প্রচণ্ড এক আর্ত চিৎকার! একটু চমকে উঠেও আবার ভাবলাম কি জানি, হবে হয়তো কেউ। কিন্তু হঠাৎ আবার..... তারপর আবার....। আর পারলাম না, দৌড়ে এলাম বারান্দায়। ১২-১৩ বছরের বাচ্চা একটা মেয়ে চিৎকার করছে। মায়ের সাথে অভিমান করে নয়, বন্ধু দের সাথে ঝগড়া নয়, দেখতে মানুষের মতন এক পুরুষ তাকে টেনে হিঁচ্ড়ে নিয়ে যেতে চাইছে কোথাও! নিজেকে বাঁচানোর আদিম আকুতি নিয়ে প্রানপনে ছুটে পালাতে চাইছে মেয়েটি। কিন্তু ঐ বয়সী এক শিশু কতটুকুই বা কুলিয়ে উঠতে পারে!
রাতের ঘড়িতে তখন দুটো কি আড়াইটে। কাওরান বাজারের নির্জন রাস্তা জুড়ে এলিয়ে পরেছে সোডিয়ামের নরম ঘোলাটে আলো, কয়েকটা ট্রাক আর বাস রাত জাগা কিছু মানুষকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো গন্তব্যের দিকে। ঘটনাটা পুরো জানা হয়ে ওঠেনি। শুধু মনে হচ্ছিলো এন.টিভির পাশের ব্রোথেল থেকে শিশুটি কেমন করে যেন বেড়িয়ে পরেছিল। পালাতে চেয়েছিল, হয়তোবা পালিয়েও গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু মানুষের মত দেখতে ঐ পুরুষটি তাকে জোর করে ফেরাতে চাইছিল নরকে। মেয়েটি তখনো হাল ছারেনি (যদিও সে "হাল ছেরনা বন্ধু" গানটি শুনেছে বলে মনে হয়না)"।
কাওরান বাজারের রাস্তায় চলছিল এক শিশুর সাথে পুরুষাঙ্গের লড়াই!
কিছুক্ষনের ভেতরেই আরো কয়েকটি পুরুষাঙ্গ ঘিরে ধরলো শিশুটিকে; আকন্ঠ ঘৃনায় কুঁকড়ে উঠে সরে এলাম বারান্দা থেকে। অসহায়ত্বের তুমুল গ্লানি আমাকে তখন মেয়েটির চেয়েও আরো বেশি বিদ্ধস্ত করে ফেলেছে, ইচ্ছে করছিলো চরাচর কাঁপিয়ে একটি চিৎকার দিতে। পারিনি, যেমন পারিনি মেনে নিতেও, আমার আর ঐ শিশুটির অক্ষমতা!
বাচ্চা মেয়েটির কি হলো শেষে? জানা নেই, তবে অনুমান করতে পারি সহযেই। কি-ই বা আর হতে পারে। যে সমাজ তার শৈশব আর কৈশরকে গলা টিপে হত্যা করেছে তার কাছে বেশি কিছু আশা করা নেহায়েতই বাতুলতা। এই সমাজের কাছে সে শুধুই মেয়ে, একটা শরীর। সে কখনই শিশু হতে পারবেনা, পারবেনা কিশোরী হয়ে উঠতে!
সামান্য সমবেদনা জানানো ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারিনি ওর জন্য! আমার দু হাত বাধা, শুধু আপ্রান চেষ্টায় চোখের পট্টি টুকু খুলে রাখতে পেরেছি এখনো। কারো কাছেই নালিশ জানানোর নেই, নেই কোন অভিযোগ দাখিলের ন্যুনতম ইচ্ছে। হয়তোবা তারাই ওখানকার বাধা খদ্দের। কে জানে।
এন.টিভি, একুশে টিভি বা প্রথম আলোর পাশে গড়ে ওঠা ব্রথেলে যখন শৈশব বিক্রি হয় তখন কি-ই বা আর বলার থাকে।
(একজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা থেকে অনুলিখন। সময়কাল: গত সপ্তাহ)