ভার্সিটির ছাত্র। কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি। আড্ডা, মাস্তি, চা-সিগারেট খেয়ে দিন কাটে। সিগারেট জিনিসটা অনেক রহস্যময়। দুরে থাকলে কাছে টানে, আর বেশী কাছে গেলে পুরা লাইফকেই ছ্যাকা দিয়ে দেবে। মানে গুডবাই মাই ডিয়ার আর্থ। তাই সবাই প্রায় সময়ই চেষ্টা করি ছেড়ে দেয়ার। কেউ কেউ নতুন প্রেম শুরু করার পর গার্লফ্রেন্ডের মাইর খেয়ে ছেড়ে দেয়(২-৩ দিন এর জন্য)। আমি দুইদিন পরপর নেটে নিকোটিন আক্রান্ত ফুসফুসের ছবি দেখি আর ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মনের জোড় কম। তাই পারিনা। সবার বদ-অভ্যাস হল সিগারেট খাওয়া আর আমার বদ-অভ্যাস হল সিগারেট ছেড়ে দেওয়া। এবং কিছুদিন পর আবার শুরু করা। যাই হোক, নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি যে মনে হয় ভার্সিটি লাইফ এ ছাড়তে পারবনা। সুতরাং, ধুম মারো ধুউউউম, ইয়ে হে গোল্ডলিফ কি ধুম। ইকোনমিক্স কোর্সে পড়েছিলাম যে দেশ ধূমপানমুক্ত করার জন্য সিগারেটের দাম না বাড়িয়ে গণ-সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বড় বেরসিক। উনি মনে হয় আমারই মত ফাকিবাজ ছাত্র ছিলেন, এই তথ্যটা জানেননা। দিলেন সিগারেট এর দাম বাড়িয়ে। কি আর করা। কম খাই।
আমাদের এক ফ্রেন্ড আছে। নতুন প্রেম শুরু করেছে। গার্লফ্রেন্ড এর ব্যপক ঝাড়ি খায় সিগারেট ছাড়ার জন্য। কিন্তু বেচারা ছাড়তে পারেনা। কারণ আমার একসাথে যে কজন থাকি একেকজনের যখন ছাড়ার তাল উঠে তখন বাকিরা নির্বিকার। কিন্তু এবার একই টাইমে বন্ধু কঠিন ঝাড়ি খাইল, সিগারেটের দাম বাড়ল এবং আমরা সিগারেট ছাড়ার উদ্যোগ নিলাম। বন্ধু একটা মিটিং ডেকে বিশাল ভাষণ দিল। ‘সিগারেট অনেক ক্ষতিকর। আমাদের সিগারেট ছেড়ে দেয়া দরকার। আমরা এখন থেকে সিগারেট না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে প্রতিদিন আম-কাঠাল খাবো।’ সবাই রাজী। গঠিত হল আম-কাঠাল কমিটি।
কমিটির প্রথম কর্মদিবসে আমরা ৩ জন মার্কেটে গেলাম ফল কিনতে। গিয়ে খেয়াল করলাম আমরা ৩ জনই ননীর পুতুল। জীবনে আম-কাঠাল কিনিনাই। তবুও ব্যাপক ভাব নিয়ে দামাদামি শুরু করলাম। এক দোকfনী এক বিশাল সাইজের কাঠাল দেখিয়ে দাম চাইল ১৮০ টাকা। আমি ভাব নিয়ে বললাম, ধুর কাঠালের দাম কি এত বেশী নাকি? ৩০-৪০ টাকা হবে। দোকানী এমন ভাব নিয়ে তাকাল যে, পাবনা থেকে মাত্র বের হয়ে এসেছি। আমার তাড়াতাড়ি আবার পাবনায় ব্যাক করা দরকার। তা না হলে দেশ ও দশের বিরাট ক্ষতি। যাই হোক অনেক দরদাম করে ১৩০ টাকায় নিলাম। এখন মিশন আম। আমের দোকানের কাছে গিয়ে দেখি যে ২টা ব্যাপক সুন্দরী মেয়ে আম চয়েস করছে। ভাব নেয়া দরকার। ৩ জন ৩টা সিগারেট ধরালাম। ছেড়ে দিসি তো কি হইসে? আম-কাঠাল খেয়ে তো আর মেয়েদের সামনে ভাব নেয়া যায়না। তারপর গেলাম আম কিনতে। এক ফ্রেন্ড অনেক ভাবসাব নিয়ে নাম না জানা এক আমের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে দোকানীকে বলল, “মামা, গোপালভোগ দেন তো একটা। দেখি।” মেয়েগুলা ইমপ্রেসড নয়নে তাকানোর সাথে সাথে দোকানী বলল, এটা গোপালভোগ না। হাইব্রিড। চরম