এজাজ কায়কোবাদ। আমার বিশ্বাস, এই নামটি উচ্চারন করলেই একটা মানুষের অন্তর পবিত্র হতে পারে। শাহানাকে বাঁচাতে না পারার অতৃপ্তি নিয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। জীবনে অনেক মহৎ মৃত্যুর কথা শুনেছি, আজ দেখলাম এক মহোত্তম মৃত্যু। বীরের মৃত্যু একবারই হয়। মৃত্যুর আগেই আমরা যারা পার্থিব কারনে প্রতিনিয়ত মরে যাচ্ছি আমাদের অন্তর, নীতি আর বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে এজাজ দেখিয়ে দিয়েছে মহৎ জীবন কী। নীতবিদ্যার ক্লাশে আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক বিতর্ক হয়েছে আবশ্যিকভাবে supererogatory action নৈতিক কিনা এ নিয়ে। এজাজের আত্মদান নীতিবিদ্যার জটিল তত্ত্বগুলোকে মুচকি হাসি দিয়ে উপহাস করে। পৃথিবীতে এমন কোন নৈতিক তত্ত্ব থাকতে পারেনা যা এজাজের মৃত্যুকে মাপার ক্ষমতা রাখে। এজাজ নিজেই একটি কালজয়ী নৈতিক মাপকাঠি। একবার এজাজের সাথে নিজেকে তুলনা করে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনার নৈতিকতার উচ্চতা। এই লোকটির সামনে আমাকে নিজেকে এত তুচ্ছ আর ক্ষুদ্র মনে হয় যে আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। শপথ নিচ্ছি, জীবনে কখনও নীতিবিদ্যা নিয়ে কথা বলার আগে আমি চোখ বন্ধ করে এই মানুষটির মুখচ্ছবি স্মরন করে নেব। আমার ধর্ম আমাকে শিখিয়েছে পূজার পূর্বে নিজেকে পবিত্র করে নিতে। ক্লাশরুমে নীতিবিদ্যার জ্ঞানযজ্ঞে এর চেয়ে পবিত্র মন্ত্র আর হতে পারেনা।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এই বীরকে সম্মান জানিয়ে সরকার খুব ভালো একটি কাজ করেছে। আমি জানিনা, রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মানের বেসামরিক কোন খেতাব নেই কেন। এই বীরকে সম্মান জানিয়েই শুরু হতে পারে এরকম একটি সর্বোচ্চ খেতাবের প্রচলন। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার দেশের শিশুরা তাদের পাঠ্যপুস্তকে পড়ে অবাক আর গর্বিত হচ্ছে মানুষের লোভের নীচে চাপা পড়া এক অসহায় বোনকে বাঁচানোর রুদ্ধশ্বাস চেষ্টার বীরগাঁথা।
যে দেশ এজাজের মত বীরদের জন্ম দেয় সে দেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা সেই রত্নগর্ভা মায়ের প্রতি, এজাজের পরিবারের প্রতি। যে মানুষটির অন্তরজুড়ে ছিল মানুষের সেবা, সৃষ্টিকর্তা পরম স্নেহে তাকে আগলে রাখবেন অনন্তকাল এই প্রার্থনা করি।
