বাংলাদেশের উন্নয়ন ও উন্নতবিশ্ব; প্রাচ্য- প্রতীচ্য দ্বন্দ্বকথন
পুঁজিবাদ বিকাশের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ মূলত পরস্পর নির্ভরশীল ছিল। পুঁজিবাদের বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্যেই নির্ভরশীলতার বীজ অবশ্যম্ভবীরূপে উপ্ত। বর্তমান বিশ্বে উন্নত পুঁজিবাদী দেশসমূহের সঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর দেশের যে পরনির্ভরশীলতার সম্পর্ক বিদ্যমান তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সে প্রক্রিয়ারই অনিবার্য পরিণতি। মেট্রোপলিটান (সাম্রাজ্যবাদী) দেশসমূহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর্যন্ত, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও সা¤প্রতিককাল পর্যন্ত, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর তাদের ঔপনিবেশিক ও প্রত্যক্ষ শাসন অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু একটি দেশ থেকে প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানই সে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে আসেনি। কারন বাণিজ্য, উন্নয়ন-কৌশল ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপদেশ এবং উচ্চতর ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনদক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা ইত্যাদি আকারে ঔপনিবেশিক যোগাযোগ চলতেই থাকে।
লাখ লাখ জনতার জীবন ও রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বাংলাদেশে মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানী আমল থেকে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর ওপর যে নির্ভরশীলতার সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, তার নিগড় থেকে মুক্তি মেলেনি স্বাধীন বাংলাদেশের। ঔপনিবেশিক মনন, শ্রেণীচরিত্র বা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তথা যে কারণেই হোক মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী শক্তি ও পরবর্তী শাসক ও নীতি-নির্ধারকবৃন্দ এ নির্ভরশীলতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নিতে পারেননি। বরং তাঁরা শর্তের আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা বিদেশী সাহায্যকে দেশের উন্নয়নে অবিকল্প বিবেচনা করেছেন। পঞ্চাশের দশক এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৪ সালে খাদ্যের অসাম্য বন্টনের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সাহায্যের নামে আসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের মতো পরবর্তী স্বাধীন দেশের সরকারবৃন্দও এ খাদ্য ঘাটতিকে জিইয়ে রাখে, যা থেকে এদেশের মানুষ এখনও পুরোপুরি পরিত্রাণ পায়নি। দারিদ্র নিয়ে বাণিজ্য করার প্রয়াসে উন্নত বিশ্ব ও দাতাসংস্থাগুলো সরকারকে বাদ দিয়ে এনজিওদের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে। এ ধরনের নির্ভরশীল-উন্নয়ন গণবিরোধী। তাই এ ধরনের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় দেশের সামগ্রিক মঙ্গল সাধন হওয়া সম্ভব নয়।
যা-কিছু পাশ্চাত্য তার সবই ভালো- এমন মানসিকতা ধারণ করার সুবাদে বাংলাদেশের রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকবৃন্দও দেশের সার্বিক উন্নয়নের তত্ত্ব ও বাস্তবায়ন-কৌশলের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশ ও দাতাদের ওপর নির্ভর করেছেন। দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নির্দেশনা মোতাবেক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের বৃহৎ শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোকে অদক্ষ আর লোকসানী বানিয়ে বা তাকে বড় করে দেখিয়ে অদক্ষতা আর লোকসানের অজুহাতে সেগুলো হয় বন্ধ করা হয়েছে নয়তো লুটপাটের আরেক পথ হিসেবে পানির দামে বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের বৃহৎ স্টীলমিল বন্ধ করা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে দেশের বৃহৎ পাটকল, বন্ধ বা অচল করবার প্রক্রিয়ায় আছে কাগজ ও চিনি শিল্প। ... উৎপাদনশীল খাতের এই অবস্থার কারণে কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে। দরিদ্রসীমা পরিমাপের প্রচলিত পদ্ধতিতেও শতকরা ৫০ জন এখনও এই সীমার নীচে অবস্থান করছে। কোটিপতির সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তারই ফলাফল হিসেবে ছিন্নমূল সম্পত্তিহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে।
উন্নত বিশ্ব ও বিশ্বব্যাংকের কয়েক বছরের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ২০০৩ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন গণতান্ত্রিক সরকার আদমজী পাটকল বন্ধ করেছে। আদমজী পাটকল ছিল এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল; ৫১ বছর ধরে দেশের কোটি কোটি মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যত-সম্ভাবনার আকর প্রতিষ্ঠান। ৩০ হাজার শ্রমিক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল দেড় লক্ষাধিক মানুষ, কোটি কোটি কৃষক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সরকার ও দাতাদের এ উন্নয়ন প্রচেষ্টায়। বিশ্বব্যাংক থেকে সরকার এ ধরনের অন্যান্য পাটকল বেসরকারিকরণ, বন্ধ এবং শ্রমিক ছাঁটাই করার জন্য বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করে। অথচ সমসাময়িক পর্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপরীতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে একের পর এক শপিংমল। এশিয়ার বৃহত্তম শপিংমলের অবস্থান এখন বাংলাদেশে। দাতাসংস্থাগুলোর নির্দেশনায় পরিচালিত সামাজিক বনায়ন’, চিংড়ি প্রকল্প ইত্যাদি নিয়েও যথেষ্ট নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে। তাদের নির্দেশনায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশের কৃষিভূমি যেমন সংকুচিত হয়েছে, তেমনি দেশীয় বৈচিত্র্যময় ফসলের ঐতিহ্য বিনষ্ট হয়েছে।
