বাংলাদেশ ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ আজকে। বাংলাদেশের জন্য নিজের ভেন্যু। টস জিতে ব্যাটিং পেলে আশা করা যায় বাংলাদেশ বেশ বড় স্কোর করবে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান রা ফর্ম এবং আত্নবিশ্বাসের তুঙ্গে। ইংল্যান্ড কে হারানোর অভিজ্ঞতা অনেক বার ই হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান রা ধুমধাম পিটিয়ে অনেক রান করে ফেলবে বলেই আশা করা যায়! গত বিশ বছরে ব্যাটসম্যান ছাড়াও বাংলাদেশে অনেক ‘চাপাতিম্যান’ তৈরি হয়েছে। ব্যাটসম্যান রা যেমন ধুমধাম করে বল পিটায় এরাও তেমন ধুমধাম করে মানুষ কোপায়। ব্যাটসম্যান রা যেমন সব সময় সফল হয়না, নিরান্নব্বুই রানে আউট হয়ে যায়, সেরকম চাপাতিম্যান রাও সব সময় সফল হয়না। ভিক্টিমের মাথায় ঘাড়ে অজস্র কোপ দেবার পরেও ভিক্টিম মরতে মরতে বেঁচে যায়। এটা অবশ্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারনেও হতে পারে। চাপাতি হয়ত যথেষ্ট ধারালো ছিল না। অথবা চাপাতি ম্যানের গ্রিপে সমস্যা। কোপানোর সময় চাপাতি কিভাবে ধরলে কোপ সঠিক ভাবে ঘাড়ে পড়বে সেই বিষয়ে সে সঠিক কোচিং পায়নি। এটা সব সময় যে কোচের সমস্যা সেটা নাও হতে পারে। হয়ত চাপাতিম্যান যথেষ্ট প্রতিভাবান নয়। কোচের নির্দেশ পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা তার নাই। সে কেবল ভালবাসার টানেই চাপাতিম্যান হতে এসেছে! যাই হোক, সমাজ-রাষ্ট্র-ভালোবাসা যেরকম ব্যাটসম্যান দের জন্য খেলার ভেন্যু তৈরি করে সেরকম চাপাতিম্যান দের জন্যেও কোপানোর ভেন্যু তৈরি করে। খেলার ভেন্যু তে ব্যাটসম্যান রা আরাম করে বল পিটায়। কোপানোর ভেন্যু তে চাপাতিম্যান রা আরাম করে মানুষ কোপায়। সেঞ্চুরি করার পর ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ডগা থেকে যে আত্নবিশ্বাসের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়, কুপিয়ে মানুষ হত্যা করার পর চাপাতিম্যানের রক্তাক্ত চাপাতির ডগা থেকেও সমান আত্নবিশ্বাসের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়। সেঞ্চুরি করার পর একজন ব্যাটসম্যান নিজেকে যতটুকু বিজয়ী ভাবে, কুপিয়ে মানুষ হত্যা করার পর একজন চাপাতিম্যান ও নিজেকে ততটুকুই বিজয়ী ভাবে। এক রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলে ব্যাটসম্যানের যেরকম আক্ষেপ হয়, একটা কোপ লক্ষ্যভেদী না হবার কারনে ভিক্টিম বেঁচে গেলে চাপাতিম্যানের ও ঠিক একই রকম আক্ষেপ হয়। সমাজ-রাষ্ট্র-ভালোবাসা তিন শক্তি মিলে একজন বড় ব্যাটসম্যান যেমন তৈরি করতে পারে সেরকম বড় একজন চাপাতিম্যান ও তৈরি করতে পারে। একজন ব্যাটসম্যান যেমন সেঞ্চুরি করে বা সেঞ্চুরি মিস করে সংবাদ শীরোনাম হতে পারে সেরকম একজন চাপাতিম্যান ও কুপিয়ে মানুষ খুন করে অথবা খুন করতে ব্যর্থ হয়ে সেরকম সংবাদ শীরোনাম হতে পারে। সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান কে খবরের কাগজে যেরকম সম্মানের সাথে সম্বোধন করা হয়, কুপিয়ে মানুষ খুন করা চাপাতিম্যান কেও খবরের কাগজে একইরকম সন্মানের সাথেই সম্বোধন করা হয়। সেঞ্চুরি করার পর একজন ব্যাটসম্যান অজস্র তরুণের কাছে হিরো তে পরিনত হয়। ঠিক সেরকম কুপিয়ে মানুষ খুন করার পর চাপাতি ম্যান ও অনেক তরুনের কাছে হিরোতে পরিনত হয়। একজন সফল ব্যাটসম্যান পরবর্তী অনেক সফল ব্যাটসম্যান তৈরি হতে যে ভুমিকা রাখে একজন সফল চাপাতিম্যান ও পরবর্তী অনেক সফল চাপাতি ম্যান তৈরি হতে একই ভুমিকা রাখে।
