প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট সাংবাদিকতার মান অনুসারিত হয়নি বরং বেআইনিভাবে রিপোর্টে শিশুর ছবি ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম আলোর রিপোর্টিতে [৭/৯/১৫ প্রকাশিত] বলা হয়েছে: “শিশুকে হাতকড়া পরানো বেআইনি হলেও দুই শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে ঢাকার আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। গতকাল রোববার [৬/৯/১৫] বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশের কনস্টেবল দেলোয়ার তাদের হাজির করেন।” এরপর ওই দুই শিশুর নাম, পরিচয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে [আমি শিশু দুটি’র নাম এখানে উল্লেখ করলাম না]। রিপোর্টের সাথে শিশু দু’টির ছবি প্রথম পৃষ্টায় প্রকাশ করেছে। কাফরুল থানায় পৃথক দুটি মাদক মামলায় গত ১২ আগস্ট পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সেদিন থেকে তারা কারাগারে আছে। এরমধ্যে একজনকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। প্রথম আলো শিশু আইন ২০১৩ এর উল্লেখ করে দেখিয়েছে শিশু দু’টিকে হাতকড়া লাগিয়ে পুলিশ বেআইনি কাজ করেছে। অবশ্যই হাতকড়া লাগিয়ে পুলিশ বেআইনি কাজ করেছে। কেননা, শিশু আইনের ৪৪ (৩) ধারায় বলা হয়েছে:
শিশুকে “গ্রেফতার করিবার পর কোন শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাইবে না।” কিন্তু প্রথম আলো পুলিশের বেআইনি কাজের উল্লেখ করতে গিয়ে নিজেই আইন ভঙ্গ করেছে। কারণ শিশুর নাম, পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করেছে রিপোটে। শিশু আইনের ২৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে:
“শিশু-আদালতে বিচারাধীন কোন মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোন শিশুর ছবি বা এমন কোন বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাইবে না যাহা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।”
শিশু যদি নিজে অপরাধের শিকারও হয় তাহলেও তাদের নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করা যাবে না। কেননা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে:
“এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তত্সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়৷”
এটা আইন ও সাংবাদিকতা পরিপূর্ভাবে না জানার কারণে করেছে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার ও সহ-সম্পাদক। আইন ও নীতি সাংবাদিকতা শিক্ষা ও চর্চার অংশ। এ শিক্ষা যেকোনভাবে অর্জন করা যায়। অনেকে মনে করতে পারেন আমি হয়তো রিপোর্টির বিরোধিতা করছি। আসলে তা নয়। রিপোর্টটি অত্যন্ত ভাল একটি বিষয় তুলে ধরেছে যে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যগণ কীভাবে আইন ভঙ্গ করে।
ক্ষতিগ্রস্ত বা অপরাধী শিশুর নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করলে তাদের উপর কী প্রভাব পড়ে??? আজ আর নয়, আরেকদিন লিখবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:১৭