গতকাল আমার বউয়ের মামাতো বোনের জামাই রিংকু ভাই নিয়ে গেলেন তার শ্যালিকার বাসায়। সেখানে রিংকু ভাইয়ের হাতের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ। আমাদের সামনেই তিনি চুলোতে বসিয়ে দিলেন সর্ষে ইলিশ আর গরুর মগজ। রান্না শেষ হওয়া মাত্রই ডিশগুলো তিনি নিজের হাতে টেবিলে সাজাতে লাগলেন। তার এই তরিতকর্মা হাতের কাজ দেখে আমি নিজেই চোখে সর্ষে দেখতে লাগলাম। ছেলেরা রান্না করে। বিদেশে থাকলে একটু বেশী করতে হয়। তাই বলে নিজের চোখের সামনে এরকম কুশলী পাচকের মুখোমুখি? নিজের জীবন ধন্য মনে হলো। রিংকু ভাই যদি মেয়ে হতেন আর নিয়মিতভাবে এরকম সুস্বাদু সর্ষে ইলিশ আর গরুর মগজ ভাজি খাওয়াতেন তাহলে বোধ হয় তার স্বামী প্রতিদিনই তার জন্য তাজমহল তৈরী করতেন। রিংকু ভাই সদাহাস্য মানুষ। জমিয়ে গল্প করতে পারেন। লোকজনকে আটকে রাখতে পারেন। তার পাশে যদি সর্ষে ইলিশ থাকে তার আশেপাশের লোকজনের অন্যত্র যাবার কোন জো নেই। ভাবছি, আটলান্টাতে একটা বায়োডাটা রেখে যাব। চাকরি পেলে এখানে চলে আসব। সর্ষে ইলিশ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে!!!
টেবিল ভর্তি খাওয়া। পোলাও, শামী কাবাব, চিকেন কোর্মা, মগজ ভাজি, সর্ষে ইলিশ, রুই মাছ, গরুর মাংস ভুনা, বাঁধাকপি ভাজি, সালাদ। চমচম, কালো মিস্টি, পায়েস। কে বলেছে আমি সুদূর আমেরিকায়? মনে হয়, টেবিলে বসে মনে হলো যাদুর পরশে আমি দেশের মাটিতে। সব আপনজনদের মাঝে। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আমার স্ত্রীর মামাতো বোনদের স্নেহ আমার বড়ো বোনের চেয়ে একটুও কম না। দেশে থাকলে সম্পর্কের তারল্য থাকে বেশী। বিদেশের মাটিতে এর গভীরতা বাড়ে বহুগুণ। গল্পের মধ্যে থাকলে বোধহয় সময় তাড়াতাড়ি পালায়। অলস সময় বসে থাকে স্থির বদ্ধ জলের মতো। পেরোতে চায় না। আড্ডায় রাত বাড়লো। রাত দু'টোর দিকে ঝুনু আপুর বাসা থেকে বিদায় নিলাম।
বাসায় ফিরে ভাবলাম আগামীকাল কি করব? আটলান্টাতে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বাড়ী আর যাদুঘর দেখার ইচ্ছেটা অনেকদিনের। রাত তিনটায় ঘুমোতে গেলাম। আমি খুব নিয়মে চলা মানুষ। তবে হঠাত করে এই অনিয়মটা মন্দ লাগছে না। মঙ্গলবার সকাল বেলা ফিরে যেতে হবে ভার্জিনিয়ায়। আবার সেই নিয়মের ফাঁদে আটকে পড়বে জীবন। আবার একঘেঁয়েমী জীবন। সকাল বিকেল অফিস। বিদেশটা বাইরের থেকে খুব চাকচিক্যময়। এখানে থাকলে মনে হয় কেন পড়ে আছি বিদেশের মাটিতে স্বজনদের ছেড়ে? শুধু টাকা পয়সা, ভাল থাকা, না অন্যকিছু? যারা দেশে থাকেন তাদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা কি কখনও বুঝবেন প্রবাসে থাকার কস্ট? আপনজনদের ছেড়ে বিদেশের মাটিতে কামড়ে পড়ে থাকার কস্ট? ওপারে সর্বসুখ এই প্রবল বিশ্বাস আমি কিভাবে ভেংগে দিব?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:২৭