এক
জামীর সাহেব দেশের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। নামকরা একটি গ্রুপ অফ কোম্পানীর মালিক। এক সময় সংসদ সদস্যও ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও বিশাল রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে তার। সেই প্রভাব খাটিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন তিনি। জামীর সাহেবের কত টাকা আছে তা তিনি নিজেও জানেন না। কত টাকা দরকার তাও জানেন না। তবে শুধু এতটুকুই জানেন, তার আরো টাকা দরকার...আরো ক্ষমতা দরকার।
জামীর সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারির নাম রেজোয়ান। রেজোয়ানের মত বিশ্বস্ত এবং অনুগত কর্মচারী পাওয়া আজকাল ভাগ্যের ব্যাপার। জামীর সাহেব রেজোয়ানের উপর অনেক খানিই নির্ভর করতে পারেন যা অন্য কারোর উপর পারেন না। এদিকে রেজোয়ানও প্রচন্ড উচ্চবিলাসী মানুষ। তার স্বপ্ন জীবনে অনেক বড় হওয়া। স্বপ্ন পূরনের জন্য সে জামীর সাহেবকেই সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজের ব্যাক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে এহেন কোনো কর্মকান্ড নেই রেজোয়ান করতে বাকি রেখেছে। জামীর সাহেবের প্রতিটি কথায় তাল মিলানো এবং তাকে প্রতিনিয়ত সন্তুষ্ট করে চলাই রেজোয়ানের প্রধান কাজ………..……
-“"এই কন্ট্রাকটা কিন্তু আমাদের কোম্পানীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ...বুঝলা রেজোয়ান? কোনো কারনে কন্ট্রাক বাতিল হলে বিশাল লস হয়ে যাবে। বাইয়ারদেরকে খুব ভালোমত ইম্প্রেস করতে হবে।”"
-“"আপনি মোটেও চিন্তা করবেন না স্যার। কন্ট্রাক্ট কোনোভাবেই বাতিল হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন”।"
-“"তোমার উপর অবশ্য শতভাগ নির্ভর করা যায়। আচ্ছা শেখদের কি কি পছন্দ তাতো নিশ্চয় জানা আছে তোমার”।"
-“"কি যে বলেন স্যার! আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। বিশ্বের সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ডের ওয়াইন আনিয়ে রেখেছি অনেক আগেই। সেই সাথে সোনারগাঁ, রেডিসনের সবচেয়ে সুন্দরী প্রস্টিটিউটগুলোকে বুকিং দিয়ে রেখেছি। উনাদের রাজকীয় আপ্যায়ন করা হবে...স্যার”।"
-“"ভেরী গুড মাই বয়। আই মাস্ট এপ্রিশিয়েট ইউ ফর ইউর ইন্টিলিজেন্স। এনিওয়ে আজ রাতে আমি ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে থাকব। আমার জন্য একটা স্লিম এবং সুন্দরী..."
-"“আর বলতে হবে না স্যার। আপ্নি বাসায় পৌছানোর আগেই আমি ব্যবস্থা করে রাখব”।"
-“"ইউ আর এন অসাম গাই রেজোয়ান! আমি তোমার প্রতি খুবই প্লিজড। আগামী পরশু সস্ত্রীক তুমি আমার বাসায় ডিনার করবে। তোমার জন্য একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে”।"
দুই
-“"তোমরা মহিলারা আসলেই বিরক্তিকর প্রানী। রেডি হতে এত সময় লাগে? আমার তো রেডি হতে ৫ মিনিটও লাগলো না। আর তুমি কিনা এক ঘন্টা ধরে সাজুগুজু করেই যাচ্ছো...ডিসগাস্টিং!”"
-“"ওরে বাবা! আজকে একদমই দেরী সহ্য হচ্ছে না...তাই না? সেদিন কত করে বললাম...”"চলো একটু মামার বাসায় যাই। সপ্তাহ খানেক পরই মামা আমেরিকা চলে যাচ্ছে। আবার কবে আসবে ঠিক নেই”।"...উত্তরে তুমি কি বলেছিলে মনে আছে?
-“"মনে নাই”।"
-“তুমি বলেছিলে...”"তোমার মামা আমেরিকা গেলে আমার কি? তোমার এত শখ থাকলে তুমি গিয়ে দেখা করে আসো। আমাকে নিয়ে টানাটানি করো কেনো?”"
-“"ভুল কি বলেছি”?"
-“"একদম ঠিক বলেছো। ঠিক আছে তোমার বস ডিনারের ইনভাইট করছে তুমি একাই যাও। আমাকে নিয়ে টানাটানি করো না।”"
-“"এহেম এহেম...পাগলামী করে না লক্ষী সোনা। কিসের সাথে কি মিলাচ্ছো? আর তোমাকে কত সুন্দর লাগছে জানো? যেনো সাক্ষাত পরী! ইচ্ছে করছে..."
-“"হয়েছে হয়েছে...লিপস্টিক নষ্ট হলে আরো দেরী হয়ে যাবে তোমার”।"
-"“হাহাহাহা! ঠিক আছে লিপস্টিক বাসায় ফিরেই নষ্ট করব”।"
তিন
জামীর সাহেব রেজোয়ানের স্ত্রী মিলা’কে দেখে মুগ্ধ। বারবার অত্যন্ত কুৎসিত দৃষ্টিতে মিলার দিকে তাকাচ্ছেন। প্রচন্ড বিব্রত বোধ করছে মিলা। রেজোয়ানকে আকার ইঙ্গিতে সেকথা বোঝানোরও চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছেনা।
-“"রেজোয়ান, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো বলেছিলাম”।"
-“"জ্বী স্যার”।"
-“"খুলনায় আমাদের নতুন যে এগ্রো ইন্ড্রাট্রিটা হচ্ছে তার সিইও হিসেবে আমি তোমাকে নির্বাচন করেছি। দায়িত্বটা যদিও অনেক বড় তবে আমার বিশ্বাস তুমি পারবে”।"
-“"সত্যি বলছেন স্যার!!”—……"..…….. রেজোয়ান যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। এতবড় সারপ্রাইজ যে তার জন্য অপেক্ষা করছিল তা সে স্বপ্নেও কখনো ভাবেনি। আবেগাপ্লুত হয়ে অনেকটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো রেজোয়ান।
-“"কি খুশী”?"
-"“স্যার, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি। কি বলব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না”।"
-“"সেলিব্রেট মাই বয়। এই স্যাম্পেইনের বোতলটা নিয়ে বাসায় চলে যাও। রাতটা ইনজয় করো”।"
-“"আমরা তাহলে আসি স্যার”"--হাস্যজ্জ্বোল ভঙ্গিতে বলল রেজোয়ান।
-“"তুমি একাই যাও রেজোয়ান। তোমার ওয়াইফ কাল সকালে যাবে”।"
কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো রেজোয়ান। তার সারা শরীর যেনো নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। একটি শব্দ করার শক্তিও যেনো হারিয়ে ফেলেছে সে। এতটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কিভাবে কথাটা বলতে পারলো জামির সাহেব? মিলা রেজোয়ানের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। আচ্ছা মিলা হাসছে কেনো?...
-“"তোমার কি কিছু বলার আছে রেজোয়ান?"
-“"জ্বী...জ্বী...জ্বীনা স্যার..."”