গত আটচল্লিশ ঘন্টায় বাংলাদেশে কাউকে কোপানো না হয়ে থাকলে আমাদের সর্বশেষ হিরো চাপাতিম্যান হলেন জনাব বদরুল আলম। সিলেটের এমসি কলেজ ভেন্যুতে উনি গত পরশুদিন উনার অসাধারণ চাপাতি দিয়ে মানুষ কোপানোর সামর্থ্যের প্রমান রেখেছেন। তাঁকে এই সামর্থ্য প্রমানের সুযোগ করে দিয়েছে খাদিজা নামক এক উদ্ধত বেয়াদপ তরুনী। জনাব বদরুল খাদিজা’র সাবেক গৃহ শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের নেতা হওয়া সত্ত্বেও খাদিজা তাঁর উপুর্যুপুরি প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তিঁনি এতে করে ভীষণ রেগে যান!! জনাব বদরুল নিত্যান্ত বদান্যতা করে পরীক্ষার হলে খাদিজার কাছে ‘বোতল সহ কোমল পানীয়’ পাঠিয়েছিলেন। অথচ উদ্ধত বেয়াদপ খাদিজা সেই কোমল পানীয় কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান করে!উদ্ধ্বত ফাস্ট বোলার ব্যাটসম্যান কে স্লেজিং করলে ব্যাটসম্যানের যেরকম আঁতে ঘা লাগে সেরকম উদ্ধ্বত তরুনী খাদিজা কোমল পানীয় কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান করায় চাপাতিম্যান বদরুলের আঁতেও কঠিন ঘা লাগে। তিঁনি এতে সাংঘাতিক ক্ষেপে যান!! একজন সত্যিকারের ব্যাটসম্যান যেমন ব্যাট দিয়ে বোলারের উদ্ধত্যের জবাব দেন সেরকম একজন সত্যিকারের চাপাতিম্যান হিসাবে বদরুল ও চাপাতি দিয়ে খাদিজার ঔদ্ধত্যের জবাব দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং চাপাতি খরিদ করার জন্য সিলেট নগরের আম্বরখানার দিকে রওনা হন।
চাপাতিম্যান হিসাবে আজকে বদরুলের যে সাফল্য সেটা বদরুলের একার সাফল্য নয়। বদরুল যেই রাষ্ট্রের বাসিন্দা সেই রাষ্ট্র, বদরুল যেই সমাজের বাসিন্দা সেই সমাজ এবং বদরুল যেই পরিবারের সদস্য সেই পরিবার- সবাই কে এই সাফল্যের অংশীদার বলতে হবে। শুধু প্রতিভা থাকলেই দেশ যেমন একজন সফল ব্যাটসম্যান পায়না, এরজন্য রাষ্ট্রের, সমাজের, পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা লাগে, সেরকম শুধু প্রতিভা থাকলেই দেশ একজন সফল চাপাতিম্যান পায়না। এর জন্যেও রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন হয়। যে রাষ্ট্রে একজন বদরুল কেবলমাত্র সরকারী দলের একটি অঙ্গ সংগঠনের নেতা হবার কারনে নিজেকে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশ ভাবতে পারে সে রাষ্ট্রে একজন বদরুল ‘সামান্য একজন উদ্ধত তরুনী’ কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখাত হয়ে তাকে খুন করতেই পারে। যে সমাজ তরুনী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বদরুলের শীশ বাজানো দেখে উত্যক্তকারী বদরুলেরই শীশ্ন চাপড়ে বাহবা দেয় এবং মেয়েদের কাপড়ের দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মেয়েদের স্কুল এবং কলেজের গেটে বখাটে বদরুলদের স্ব-শীশ এবং স্ব-শীশ্ন অবস্থান কে সূনিশ্চিত করে সে সমাজে খাদিজা নামের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকারী কোন বেয়াদপ তরুনীর উপর রুষ্ঠ হয়ে বদরুল নামক কোন ‘ ভীষন রাগী এবং তেজি পুরুষ’ তাকে চাপাতি দিয়ে খুন করতেই পারে।
যে পরিবার সমূহে এখনো ‘খাদিজা বা অন্যকোন নামধারী কন্যা সন্তানে’র পরিবর্তে ‘বদরুল বা অন্যকোন নামধারী পুরুষ সন্তান’ জন্মালে বংশের বাতি রক্ষা হল এই চিন্তায় ‘বাপ মা মামা মামী চাচা চাচী চৌদ্ধগুষ্ঠি সবার পৌরুষের শীশ্ন’ খাড়া হয়ে যায় সেই সমাজে একজন বদরুল তুচ্ছ এক মেয়েমানুষের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাব চাপাতি দিয়ে দিতেই পারে।