একটা বাউন্সার এবং আমরা কট আউট। যাই হোক কোন রকমে মান ইজ্জত বাচানো হল নানান কথা বলে। মেয়েগুলার সাথে হালকাপাতলা একটু গেজানোরও চান্স পেলাম। আমরা আমাদের ফলমূল সন্ক্রান্ত যত জ্ঞান আছে তার চেয়েও বেশী জাহির করতে থাকলাম। একটা আম চয়েস করে বললাম এটা অনেক মিষ্টি হবে। কারণ হিসেবে কালার, গন্ধ(যদিও আদতে কোন গন্ধই ছিলনা)এবং হার্ডনেসের ব্যাখ্যা দিলাম। মেয়ে আবারো ইমপ্রেসড। কিন্তু বাধ সাধল আমার বন্ধু। সে বলল, টেস্ট করে দেখি কেমন। বাসায় নিয়ে যদি দেখি টক। আমার দুরুদুরু বুক এবং বিস্ফোরিত নয়নের সামনে আম কাটা হল। বন্ধু একটু টেস্ট করেই মুখ থেকে ফেলে দিয়ে আমাকে বলল তুই একটু টেস্ট কর। একটু মুখে দিতেই টকে আমার অবস্থা হাপপেন হয়ে গেল এবং মেয়ে দুটার সামনে ইজ্জত ফানাফানা হয়ে গেল। আর মেয়েগুলাতো মুখে দিয়ে চিৎকার করে উঠল। তারপর বলল, ‘হ্যা ভাইয়া। অনেক সুইট আম।’ পুরাই পাংচার হয়ে গেলাম। রাগ ঝাড়লাম দোকানীর উপর। সে ব্যাপক ফাপর খেয়ে বলল, “মামা আমি কি করমু? দুই নাম্বার ফরমালিন দিসে। আমার কুনো দোষ নাই।” হায়রে বাংলাদেশ। সবইতো ভেজাল খাই। এখন কি একটু খাটি ফরমালিন যুক্ত আমও কপালে জুটবেনা? যাই হোক, আম কেনা ক্যানসেল। মান-ইজ্জত সব ফরমালিনে মিশিয়ে ৩ জন তিনটা ম্যাংগো জুস কিনে বিষন্ন বদনে আবার সিগারেট ধরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে মোটা তার কাছে কাঠাল দেয়া হল। রিকশা খুজতে গেলাম। রিকশায় উঠে যাত্রা শুরু করার মুহুর্তে পাশে নারীকন্ঠের শব্দ শুনতে পেয়ে ৩ জনই ঘুরে তাকালাম এবং স্বভাবসুলভ হাসি দিলাম। কিন্তু যা দিনকাল পরসে, নারীরাও তাদের দিলে ফরমালিন দিয়ে বসে থাকে। একজন বলল, “দেখ, বাচ্চাদের মত জুস খায়। আবার দেখ, এক কাঠাল আরেক কাঠাল কোলে নিয়ে বসে আছে।” আরেকজন বলল, “না না। এরা বৃদ্ধ শিশু। সিগারেটও খায়।” তারপর অট্টহাসি। ইভটিজিং তো নিষিদ্ধ। তা না হলে দেখিয়ে দিতাম।
এখন কথা হল, এই দেশে আমরা ফরমালিনমুক্ত আম-কাঠালের আশা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন কি একটু খাটি ফরমালিনও পাবো না? ভেজাল ফরমালিনযুক্ত আম-কাঠাল কিনতে গেলেও রাস্তা-ঘাটে অ্যাডাম-টিজিং এর শিকার হতে হয়। চাল-ডাল-তেল সব কিছুর দামই নাগালের বাইরে। খিদা লাগলে সিগারেট খাই। এখন কি এটার দামও না বাড়ালে চলেনা? চাইলাম আম-কাঠাল খেয়ে থাকতে। কিন্তু ভেজাল ফরমালিন তাও খেতে দিলনা। খামু কি এখন? অনেক চেয়েছি মদ ছেড়ে দুধ খাওয়ার মত সিগারেট ছেড়ে আম-কাঠাল খাওয়ার। কিন্তু এই নারীজাতি আর দেশ তা হতে দিলনা। আমরা এখন কোথায় যাব, কি করব? জাতির ফরমালিনযুক্ত বিবেক এর কাছে ফরমালিনমুক্ত প্রশ্ন। সেই দিন মনে হয় আর বেশী দুরে নেই যেদিন পত্র-পত্রিকার শিরোনাম আসবে. “অ্যাডাম টিজিং এর শিকার হয়ে যুবকের আত্নহত্যা।” তাই এখনই সময় কিছু একটা করার। নাইলে সিগারেট, আম-কাঠাল, অ্যাডাম টিজিং খাওয়ার বদলে যুব-সমাজ সুইসাইড খাওয়াকেই বেছে নেবে।
=============================================
(আংশিক কাণ্পনিক)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৭