somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন মুহিত

২২ শে মে, ২০১১ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এবার আরেক বাংলাদেশি এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন এম এ মুহিত। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌঁছান।
ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অণুবিভাগের মহাপরিচালক মাশফি বিনতে শামসকে এম এ মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের তথ্য জানায়।
হিমালয়কে হারিয়ে দেয়া এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ' দুঃসাহসী পর্বতারোহীর একজন মুহিত। এভারেস্ট জয় করায় তার নাম পরিণত হলো ইতিহাসে। বাংলাদেশ আরেক দফা জেগে উঠল নতুন আশায়। কারণ এটা সাধারণ ঘটনা নয়। আশা আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে বাংলাদেশিদের পক্ষে অনেক কিছুই যে করা সম্ভব। আকাশ ছুঁয়ে দেখার অদম্য ইচ্ছেটি দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে লালন করছিলেন মুহিত। তার উপমাবিহীন সংযম আর সাধনার কাছে সব ধরনের জাগতিকতা হার মেনেছে। শুধু আকাশ নয়, আকাশের কপাল তিনি ছুঁয়ে দিলেন। নেপালিরা এভারেস্টকে বলে 'সাগরমাথা'। এর অর্থ আকাশের কপাল। তিব্বতিরা বলে 'চুমুলংমা'। অর্থাৎ দেবী, বিশ্বমাতা।
মুসার পর এবার মুহিত প্রমাণ করলেন, সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী হতে পারলে কোনো প্রতিকূলতা বাংলাদেশিদের দমিয়ে রাখতে পারে না।
এর আগে ২০১০ সালের ২৪ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহীম পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন। এম এ মুহিত সে সময় মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গী থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এভারেস্টে উঠতে পারেননি। এম এ মুহিত বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য।
ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি প্রেমী মুহিত পাঠ্যপুস্তকে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগের এভারেস্ট জয়ের কাহিনী পড়ে প্রথম রোমাঞ্চ অনুভব করেন। ৯৭ সালের অক্টোবরে ১০ বন্ধুর সাথে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ১৮শ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহণ নেশায় মগ্ন হন তিনি। ২০০৩ সালে সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের কাছ থেকে ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফিতে হাতে খড়ি নেন মুহিত। ইনাম আল হক তাকে স্বপ্ন দেখান হিমালয় জয়ের। ২০০৩ সালে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব। সদস্য হন মুহিত। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিং এ অংশ নেন এবং দার্জিলিং এর হিমালায়ন মাউন্টেয়ারিং ইনস্টিটিউট এইচএমআই থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর জয় করতে থাকেন বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ। ২০০৭ সালের মে মাসে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের চুলু ওয়েস্ট শৃঙ্গের ২১ হাজার ৫৯ এবং সেপ্টেম্বর মাসে মেরা পর্বতশৃঙ্গের ২১ হাজার ৮শ ৩০ ফুট, ২০০৮ সালের মে মাসে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানাসলুর ২৬ হাজার ৭শ ৮০ ফুট এবং ২০০৯ সালে দলনেতা হিসেবে নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ চো ইয়ো জয় করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশি ২৬ হাজার ৯০৬ ফুট বা ৮ হাজার ২শ ১ মিটার পর্বতারোহীদের সম্মানজনক এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেন।
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে মুহিত অন্য সফরসঙ্গীর সঙ্গে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মার্চের ২৫ তারিখে তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা জানান। এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মুহিত শীর্ষ নিউজ ডটকমের সাথে আলাপচারিতায় বলেছিলেন, একটা পাহাড়ে ওঠার পর যে বোমাঞ্চ হয় তার সাথে আমি অন্য কিছুর তুলনা করতে পারি না। তিনি বলেন, আমি যখন কোনো পর্বতে উঠি আর ভাবি আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি তখন আমার মানসিক শক্তি বেড়ে যায়। পর্বতে উঠতে হলে শারীরিক শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তিটাই বেশি দরকার।
মুহিত আরো বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছি এটাই আমাকে বাড়তি প্রেরণা যোগাচ্ছে। পতাকার শক্তি যে অনেক বড় শক্তি এটা আমি সব সময় অনুভব করেছি।
এম. এ মুহিত ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার গঙ্গারাম গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৮৫ সনে পুরান ঢাকার প্রগ্রেজ স্কুল থেকে এসএসসি, ৮৭ সনে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ৮৯ সনে বি কম পাস করেন। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম। ৪ ভাই এবং ৩ বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে তিনি বড়। বর্তমানে মুহিত প্যারাগণ গ্রুপের প্যারাগণ প্লাস্ট ফাইবার লি. এর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।

শীর্ষ নিউজ
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×