আজ সকালেই কক্সবাজার শহরে ‘ছিনতাইকারীদের’ ধাওয়া করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন একজন ট্যুরিস্ট পুলিশ...বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের সার্কিট হাউসের কাছে গোলচক্কর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে...নিহত পুলিশ সদস্যের নাম পারভেজ হোসেন।
আর সবার মতো আমারও কক্সবাজার ভীষন পছন্দের জায়গা...কোন ছুতো পেলেই আমি সমুদ্র পাড়ের এই শহরটায় ঢুঁ মারি...তাই ট্যুরিজম বিষয়ক ফেলোশীপটা বাগানো মাত্রই বরাবরের মতো কক্সবাজার গেলাম রিপোর্ট করতে...নানা জনের সঙ্গে কথা হলো বিভিন্ন বিষয়ে...ঘুরেফিরে ট্যুরিস্ট পুলিশের কথাও এলো সেই আলোচনায়...কেউ এঁদের ভাল বললো না, আবার খারপও বললো না...স্পষ্ট কোন ধারণা পেলাম না...তবে চোখের সামনে দেখলাম বীচে লাঠি হাতে নিয়ে টহল দিচ্ছে...
লাঠি হাতে রাতে কাউকে দেখলেই আমার এলাকার নিরীহ নাইট গার্ডদের কথা মনে পড়ে...যাদের কিনা জন্মই হয়েছে ডাকাত অথবা পুলিশের বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার জন্য...এলাকায় কোন ডাকাতি হলে শুধু লাঠি হাতে ঘুরাফিরার অপরাধে প্রথমে ডাকাতের এবং ডাকাতি শেষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায়ের জন্য পুলিশের পিটুনি খাওয়ার জন্যই এদরে মাসে মাসে যৎসামান্য বেতন দেয়া হয়...টুরিস্ট পুলিশ দেখেও প্রায় একই চিন্তা মাথায় এলাে...
শুধু কক্সবাজার না লাউয়াছড়ার (সরকারি হিসাবে গহীন আর আমার হিসেবে প্রায় ফাঁকা) অরণ্যেও দেখলাম একই অবস্থা...দুজন টুরিস্ট পুলিশ খালি হাতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন!!! ফেলোশীপে অামার ভাগ্যে টুরিস্ট পুলিশ বিষয়ে রিপোর্টের ভার পড়েনি....তাই আলাদা করে লেখাও হয়নি...
নিহত ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য পারভেজ হোসেন নিরস্ত্র না সশস্ত্র ছিলো সে তথ্য আমার জানা নেই...শুধু এটুকু বুঝতে পারছি পারভেজ সাহস আকাশ ছোঁয়া...পারভেজ সৈকত পাড়ের বাদামওয়ালার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো কি না, এ খবর আমার জানা নেই...শুধু বুঝতে পারছি পারভেজ ভীষন কর্তব্যপরায়ন ছিলো...তা না হলে নিজের জীবন বাজি রেখে ছিনতাইকারী ধরতে যেতো না...উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতো...
২২ বছর বয়সটা কিন্তু মারাত্মক...এ বয়েসে প্রেমিকার এক টুকরো হাসির জন্য সাঁতরে নদী পার হওয়া যায়...ঝড়জল বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘোরা যায়...কর্তব্য পালনের জন্য নিজের প্রাণটাও দেয়া যায়...পারভেজ হোসেনের বয়সও ছিল ২২...
আচ্ছা ছিনতাইকারীরা যখন পারভেজের শরীর ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করছিলো তখন নিশ্চয়ই ওর মায়ের মুখটা বারবার মনে পড়ছিলো...আমি জানি না পারভেজের মা বেঁচে আছেন কী না??? তবে বেঁচে থাকলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতটি মুহূর্ত ছেলের মৃত ফ্যাকাশে মুখটা তার মনে পড়বে...একজন মায়ের জন্য এরচেয়ে যন্ত্রণাকাতর আর কোন শাস্তি হতে পারে না...
পারভেজরা আছে বলেই মানুষ নামের তকমাটা এখনো আছে...মহামান্যদের কাছে অনুরোধ পারভেজদের বীরের সম্মানটুকু নিশ্চিত করুণ...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০৫