একজন জুলেখা বিবির উপাখ্যান
পুনরায় তিনি বলা শুরু করলেন, এহাত্তরে রাজাকারদের লাইগ্যা আমার সোয়ামীরে হারায়ছি। হেরপর থাইক্যা বানের জলের মতন ভাসতেই আছি আমি। যেহময় আমার একটু জিরানির (বিশ্রাম) দরহার হেই হময় (সময়) আমি কাজ-কাম করি। জানিনা কোন হময় এর শেষ অইব। আল্লাগো রাজাকারদের বিচার দেইখ্যা কী আমার মরণ অইব ? এক নি:শ্বাসে কথাগুলো আেেপর সাথে বলে অন্যদিকে মন দেন জুলেখা বিবি।
১৯৭১ সালে স্বামী হারিয়ে যখন তিনি বিধবার সাদা শাড়ি গায়ে জড়িয়েছিলেন তখন কেউ থাকে ভাল চোখে দেখে নি। সবাই অপয়া বলে তার উপর থুথ ছিটিয়েছে। গ্রামে সালিশ বসিয়ে কলঙ্কের কালি লেপন করে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে গ্রামের মাতব্বররা। তাতেও তিনি দমে যাননি। কোনদিন আধাবেলা খেয়ে আবার কোনদিন সারাদিন উপোস থেকেই দিন কেটেছে তার । কেউই তার খবর রাখে নি, খোঁজ নেয়নি। এভাবে বহুদিন চলার পর ভুল করে একদিন সিলেটের ট্রেনে চড়ে বসলেন জুলেখা বিবি। ট্রেন থেকে নেমে তিনি কিছুই চেনেন না। তখন একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন তিনি সিলেটে এসে পড়েছেন। তবে এতে ভয় পেয়ে যাননি তিনি। কারণ সিলেটে আসা ওনার দীর্ঘদিনের শখ ছিল। ওনার স্বামী তাকে বলেছিলেন দেশের পরিস্থিতি ভাল হলে সিলেটে এসে তাকে নিয়ে অনেকদিন ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু সেই কালরাত্রিতে স্বামী মারা যাওয়ার পর তার শখও সহমরণে যায়। কিন্তু পরে যেহেতু সুযোগ এসেছে তিনি তা হাতছাড়া করেননি। একটি বাসায় কাজ জুটিয়ে টাকা জমাতে শুরু করলেন তিনি। সাথে একজন বান্ধবীও জুটে গেল তার। কিন্তু একমাস যেতে না যেতেই প্লেট ভাঙ্গার অপরাধে তাকে বেদম প্রহার করল বাড়ির মালিক। পনের দিনের মত হাসপাতালেও তাকে থাকতে হয়েছিল। এরপর তিনি আর পরনির্ভর থাকতে চান নি। বাসা থেকে মজুরী বাবদ পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে সিলেট ভেটেনারী কলেজের (বর্তমানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) পাশে একটি দোকান ভাড়া নিলেন। সেখানে তিনি একটি চা স্টল দিলেন। সারাদিন চা বিক্রি করে রাতে বান্ধবীর সাথে ছোট এক বিছানায় গাদাগাদি করে ঘুমাতেন। ধীরে ধীরে তার ছোট্ট এ ব্যবসার প্রসার হতে লাগল। অল্পদিনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীদের প্রিয় পাত্র হয়ে গেলেন। সময় পেলেই গল্প করতে চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া কোমল হৃদয়ের অনেক ছাত্রী। তবে এখানকার লোকজনের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই তার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ তিনি সিলেট থাকলেও তার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। এজন্য তাদের কথা তিনি বুঝলেও তার কথা বুঝেননা অনেকেই। তবুও তিনি তাদের গল্প শোনান সেই একাত্তরের, শোনেন নিজেও। এরই মধ্যে তার নামেও হয়েছে পরিবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী ছাড়াও স্থানীয় লোকজন তাকে বীরঙ্গনা জুলেখা বুবু নামে সম্বোধন করেন। এতে তিনি খুশি হয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন। আবার পরণেই বেজার হয়ে যান। সেই কারণ সবারই জানা। আর সেটি হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
যার জন্য তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৯ টি বছর এক রঙ্গের শাড়ি গায়ে দিয়ে আছেন।
যার জন্য তার জীবন-যৌবন সবকিছুই উৎসর্গ করে দিয়েছেন।
এতকিছুর পরও তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় নি।
আর এজন্যইতো ময়মনসিংহের কুখ্যাত মোশারফ রাজাকার সহ সকল দোসরদেরই ফাঁসি চান তিনি।
তিনি আশাবাদী। তার আশা পূর্ণ হবে শীঘ্রই।


নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা
নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা
ইদানিং নারীনীতি নিয়ে দেশে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থীরা যখন পাশ্চাত্যঘেঁষা নারীনীতির সুপারিশকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, তখনই মূলত এই আলোচনার বিস্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগারদের হতে হবে দেশের চিন্তাশীল সমাজের অগ্রনায়ক
আমার ৭ বছর ১১ মাসের ব্লগিং ক্যারিয়ারে ১০,০৭৩টি কমেন্ট করেছি। প্রতি পোস্টে গড়ে যদি ২টা করে কমেন্ট করে থাকি, তাহলে, আমি কম করেও ৫০০০টি পোস্ট পড়েছি। এর অর্থ, বছরে প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের শাহেদ জামাল- ৭৮
আমার বন্ধু শাহেদ। শাহেদ জামাল।
খুবই ভালো একটা ছেলে। সামাজিক এবং মানবিক। হৃদয়বান তো অবশ্যই। দুঃখের বিষয় শাহেদের সাথে আমার দেখা হয় মাসে একবার। অথচ আমরা একই শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকার অটোরিকশা
সেদিন একটা রিপোর্টে দেখলাম ঢাকা শহরে প্রায় ২০ লাখ রিক্সা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ! ২০১৯ সালের একটা জরিপে রিক্সার সংখ্যা ছিলো ১৩ লাখ। তার মানে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সৃষ্টির ঋণ....
সৃষ্টির ঋণ....
মধ্য দুপুরে ডেল্টা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সিএনজি, বাইক, উবার কিছুই পাচ্ছিনা। অনেকটা পথ হেটে বাংলা কলেজের সামনে বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা রিকশা পেয়েছি....ঘর্মাক্ত ষাটোর্ধ কংকালসার রিকশাওয়ালাকে দেখে এড়িয়ে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন