মুম্বাই। ভারতের প্রাণস্বরূপ এই নগরী বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই মুম্বাই, যুগিয়েছে অন্ন। আজও প্রতিদিন অসংখ্য জীবিকান্বেষী মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় প্রায় ২.৫ কোটি অধিবাসীর শহর মুম্বাই। কিন্তু প্রায় সকল মহানগরীর মতই মুম্বাইয়েরও আছে এক অন্ধকার জগৎ, এ হল মুম্বাইয়ের সেই ভয়ংকর অপরাধ জগৎ যা কেবল তার শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদেরই নয় বরং ভারতসহ ভারতের বাইরেও বহু মানুষের ঘুম কেড়েছে। হাজী মাস্তান, মুদালিয়ার থেকে দাঊদ ইব্রাহীম, ছোটা শাকিল -মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রকরা এই স্বপ্নের নগরীর ইতিহাসকে রক্তে রঞ্জিত করতে কখনই কুণ্ঠিত হয় নি। তাদের লিপ্সা-হিংসা ছবির মত মুম্বাইয়ে বহু রক্ত ঝরিয়েছে আর আজও ঝরিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সেই লোমহর্ষক অপরাধ জগৎ নিয়েই কিছু না বলা কথা, কিছু গুঞ্জন ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
পর্ব ১: মুম্বাইয়ের জন্মকথা
মুম্বাই নগরীর অবস্থান ভারতের পশ্চিম উপকূলে। গভীর জলসীমা থাকায় বন্দর এবং মৎস্য আহরণ কেন্দ্র হিসেবে এটি প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত ছিল।হাজার বছর ধরে মুম্বাই ছিল জেলেদের বসতি। পরবর্তীতে আরব বণিকরা সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য একে ব্যবহার করতে থাকেন। ভারতবর্ষ আবিষ্কৃত হবার পর ইওরোপীয়ানদের কাছেও অল্পদিনেই খ্যাতি লাভ করে তৎকালীন বোম্বে। আজকের মুম্বাই মূলত সাতটি পৃথক দ্বিপের সমষ্টি ছিল। বোম্বে দ্বিপ, পারেল, মাঝগাঁও, মহিম, কোলাবা, ওড়লি, বুড়ির দ্বিপ (ছোট কোলাবা) -এই সাতটি দ্বিপ নিয়ে মুম্বাই। ১৫৩৪ সালের ২৩শে ডিসেম্বর মুঘলদের সাথে বাসাইন চুক্তির পর পর্তুগিজরা ১৫৩৫ সালের ২৫শে অক্টোবর মুম্বাই শহরের দখল বুঝে পায়। বোম্বে দুর্গ, মাধো দুর্গ, বান্দ্রা দুর্গ ছাড়াও প্রচুর ব্যাপটিস্ট চার্চ স্থাপিত হয় পর্তুগিজদের শাসনামলে। ভৌগোলিক গুরুত্ব অনুধাবনের পর পর্তুগিজদের গোড়াপত্তনের অল্পদিন পরেই তাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইংরেজরা। পরে ১৬৬১ সালে দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগিজ রাজার মেয়ে ক্যাথেরিনকে বিয়ে করে যৌতুক হিসেবে বোম্বে শহরের কর্তৃত্ব পান। ১৬৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কেন্দ্র সুরাট থেকে বোম্বে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮ শতকে সমগ্র ইওরোপীয়ান, মুঘল আর মারাঠাদের সরিয়ে ইংরেজরা হয়ে ওঠে ভারতবর্ষের সর্বময় শক্তি। ততদিনে সমগ্র বাংলা সহ ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল তাদের করতলগত হয়েছে। ১৭৮২ সাল থেকে শুরু হয় আধুনিক মুম্বাই শহরের নির্মাণকাজ। হর্নবাই ভেলার্ড (Hornby Vellard) প্রজেক্টের আওতায় মুম্বাই শহরে শুরু হয় এক সুবিশাল নির্মাণযজ্ঞ। ১৮৪৫ সাল নাগাদ বিপুল ভূমি অধিগ্রহণ আর অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি মুম্বাই এর সাতটি উপদ্বিপকে একত্রিত করা হয়। ১৮৫৩ সালে চালু হয় মুম্বাইয়ের প্রথম যাত্রিবাহী ট্রেন। বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য সুয়েজ খাল খুলে দেয়ার পর ১৯ শতকে ব্রিটিশ কর্তৃত্বে মুম্বাই আরব সাগরের অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়। হু হু করে বাড়তে থাকে মুম্বাইয়ের জনসংখ্যা। পুঁজিপতিদের বিনিয়োগে মুম্বাই ও তার আশেপাশে গড়ে উঠতে থাকে প্রচুর কল-কারখানা যার অধিকাংশই ছিল বস্রকল। ইংরেজদের নিপীড়নে ভূমি-জমিদারী হারানো বহু কৃষক-গৃহস্থ, নিচু জাতের হিন্দু, দরিদ্র মুসলমান সহ অসংখ্য মানুষ ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমাতে থাকে মুম্বাইয়ে। কেবল ভারতই নয়, ভারতের বাইরে থেকেও লোক সমাগম ঘটতে থাকে মুম্বাইয়ে। মুম্বাইয়ের সুযোগ আর অর্থ আফগানিস্তান, পেশোয়ার, সিন্ধু, বেলুচ এর অনেক মানুষকেও আকৃষ্ট করেছে।
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব
সপ্তম পর্ব
শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪২