লালন কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আপনাদের রাগাব না । তার কিছু গানের লিখা শেয়ার করছি আশা করি ভাল লগবে।
১.
সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না
নদীর জল শুকালে মীন পালাবে
পস্তাবি রে ভাই-মনা
সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না
ত্রিবেণীর ঐ তিরোধারে
মীন রূপে সাঁই ঘোরে-ফিরে
উপর উপর বেড়াও ঘুরে
সেই গভীরে ডুবলে না
সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না
মাসান্তরে মহাযোগ হয়
নিরসেতে রস ভেসে যায়
করলে না সে যোগের নির্ণয়
মীন-রূপে খেলা খেললে না
জগত জোড়া মীন অবতার
ছন্দির বোঝা ছন্দির উপর
সিরাজ সাঁই কয় লালন এবার
গেলনা আওনা যাওনা
২.
কিঞ্চিত ধ্যানে মহাদেবও
তার তুলনা কি আর দিব
লালন বলে গুরু ভাব
যাবে রে মনের ধোঁকা
পাবে সামান্যা কি তার দেখা
৩.
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি
মানুষ ছেড়ে ক্ষেপা রে তুই মূল হারাবি
দ্বি-দলের মৃণালে,
সোনার মানুষ উজ্জ্বলে
মানুষ গুরুর কৃপা হলে সবই জানতে পাবি
এই মানুষে মানুষ গাঁথা,
দেখ না যেমন আলেক লতা
জেনে-শুনে মুড়াও মাথা, জাতে উঠবি?
মানুষ ছেড়ে মনরে আমার,
দেখবি তুই সব শুন্যকার
লালন বলে মানুষ আকার ভজলে ত্বরাবী
৪.
এক ফুলের মর্ম জানতে হয়
যে ফুলে অটল বিহারী
বলতে লাগে ভয়।।
ফুলে মধু প্রফুল্লতা,
ফলে তার অমৃত সুধা।
এমন ফুল দুনিয়ায় পয়দা
জানিলে দুর্গতি যায়।।
চিরদিন সেই যে ফুল,
দিন দুনিয়ার মকবুল।
যাতে পয়দা দিনের রাসুল,
সে ফুলতো সামান্য নয়।।
জন্মপথে ফুলের ধ্বজা
ফুল ছাড়া নয় গুরু পূজা।
সিরাজ সাঁই কয় এ ভেধ বুঝা
লালন ভেড়োর কার্য নয়।।
৫.
আপন সুরতে আদম গঠলেন দয়াময়
তা নইলে কি ফেরেশতারে সেজদা দিতে কয়
আল্লাহ আদম না হইলে
পাপ হইত সেজদা দিলে
শেরেকি পাপ যারে বলে
এ দীন দুনিয়ায়
দুষে সে আদম সফি
আজাজিল হল পাপী
মন তোমার লাফালাফি
সেরূপ দেখা যায়
আদমি হলে চেনে আদম
পশু কি তার জানে মরম
লালন কয় আদ্য ধরম আদম চিনলে হয়
৬.
দেখ না মন ঝাকমারি এই দুনিয়াদারী ।
পরিয়ে কোপনি ধ্বজা,মজা উড়ালো ফকিরি ।।
বড় আশার বাসা এ ঘর
পড়ে রবে কোথা রে কার
ঠিক নাই তারি,
পিছে পিছে ঘুরছে শমন
কোনদিন হাতে দেবে দড়ি ।।
দরদের ভাই বন্ধুজনা
ম'লে সঙ্গে কেউ যাবে না
মন তোমারই,
খালি হাতে একা পথে
বিদায় করে দেবে তরী ।।
যা করো তাই করো রে মন
পিছের কথা রেখো স্মরণ
বরাবরই,
দরবেশ সিরাজ সাঁই কয় শোনরে লালন
হোসনে কারো ইন্তেজারী ।।
৭.
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপন্থি সেই দেখিতে পায় অনায়াসে।।
তিনশো ষাট রসের নদী বেগে ধায় ব্রহ্মাণ্ড ভেধী
তার মাঝে রূপ নিরবধি ঝলক দিচ্ছে এই মানুষে।।
মাতা পিতার নাই ঠিকানা অচিন দেশে বসত খানা
আজগুবি তার আওনা যাওনা কারণবারির যোগ বিশেষে।।
অমাবস্যায় চন্দ্র উদয় দেখতে যার বাসনা হৃদয়
লালন বলে থেকো সদাই ত্রিবেনীর ঘাটে সদাই।।
৮.
আমি কি সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবা রাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পারি দিতে ত্রিবিণে (ত্রিবেণী)
কত ধনীর ধারা যাচ্ছে মারা
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চিনে
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মইলাম জ্বলে
মইলাম আমি নিশি দিনে
আমি মনিহারা ফণির মতো
হারা হলাম পিতৃধনে
নিতান্ত সরল অর্থ , অতি পরিষ্কার ,
বহু পুরাতন ভাব , নব আবিষ্কার ।
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ
শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ ।
বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বদী ।
আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি
আণব চৌম্বকবলে আকৃতি বিকৃতি ।
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ
ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভূত ।
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপজ্ঞে প্রকট —
সংক্ষেপে বলিতে গেলে , হিং টিং ছট্ । '
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে , শুনে পুণ্যবান ।
৯.
আমার ঘরের চাবি পরের হাতে
আমি কেমনে খুলে সে ধন দেখব চক্ষেতে?
আপন ঘরে বোঝাই সোনা/ পরে করে লেনাদেনা
আমি হলেম জন্ম কানা না পাই দেখিতে
আমার ঘরের চাবি ...
এই মানুষে আছে রে মন, যারে কয় মানুষ রতন
লালন বলে পেয়ে সে ধন, পারলাম না রে চিনিতে
আমার ঘরের চাবি ...
১০.
গুরু দোহাই তোমার, মনকে আমার লও গো সুপথে।
তোমার দয়া বিনে তোমার সাধন করব কি মতে
তুমি যারে হও গো সদয়
সে তোমারে সাধনে পায়
বিবাদী তার স্ববশে রয়
তোমার কৃপাতে
যন্ত্রেতে যন্ত্রী যেমন
যেমত বাজায় বাজে তেমন
তেমনি যন্ত্র আমার মন
বোল তোমার হাতে
জগাই মাধাই দস্যু ছিল
তারে গুরুর কৃপা হল
অধীন লালন দোহাই দিল
সেই আশাতে
১১.
যেখানে সাঁইর বারামখানা ।
শুনিলে প্রাণ চমকে উঠে
দেখতে যেমন ভুজঙ্গনা ।।
যা ছুঁইলে প্রাণে মরি
এ জগতে তাইতে তরি
বুঝেও তা বুঝতে নারি
কীর্তিকর্মার কি কারখানা ।।
আত্নতত্ত্ব যে জেনেছে
দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে
কুবৃক্ষে সুফল পেয়েছে
আমার মনের ঘোর গেল না ।।
যে ধনে উত্পত্তি প্রাণধন
সে ধনের হল না যতন
অকালের ফল পাকায় লালন
দেখে শুনে জ্ঞান হল না ।।
"আনেক ভাল লাগে লালন
লালন চর্চা চলুক এই প্রত্যাশায়
আজ এটুকই ..... কষ্ট করে পরার জন্য ধন্যবাদ