*ইউটোপিয়া, তুমি থাক বা না থাক, নৃত্যরতা, তুমি দেখা দাও বা না দাও, আমি আসবো। আমি আমার মত করে গড়ে নেব শান্তি-সুখের জগত আর ডান্সরিয়ালিজম, মাসে ঘন্টাখানেকের জন্যে প্রচুর অর্থ এবং স্বাস্থ্যের বিনিময়ে হলেও...*
এটুকু বলেই সুচেতনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ।সুচেতনা আপন মনে রজনীগন্ধা দিয়ে ফুলদানি সাজাচ্ছে ।সদ্য স্নান করে এসেছে ।হালকা ভেজা চুল কপালে গালে লেপ্টে রয়েছে কামুক পুরুষের মতো ,সিন্গ্ধ একটা গন্ধ সুচেতনার শরীর থেকে পাচ্ছি ,হ্যা স্পষ্ট পাচ্ছি ।বেশ কিছুক্ষণ পর সুচেতনা আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল
-প্রচুর অর্থ এবং স্বাস্থ্যের বিনিময়ে মাসে ঘন্টাখানেকের জন্যে যে সুখ শান্তির জগত ,যে ইউটোপিয়া ,তা বাস্তব কে অস্বীকার করা নয়তো ?
সুচেতনা যে দিনে দিনে একটা গবেট হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছি ।কোথায় সেই কলেজের তন্বী মেয়েটি ,যে তার প্রেমিকের সাথে দেখা করবার জন্য গভীর রাতে বৃষ্টির মধ্যে একাকী আমার ফ্ল্যাটে এসেছিল ,তার সমস্ত শরীর মন উত্সর্গ করেছিল আমার কবিতার কাছে ।যে কলেজ ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখত রঙ্গিন প্রজাপতির মত ,গুন গুন করে গান শোনাত ভ্রমরের মতো ।
আজ সে আমাকে আমার সুখ শান্তির জগত কে ,আমার বাস্তব কে ,তার বাস্তব দিয়ে অস্বীকার করেছে ?
ধুর সবই আপেক্ষিক ।সংসার করতে গেলে ঐসব ছেদো কাব্যি যে জানালা দিয়ে পালায় ,সেটা আমি না বুঝলেও ,সুচেতনা কিন্তু ঠিকই বুঝছে ।
বিরক্তি এড়াতে আরেক পাত্র সুরা গলাস্থ করে একটু কাপট গম্ভীর স্বরে বললাম
-আজ রাতে কি করেছ ?
-চিকেন
-ধুর বাল ! প্রতিদিন এই চিকেন খেয়ে খেয়ে নিজেই চিকেন হয়ে যাচ্ছি ।
-বাজারে না গেলে আমি কি করব বল ?
-তোমাকে তো বলেছি আমার ওই বাজারে যেতে ভালোলাগে না ।তুমি যাও না কেন ?তোমার আবার কি কাজ ?
-বাহ !বাজার করা টাও আমার কাজ ?
দিন দিন বউ টা ঝগরাটে হয়ে যাচ্ছে ।একটু নরম হয়ে বললাম ,কি বলছিলে যেন তুমি ?
-কি বলছিলাম ?
-আরে ওই বাস্তব থেকে পালানো , না কি সব
-ওহ !! থাক আর শুনতে হবে না ।
- আরে বলই না
-না না রাত হয়েছে ,এবার খেয়ে ঘুমিয়ে পর ।কাল আবার অফিস আছে না ।
-সেই মিডল ক্লাস মেন্টালিটি ।প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কথা টা বললাম ।
জানি এবার সব চুপ চাপ থাকবে ।অন্তত দু দিন সুচেতনা আমার সাথে আর কথা বলবে না ।
পরিস্থিতি একটু নরম করবার জন্য বললাম
-এই ধর ,যেমন তুমি ।সকালে হাসপাতালে যাও ,বাড়িতে কাজের লোক রাখো না ,এসে সব কাজ আবার নিজের হাতে করো ।সেই এক কাজ প্রতিদিন ।তোমার স্বধীনতা কোথায় ?তোমার আত্মা কোথায় বেচে আছে ?
-স্বাধীনতা !স্বাধীনতা কোনো সামাজিক চুক্তি না বরং মনের একটা অবস্থা ।একটু গম্ভীর মুখে সুচেতনা জবাব দিল ।
-তত্ব কথা দিয়ে কি হবে !!আদপে তুমি পরাধীন তোমার বাস্তবের কাছে ।
-আমার বাস্তব আমি বাড়িয়ে দিয়েছি ।
-মানে ?কি বলতে চাইছ ?
-যেমন হাসপাতালের প্রতিটা রুগী বাস্তব আমার কাছে তেমন তুমিও বাস্তব আমার কাছে ।আর বাস্তবতার সীমা কে আমি এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছি ,যে নিজেকে সকলের মাঝে খুঁজে পাই ।আমার সীমাবদ্ধ মন অসীমে গিয়েও শেষ হয় না ।অদ্ভুত আনন্দে মন প্রাণ ভরে থাকে |আমার ইউটোপিয়া তুমি ,আমার ইউটোপিয়া হাসপাতালের রুগীরা ,আমার ইউটোপিয়া ময়দানে বেহালা বাজানো লোক টা ,আমার ইউটোপিয়া আমাদের বাস্তব ।
আজ সুচেতনা যেন প্রাণ খুলে কথা বলছে ।আমি অবাক বিস্ময়ে সুচেতনার দিকে তাকিয়ে আছি ।দেখে মনে হছে আমার সামনে যেন এক কিন্নরী দাড়িয়ে আছে ।আমি মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি ।
সুচেতনা ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে বসে ।ঠোটে আলতো চুম্বন একে দেয় ।কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে "যখনি মনে সংশয় হবে ,নিজের শরণ নেবে ,নিজেকে প্রশ্ন করবে ,অন্যের শরণ নেবে না ......আত্ম ভব শরণং "এই কথা টা কে বলেছিল জানো ?
-না
-গৌতম বুদ্ধ ।
আজ অনেকদিন পর শহরে বৃষ্টি নেমেছে ।শহরের গ্লানি ধুয়ে দেবার জন্য হ্যালোজিনের উপর থেকে হলদে বৃষ্টির ফোটা মাটিতে মিশে যাছে ।ব্যালকুনি তে একটা সিগারেট হাতে দাড়ালাম ।বৃষ্টির ঠান্ডা ছাট গায়ে লাগছে । দুরে কোথাও আজান শুরু হলো ,মন্দির গুলো তেও সন্ধ্যাকালীন আরতি শুরু হয়েছে ।আশ্চর্য আজ আজান ,আরতি আমার কাছে যেন একটা বার্তাই দিচ্ছে -.......আত্ম ভব শরণং ......আত্ম ভব শরণং
* দেওয়া লাইনটা ব্লগার হাসান মাহবুব এর ইউটোপিয়া গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে ।