‘’Past is assumed as fate. No guilty feeling. You are in the origin. Count your responsibility from this very moment. Think tomorrows sunrise will definitely bring oppurtunity for you. So be pleasured! Replace your ‘fear’ and ‘hatred’ by ‘pleasure’ and ‘love’! Nature has already designed the path for your winning! You are already blessed son! You are!!’’
চিরকুট টা হাতে নিয়ে আমি অবাক বিস্ময়ে আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখছি। তাকে অপ্সরী বললে তার সৌন্দর্য্য টাকে খামাকাই একটা নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে আটকে ফেলা হয়। দীর্ঘাঙ্গি এ ললনা’র সর্বাঙ্গে এত রূপ যে তাকে দেখে মন সহসা কোন স্থূল কামনায় বাঁধা পড়ে না। বরং স্পষ্ট অনুভব করা যায়, এর সঙ্গ পরিপূর্ন ভাবে উপভোগ করতে চাইলে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে আমার যতটুকু বিকশিত হবার দরকার ছিল ততটুকু আমি হই নাই! অদ্ভুদ এক শূন্যতার মুখোমুখি হয়ে নিজেকে অসম্ভব তুচ্ছ মনে হয়।
আমাকে চমকে দিয়ে সারা ঘরে হাসির একটা তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি এ ত আমার পরিচিত মেসের পনের ফুট বাই দশ ফুট ঘর নয়! বিশাল কামরার চারদিকের দেয়াল গুলো সব সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের মত স্বচ্ছ। ঘরের মাঝখানে মাঝখানে ষড়ভুজাকৃতি সব স্তম্ভ। স্বচ্ছ স্তম্ভ গুলোর বিভিন্ন কোনা থেকে মাঝে মাঝেই ঠিকরে পড়ছে হীরের মত দ্যুতি!
অপ্সরী (এছাড়া কি ডাকব বুঝতেছি না) সেই ঘরের কাঁচের মেঝেতে হাসতে হাসতে নেচে বেড়াচ্ছে। নাচের তালে তালে তার পায়ের নূপুর থেকে উঠছে অপার্থিব ঝঙ্কার! আবার তার একেক মুভমেন্টে নূপুরের কোনা থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে একেক রকম আলো।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার শেষ অতীত স্মৃতি যা মনে পড়ছে তা হল- আমি বনানী এগার নম্বর রোডে একটা চাকুরীর ইন্টার্ভিউ দিতে গেছিলাম। আমার সদ্য পাশ বুয়েট সার্টিফিকেট দেখে কোম্পানি’র এমডি বলেছিল, আমার দরকার রামছাগল টাইপ একজন যে আমি ‘দুই এ দুই এ পাঁচ হয়’ বললে ‘জ্বী স্যার জ্বী স্যার’ বলে হাত কচলাবে! আপনার মত সুপার ডুপার টাইপ কাউকে মেয়ের জামাই খোঁজার সময় খুঁজব!চাকরি দেবার সময় না!! চোখ হাসাইতেছেন কেন? আমার মেয়ে এখনো মাত্র ক্লাস থ্রি তে পড়ে!!
আমি অফিস থেকে বের হয়ে এসে দীর্ঘঃশ্বাস ফেলেছি। আব্বা মৃত্যু শয্যায়। ছোট বোন টা কে তার মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে দেখতে গেলে আমার দিকে কান্না কান্না চোখে তাকায়। মেডিকেলের ভারী ভারী বই গুলোর অনেক দাম। আমি তাকে কিছুই হেল্প করতে পারি না! টিউশনি করালে হয়ত আমার হাতে কিছু টাকাপয়সা থাকত। বিচিত্র কারনে টিউশনি জিনিষ টা আমার ভালো লাগে না।
আমি হাঁটতে হাঁটতে সৈনিক ক্লাব চলে এসেছি। সেখান থেকে দশ টাকা ভাড়ার শেয়ারের মিশুকে উঠেছি। মিরপুর ১০ যাব। সোহানের থেকে আবার টাকা ধার করতে হবে।
কচুক্ষেতের আগের সিগনালে মিশুক থেমে আছে এত টুকুই মনে পড়ছে। আর কিচ্ছু মনে পড়ছে না। এই অপ্সরী, এই বেহেশতের মত ঘর, আমার হাতে অপ্সরী’র ধরিয়ে দেয়া চিরকুট- এসব কেমনে এল, কোত্থেকে এল কিছুই বুঝতে পারছিনা।
কিন্তু আমার মনের কথা যেন বুঝতে পারল অপ্সরী। নিঃশব্দ কিন্তু কৌতুক পূর্ন একটা হাসি হঠাৎ খেলে গেল তার চোখের তারায়। তারপর মোহনীয় ভঙ্গিতে হেঁটে আসতে লাগল আমার দিকে। সাধ্য কি সেই মোহনীয় ভঙ্গির বর্ননা দেবার। এতটুক শুধু বলতে পারি- সে একেকটা স্টেপ দেয়, আর নৈতিক শিক্ষার সিমেন্ট দিয়ে তৈরি আমার মূল্যবোধের ইমারতের একেকটা ভেঙ্গে পড়ে!!
অপ্সরী আমার খুব কাছে চলে এসেছে। আমার নিঃশ্বাস দূরত্বে গোলাপ পাপড়ির মত কোন কিছুর পাতলা আবরণে ঢাকা তার স্তন! আমার মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল! আমি নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলাম!! মিষ্টি আবার একই সাথে খানিকটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে অপ্সরী বলল,
‘ তোমাকে আমি কোন কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারব না। কারন আমার কাজ ব্যাখ্যা করা না! আমার উপস্থিতির কারনে তোমার হাতে দেয়া চিরকুট টা তোমার মনোযোগ কাড়তে পারছে না। কাজেই আমি আপাতত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছি। তুমি চিরকুট টা মনোযোগ দিয়ে দেখো। সেটার মধ্যে কি লিখা আছে বোঝার চেষ্টা কর। পরে যদি আমার সাথে দেখা করার দরকার আছে বলে মনে হয় তাহলে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে শব্দ করে বলবে- ফ্রিডোরিনা, ফ্রিডোরিনা, ফ্রিডোরিনা!
তীক্ষ্ণ কণ্ঠে এই কথাগুলো উচ্চারিত হবার পর পরই দেখি আমার সামনে আর কেউ নেই! চোখের সামনে এতক্ষণ যা ঘটল সেটা বিভ্রম- এরকম ভাবার কোন অবকাশ না দিয়ে ঘরের কাচের দেয়াল, ষড়ভুজাকৃতি স্তম্ভ সব যা ছিল তাই আছে। শুধু ফ্রিডোরিনা নেই! কি আশ্চর্য ফ্রিডোরিনার চেহারাও ত আমি কল্পনা করতে পারছি না! শুধু ফ্রিডোরিনা শব্দটাই মনে আসছে! আর মনে আসছে ফ্রিডোরিনা ক্লিউপেট্রা বা রানী হেলেনের মত একজন সুন্দরী নারী যাকে আমি কখনো চোখে দেখি নাই।
ধীরে ধীরে আমি আমার হাতের মুঠোর দিকে তাকাই। মুঠোর ভেতর ফ্রিডোরিনার দেয়া চিরকুট টা আছে। চিরকুট টা মেলে ধরে মনে মনে সেটা বাংলায় অনুবাদ করি-
অতীত কে আমরা নিয়তি বলে ধরে নিচ্ছি। কোন অপরাধবোধ নয়, তুমি মূলবিন্দুতে আছ। এই মুহুর্ত থেকে তোমার দায়িত্ব বুঝে নাও। ভাব, আগামীকালের সুর্যোদয় তোমার জন্য উন্মোচিত করবে সম্ভাবনার দুয়ার। কাজেই আনন্দিত হও। তোমার মনের ‘আতঙ্ক’ এবং ‘ঘৃণা’ কে ‘আনন্দ’ এবং ‘প্রেম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন কর। প্রকৃতি তোমার জয়ের রাস্তা তৈরি করেই রেখেছে। তুমি আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই আছ হে পুত্র! হে পুত্র তুমি!!
কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলে একটা অর্থ এবং আমার বর্তমান অবস্থার সাথে এর একটা সম্পর্ক বেরিয়ে আসে।
অতীতের বিভিন্ন ভুলের কারনে সবার মধ্যে যেরকম অপরাধ বোধ থাকে, আমার মধ্যেও আছে। অপরাধ বোধ এড়ানোর সুন্দর একটা উপায় এখানে বাতলে দেয়া আছে! অতীত কে নিয়তি হিসাবে ধরে নিতে হবে!!
তারপর এই মুহুর্ত থেকে নতুন জীবন শুরু করার কথা বলা হচ্ছে। চাকরি না পাবার হতাশা আমার মধ্যে একটা নিরানন্দ ভাব তৈরি করেছে। সেটাকে কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন দিনের নতুন সম্ভাবনার উল্লেখ করা হচ্ছে।
‘তোমার মনের ‘আতঙ্ক’ এবং ‘ঘৃণা’ কে ‘আনন্দ’ এবং ‘প্রেম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন কর’ এই লাইন টা মারাত্মক!
মন যখন হতাশ থাকে তখন সে সব কাজ ই করে হারাবার আতঙ্ক নিয়ে! আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে করতে কাজটার প্রতি জন্ম নেয় অপরিসীম ঘৃণা। মনের হতাশা দূর করে মন কে আশায় পুর্ন করতে হবে। তাইলে কাজে আসবে আনন্দ। আনন্দ আসলে কাজের প্রতি তৈরি হবে প্রেম।
প্রকৃতি তোমার জয়ের রাস্তা তৈরি করে রেখেছে- এর মানে কি?
মানে হল আমি যদি আশা পূর্ন হৃদয়ে আনন্দ এবং প্রেমের সাথে কাজ করে যাই তাহলে প্রকৃতিই আমাকে সাফল্যের চুড়ায় নিয়ে যাবে!
হঠাৎ করেই পুরো ব্যাপার টা আমার কাছে খুব স্পষ্ট হয়ে গেল।
সমস্ত কিছু আসলে আমার মনের মধ্যেই ঘটছে। মনের মধ্যে ঘটছে বলেই প্রত্যেকটা বাক্যের অর্থ আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি। আমার মস্তিষ্কের রহস্যময় কোন অংশ নিজেই আমার সমস্যা টা ডিটেক্ট করে ফেলেছে। তারপর সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য তার নিজের উদ্ভাবিত রাস্তায় আমাকে পরিচালিত করতেছে। এক সময় মস্তিষ্কই ব্যবস্থা করবে হেলুসিনেশন কাটিয়ে উঠার। আমিও কোন শেয়ারের মিশুকের ভেতর কিংবা ‘বিন্দু বৃত্ত সমবায় সমিতি’র গলি দিয়ে আমার শ্যাওড়াপাড়ার মেসের ঘরের কাঠের চৌকি’র উপর আমাকে আবিষ্কার করব।
ফ্রিডোরিনার তাইলে কি হবে? ফ্রিডোরিনা কে আবার ডাকার কোন অর্থ হয়না। তাকে ডেকে আনা মানেই হেলুশিনেশন প্রলম্বিত করা!
ঝম!! ঝম ঝম!! ঝম ঝম ঝম ঝম ঝম ঝম!!! ঝম!!!
হঠাৎ করেই ভয়ঙ্কর একটা আওয়াজ উঠে প্রলম্বিত হতে লাগল।! মনে হল প্রচণ্ড ভূমি কম্প শুরু হয়েছে! থর থর করে কাঁপছে কাঁচের স্তম্ভগুলো। একটা দেয়াল মনে হল হঠাৎ করেই আস্ত বেঁকে গেল। কাঁচের মেঝের উপর ঝমঝম করে ছড়িয়ে পরল কাঁচের টুকরা।
আমার চোখ আতঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে গেল যখন দেখলাম আস্ত একটা ষড়ভুজ স্তম্ভ আমার দিকেই হেলে পড়ছে এবং আমি দৌড়াতে পারছিনা!
নিজের অজান্তেই আমি আর্তনাদ করে উঠলাম-ফ্রিডোরিনা, ফ্রিডোরিনা, ফ্রিডোরিনা!
চোখের পলকে থেমে গেল সমস্ত কম্পন!
আমার অন্তরে দাও দাও আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে চোখের সামনে কামনার বহ্নি শিখা হয়ে হাজির হল ফ্রিডোরিনা।
ফ্রিডোরিনার গায়ে হাল্কা নীল রঙের প্রায় স্বচ্ছ একটা জামা।নীল জামায় ফ্রিডোরিনাকে মনে হচ্ছে যেন আস্ত একটা সমুদ্র। ভরা জোয়ারে সেই সমুদ্রের ঢেউয়ের আকার বিশাল!
‘সমুদ্রে ঝাঁপ দেবার আগে সাতার শিখে আস!’ আমাকে কটাক্ষ করে ফ্রিডোরিনার ছুঁড়ে দেয়া ডায়লগ ঘরের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলতে লাগল। আমি অসম্ভব রকম অপমানিত বোধ করতে লাগলাম এবং নিজের অজান্তেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। আমার মনে হল এখুনি গিয়ে ঐ আগুনের সমুদ্রে ঝাঁপ দিই। ডুবলে ডুবব!
কিন্তু হঠাৎ করেই সমস্ত প্রতিধ্বনি থেমে গেল। চোখ খুলে দেখলাম আমি মেঝেতে বসে আছি। আমার সামনেই হাঁটুর উপর বাহু রেখে বসে আছে ফ্রিডোরিনা। ফ্রিডোরিনা চোখ তুলে আমার চোখে চোখে তাকাল।
ফ্রিডোরিনার কামনাময় রূপে মত্ত হয়ে এতক্ষণ তার বয়স সেভাবে খেয়াল করি নাই। চোখে চোখ পড়তে বুঝলাম এ চোখ সদ্য কৈশোর ছাড়ানো এক আশ্চর্য নিষ্পাপ তরুণীর। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার বুকে যে গভীর ব্যাথাটা অনুভব করলাম সে ব্যাথাটির আনুষ্ঠানিক নাম প্রেম! খুব কাঁপা কাঁপা হাতে আমি ফ্রিডোরিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
তারপর আমার দিকে ঈষৎ ঝুঁকে আসা ফ্রিডোরিনার পিঠে হাত রেখে তার কপোলে চুমু খেলাম।একটা মুহুর্ত পেরিয়ে গেল। তারপর মনে হল আমার বুকের ভেতর আস্ত একটা স্বর্গ মোমের মত গলে গলে যাচ্ছে। যে মোমের তাপ নেই।শুধু উত্তাপ আছে।
সময়ের স্তব্ধ আয়তন থেকে নিঃশব্দে চুরি হয়ে গেল কিছু মুহুর্ত!
গভীর নিঃশ্বাস নিতে নিতে ফ্রিডোরিনা বলল- আমি এখন চলে যাব। আর কখনোই তোমার সাথে দেখা হবে না।
আমি বললাম- ফ্রিডোরিনা, আমি তোমাকে ভালবাসি।
ফ্রিডোরিনা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম ওর পরনে আঁটসাঁট স্বচ্ছ নীল জামার পরিবর্তে খয়েরি রঙের ঢিলাঢালা একটা জামা। সেই জামায় শেষ বিকেলের বিষণ্ণতা উপস্থিত!
আমাকেও উঠে দাঁড়ানোর সময় দিয়ে এলোচুল ঠিক করতে করতে বলল ফ্রিডোরিনা- তুমি আমাকে ভালোবাস। কারন তুমি একজন স্বাভাবিক পুরুষ। এই ভালোবাসা তোমাকে দিয়ে অনেক কঠিন কাজ করিয়ে নেবে। সেই কঠিন কাজ গুলো করিয়ে নেবার জন্য আবার আমার তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়া দরকার। আমি পাশে থাকলে তুমি সেই কঠিন কাজ গুলো করতে পারবেনা!
ফ্রিডোরিনার কথা শুনতে শুনতেই খেয়াল করলাম, ফ্রিডোরিনা অনেক দূরে চলে গেছে। কাঁচের ঘর টাও মনে হচ্ছে হঠাৎ করে আগের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। একদিকের দেয়ালে মনে হল একটা কাল হাতল ওয়ালা দরজা। ফ্রিডোরিনা হাত বাড়িয়ে সে হাতল টা ধরল!
আমার সমস্ত অন্তঃকরণ শূন্যতায় ভরে গেল। আমি চিৎকার করে বললাম- ফ্রিডোরিনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি শুধু আমার পাশে থাক। আমার আর কিছু চাই না।
ফ্রীডোরিনার গোলাপ পাপড়ি ঠোঁটের কোনে অদ্ভুদ বিষণ্ণতা ফুটে উঠল। কাল হাতলে টান দিয়ে কাঁচ ঘরের দরজা খুলতে খুলতে ফ্রিডোরিনা বলল-
তুমি খুব সম্ভাবনাময় একজন মানুষ।তোমার বুকে হাজার ওয়াটের বাতি। সামান্য একটা চাকরি না পেয়ে মন খারাপ করে বুকের সেই বাতি তুমি নিভিয়ে ফেলেছ প্রায়। সেই বাতি টা আমি জ্বালিয়ে দিয়েছি! কিভাবে, কার মাধ্যমে দিয়েছি সে প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। আবার যখন তুমি তোমার অসুস্থ বাবা, অসহায় মা এবং আদরের ছোট বোন টার কাছে ফিরে যাবে দেখবে তুমি কোন কিছুতেই আর হতাশ হচ্ছ না। জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনাকে তুমি দেখছ আনন্দ এবং প্রেমের দৃষ্টি দিয়ে।
ধর আমার বাবা মারা গেল। সেটাকে আমি আনন্দ আর প্রেমের দৃষ্টিতে কিভাবে দেখব?
আনন্দ আর প্রেমের দৃষ্টিতে দেখা মানে বাবার মৃত্যুতে উল্লাস করা নয়। মৃত বাবাকে ত তুমি ফেরাতে পারবে না। কিন্তু খোঁজ নিলে অবশ্যই জানবে মনের কোন না কোন ইতিবাচক ইচ্ছেকে অপুর্ন রেখে তিনি মারা গেছেন। সেই ইচ্ছে খুঁজে বের করে সেই ইচ্ছে পুরনের ব্যবস্থা করাটাই এখানে আনন্দ। আর এই আনন্দ তখুনি পাওয়া সম্ভব যদি কাজটা প্রেমের সাথে কর।
জীবনের প্রতিটা অবস্থাকে আনন্দ এবং প্রেমের সাথে দেখলেই কি আমি সফল হতে পারব?
প্রকৃতি নিজের হাতে প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম সাফল্যের রাস্তা তৈরি করে রেখেছে। আনন্দ এবং প্রেমের সাথে জীবনের বাস্তবতায় অংশগ্রহণ করা মানেই সেই সাফল্যের রাস্তায় হাঁটা!
বিষণ্ণ অন্ধকার চারদিকটাতে ভর করে নেমে আসছে। আমার মুঠোর মধ্যে ফ্রিডোরিনার চিরকুট টাকে আর দেখতে পাচ্ছিনা। ফ্রিডোরিনা দরজার ওপাশে চলে গেছে। আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে দরজা।
আমি জানি যে পুরা ব্যাপার টাই আমার মস্তিষ্কের খেলা। ফ্রিডোরিনা বলে আসলে কেউ নাই। পুরা ব্যাপার টাই আমার মস্তিষ্কের কোন রহস্যময় কেন্দ্রের তৈরি করা একটা স্লাইড শো। হয়ত প্রকৃতি চায় জীবনে আমি খুব সফল হই। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমার বোনটার ডাক্তারি পড়া শেষ হলে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়াবে। আমি সফল হলে সেটা সম্ভব!
আমার মাথার ভেতর অদ্ভুদ গুম গুম শব্দ হচ্ছে। ৫০ সিসি মটর সাইকেলের ইঞ্জিন এরকম শব্দ করে। নাকে ডিজেল পোড়া গন্ধ ও পাচ্ছি! আমার মনে হচ্ছে আমার মধ্যে কি যেন এক অজানা শক্তি ভর করেছে! আমি স্পষ্ট চোখে দেখতে পাচ্ছি, হতাশাগ্রস্ত অন্ধকার মনের প্ররোচনায় সম্ভাব্য ব্যর্থতা অনুমান করে আমার সামনে আশ্চর্য রকম সাফল্যের দরজা খুলে দেবে এরকম যে স্বপ্নগুলোকে আমি ধাওয়া করা বন্ধ করে দিয়েছি পুর্নোদ্যমে আবার তাদের ধাওয়া করা শুরু করতে যাচ্ছে আমার হাজার ওয়াটের বাতির আলোয় আলোকিত আশাগ্রস্ত মন!
জাগতিক কোন সমস্যাই আমার স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করা থামাতে পারবে না। কারন আমার হৃদয়ে থাকবে আনন্দ এবং প্রেম।