মুম্বাই। ভারতের প্রাণস্বরূপ এই নগরী বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই মুম্বাই, যুগিয়েছে অন্ন। আজও প্রতিদিন অসংখ্য জীবিকান্বেষী মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় প্রায় ২.৫ কোটি অধিবাসীর শহর মুম্বাই। কিন্তু প্রায় সকল মহানগরীর মতই মুম্বাইয়েরও আছে এক অন্ধকার জগৎ, এ হল মুম্বাইয়ের সেই ভয়ংকর অপরাধ জগৎ যা কেবল তার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদেরই নয় বরং ভারতসহ ভারতের বাইরেও বহু মানুষের ঘুম কেড়েছে। হাজী মাস্তান, মুদালিয়ার থেকে দাঊদ ইব্রাহীম, ছোটা শাকিল -মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকরা এই স্বপ্নের নগরীর ইতিহাসকে রক্তে রঞ্জিত করতে কখনই কুণ্ঠিত হয় নি। তাদের লিপ্সা-হিংসা ছবির মত মুম্বাইয়ে বহু রক্ত ঝরিয়েছে আর আজও ঝরিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সেই লোমহর্ষক অপরাধ জগৎ নিয়েই কিছু না বলা কথা, কিছু গুঞ্জন ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
পর্ব ৬: এনকাউন্টার
মনোহর অর্জুন সুরভে, মান্য সুরভে নামেই বেশী পরিচিত। কেবল মুম্বাই নয়, পুরো ভারতের ইতিহাসে প্রথম এনকাউন্টারে পুলিশের হাতে নিহত সন্ত্রাসীর নাম মান্য সুরভে। গরীব মায়ের মেধাবী সন্তান ছিল সুরভে। সৎ ভাই ভার্গভ সুরভের কাজ ছিল চাঁদাবাজি করা। কীর্তি কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষায় অংশ নেয় সুরভে। তার আশা ছিল ভাল রেজাল্ট নিয়ে একটি চাকরী পাওয়া আর তারপর সৎ উপার্জন দিয়ে মা আর সহপাঠী প্রেমিকা বিদ্যার সাথে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা। দুর্ভাগ্যবশত ভাই ভার্গভ সুরভের সাথে একটি হত্যা মামলায় ফেঁসে যায় মনোহর। আদালতে দুইজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেলে যাওয়ার পরদিনই খুন হয় ভার্গভ। ইয়েরওয়াড়া জেলেই তার সাথে মুনীরের পরিচয় হয়। মুনীরের সংস্পর্শে আইনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মনোহর একসময় পরিণত হয় এক কুখ্যাত সন্ত্রাসীতে। জেলে হর-হামেশাই মারামারি করা শুরু করে মনোহর। একসময় তাকে আর মুনীরকে রত্নাগিরি জেলে বদলী করা হয়। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে একসময় পালিয়ে যায় মনোহর আর মুনীর। জেল পালিয়ে মুম্বাই এসে কিছুদিন ঘোরাফেরার পর একসময় নিজেরাই গ্যাং বানিয়ে ফেলে তারা। একের পর এক ডাকাতি আর খুন করে সবার নজরে চলে আসে সুরভের দল। শাবিরকে মারার পর দাঊদের হাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সুরভে। দাঊদের একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে সুরভে বাহিনী। কিন্তু ঘটনার মূল হোতা সুরভে আর মুনীর তখনও পলাতক। হন্যে হয়ে খুঁজে দাঊদ মুনীরকে হাতের কাছে পেয়েও সুরভের সাহসিকতায় বেঁচে যায় মুনীর। শাবিরকে হত্যার আগেও সুরভের অনেক বদনাম থাকলেও পুলিশকে তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে দেখা যায় নি। শাবিরের হত্যার পর বেশ কিছুদিন দাঊদ সুরভেকে খুঁজেও ব্যার্থ হবার পর হঠাৎ করেই পুলিশ সুরভের ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠে। গুজব আছে সুরভেকে ঘায়েল করতে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তৎকালীন ইন্সপেক্টর ইসাক বাগওয়ানের কাছে সুরভের ব্যাপারে তথ্য চায় দাঊদ। বাগওয়ান তাতে রাজী না হলে তার ঊর্ধ্বতন অফিসারকে ঘুষ দিয়ে সুরভেকে এনকাউন্টার করার আদেশ আদায় করে নেয় দাঊদ। সুরভের এনকাউন্টারে মুদালিয়ারেরও হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। কেননা সুরভে ততদিনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে শহর ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করে সুরভে। ১৯৮২ সালের ১১ জানুয়ারী মুম্বাই ছেড়ে পালানোর সময় প্রেমিকা বিদ্যাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়াডালার আম্বেড়কার কলেজে হাজির হলে ওঁত পেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা হামলা করে তার উপর। বিদ্যা তখন তার দুই সন্তান নিয়ে সুরভের সাথে যাওয়ার জন্য কলেজ গেটে অপেক্ষমাণ। একে একে ২৫টি গুলি আঘাত করার পরেও বিস্ময়করভাবে বেঁচে ছিল সুরভে। সিওন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সুরভে বারবার পুলিশকে বেইমান আখ্যা দিতে থাকে। তাকে সু্যোগ না দিয়ে গুলি করার কারণে ঘৃণা প্রকাশ করতে এক পুলিশ অফিসারের উপর থুথু ছোঁড়ে করে সুরভে। হাসপাতাল যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে সুরভের মৃত্যু হয়। সুরভের মৃত্যুর পর ভরদের চোরাকারবারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে তার প্রধান সহযোগী মুনীর। কিন্তু এক বছরের মাথায় ১৯৮৩ সালে মুনীরও বাগওয়ানের এনকাউন্টারে নিহত হয়।
শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৭