদানের কারণ সম্পর্কেও বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই তাঁকে অধিক ভয় করে।’ (ফাতির : ২৮)।
মানুষের মাঝে আলেমরাই অনুকরণ এবং অনুসরণযোগ্য। কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি না জানো তবে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো। (নাহল : ৪৩)।
অন্য দিকে আলেমরাই আল্লাহর প্রভূত কল্যাণ এবং অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যাকে প্রজ্ঞা (গভীর ইলম) দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে। (বাকারা : ২৬৯)।
তা ছাড়া আলেমদের মর্যাদাদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর তাদেরকে দায়িত্বশীল বানিয়ে দেয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করে না? (মায়েদা : ৬৩)।
পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেও আলেমের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের ওপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের ওপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।’ (সহি তিরমিজি)।
অন্য হাদিসে মহানবী (সাঃ) বলেন,‘দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষিত একজন আলেম শয়তানের মোকাবেলায় একজন অজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী। (সহি তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ)।
অপর দিকে মানুষের মধ্যে যার কল্যাণ চাওয়া হয় তাকেই কেবল আলেম হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করেন। (সহিহ বুখারি, মুসলিম ও ইবনু মাজাহ)।
সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরা হলেন নক্ষত্ররাজিতুল্য। যাদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সìধান লাভ করে থাকে। মহানবী (সাঃ) বলেন, পৃথিবীতে আলেমদের উদাহরণ হলো নক্ষত্ররাজির মতো। এদের সাহায্যে জল ও স্খলের অìধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যদি তারকারাজি নির্মিলিত হয়ে যায়, তবে পথিকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। (মুসনাদে আহমাদ ও জামিউস সগির)।
মহানবী (সাঃ) আরো বলেন, নিশ্চয় আলেমরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। (সহি তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান ও হাকিম)।
মহানবী (সাঃ) আলেমদের সম্মান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আলেমকে সম্মান করল সে যেন আমাকেই সম্মান করল।’ (দারেমি)।
আলেমরা হলেন ঈর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের গভীর ইলম দান করেছেন। মহানবী (সাঃ) বলেন, কেবল দুই ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা যায়। এক. সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সেই সম্পদ সত্য-ন্যায়ের পথে খরচ করে। দুই. সেই আলেম যাকে আল্লাহ তার দ্বীনের গভীর ইলম দান করেছেন এবং তার দ্বারা তিনি রায় প্রদান করেন।’ (সহি বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ)।
অপর এক হাদিসে মহানবী (সাঃ) আলেমকে সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকেও তা শিক্ষা দেয়।’ (ইবনু মাজাহ)। এমনিভাবে কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে আলেমদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে।
সুতরাং, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে, ইলম এবং আলেমের মর্যাদা আকাশ সমতুল্য। ইলমের পথই হলো সমৃদ্ধির পথ। আর যারা আলেম তাদেরকে সম্মান করা অবশ্য কর্তব্য। এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি এবং বরকত নিহিত রয়েছে।