কোনো কোনো উন্নয়নবিদ, রাজনীতিক এবং নীতিনির্ধারক বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগকে উন্নয়নের অন্যতম উপায় হিসেবে মত দিয়ে থাকেন। অথচ বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগের নামে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর বিনিয়োগক্ষেত্র সুদৃঢ় হয়, তারা বাজার সৃষ্টি ও বিস্তৃত করে। উদাহরণস্বরূপ সবুজ বিপ্লব-এর কথা উল্লেখ করা যায়। এই উন্নয়নতত্ত্বের আড়ালে যত বিদেশি সাহায্য এসেছে তা গভীর-অগভীর নলকূপ, সার, কীটনাশক ইত্যাদির বাজার তৈরি করেছে। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব’ দেশে আর্সেনিক দূষণের বিস্তার ঘটিয়েছে। স¤প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট মারফত জানা যায়, বর্তমানে দেশের প্রায় সাত কোটি মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পিএল- ৪৮০ নামের আড়ালে যত খাদ্য-সাহায্য এসেছে তা মার্কিন বৃহৎ খামারগুলোর উদ্বৃত্ত খাবার বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। আবার বিনিয়োগের নামে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নেওয়ার প্রয়াসে তারা বিভিন্ন অসম চুক্তি করতে বাধ্য করছে। তারা শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে একদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে, অন্যদিকে সরকারকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি কমাতে চাপ প্রয়োগ করছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে একটি পুজিবাদী ভোগ-সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে তারা এদেশের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক বন্ধন ও সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যাঁদের বাংলাদেশ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সেসকল নামসর্বস্ব বিশেষজ্ঞদেরকে এদেশের আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। সম্মানী হিসেবে তাঁদেরকে তথাকথিত সাহায্য-সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে আসলে আমরা উন্নয়নের নামে দেশের হৃদয়টাকে বিক্রি করে দিচ্ছি। বিদেশী ভাবনা আমাদের উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণ করছে। পশ্চিমের জ্ঞানের ভিত্তিভূমি ভিন্ন। ... সেই পশ্চিমের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেল ও প্রযুক্তি ঢালাওভাবে প্রতিস্থাপন করতে চাইছি হৃদয় সম্বন্ধের দেশ বাংলাদেশে। সারা পৃথিবীর মানুষ পশ্চিমের ভোগ্যপণ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। পশ্চিমের চিকিৎসা ও ওষুধে আমাদের সকল রোগ থেকে আমরা মুক্তি পাব। পশ্চিমের গান-বাজনায় আমাদের সকলের হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে যাবে। পশ্চিমের সমাজ প্রাচ্যেও প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে। এমনই সব ভ্রান্ত ধারণার শিকার আমাদের প্রচলিত উন্নয়ন ধারা। ... এই ধারা বাইরে থেকে অর্থের জোরে আরোপিত। উন্নতবিশ্ব ও তাদের প্রতিষ্ঠিত দাতাসংস্থাগুলো যে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রকৃত কল্যাণ চায় না তা খোদ তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিবও পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহাসচিব বান কি মুন এক ভাষণে বলেছেন, পৃথিবীতে চাহিদার বেশি খাদ্য থাকার পরও লাখ লাখ মানুষকে ভুখা থাকতে হয়। বিশ্বের খাদ্য ব্যবস্থা আজ চরম সংকটে। আর এ সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের জনগোষ্ঠী। তিনি বলেন, এ অনাচার মেনে নেওয়া যায় না।
স¤প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব নিয়ে সারাবিশ্বে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে অদূর ভবিষ্যতে মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন নিয়ে। বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে এর জন্য প্রকৃতির খামখেয়াল নয়, দায় হচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর। ভোগবাদী সংস্কৃতি বা বিলাসী জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য যুগ যুগ ধরে তারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে। এরপর অনেক অনেক সভা-সম্মেলন শেষে জলবায়ুর ভারসাম্য বিনাশকারী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মতি জানিয়েছে। বাংলাদেশ এসকল ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম হওয়ায় ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- প্রতিশ্র“তি দিয়েও উন্নত দেশগুলো উল্টো বৈদেশিক সহায়তা আগের তুলনায় অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৫ মার্চ ২০১২ সালের এক ভাষণে এ বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। শিল্পোন্নত দেশগুলো যুগ যুগ ধরে যে বায়ুদূষণ করে আসছে, এটা তার ক্ষতিপূরণ। তারা এটি তাদের বার্ষিক বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (সিডিএ) আওতায় নতুন, অতিরিক্ত এবং অনুদান হিসেবে আমাদের দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু উন্নয়ন-সহযোগীরা উল্টো তাদের এ প্রতিশ্র“তি পূরণ না করে বিগত দুই দশকে বৈদেশিক সহায়তা কমিয়েছে। এখন তারা জলবায়ু অর্থায়নের সঙ্গে উন্নয়ন অর্থায়নকে মিলিয়ে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বিশাল কর্মযজ্ঞে আমরা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর যথেষ্ট সহায়তা পাব, কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের একটা অংশ এসব কাজে ব্যয় করা হবে। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থের প্রতি উদাসীনতার জন্য কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কিয়োটো প্রটোকল থেকে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি কপ সেভেনটিন’কে ব্যর্থতার মুখে ঠেলে দিয়েছিল, যা ছিল অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু অধিকাংশ দেশের সম্মিলিত উদ্যোগের কারণে তা হয়নি। একইসঙ্গে কোপেনহেগেনে দেওয়া শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্র“তি পূরণে অনীহার ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড পরিচালনায় কীভাবে তহবিল সংগৃহীত হবে, তা পরিষ্কার নয়। সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের কোনো প্রক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে না।’
তবে প্রতিশ্র“তি পূরণে উল্লিখিত বাস্তবতা সর্বব্যাপী হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে অযথা খবরদারি বা হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে তাদের কোনো কার্পণ্য নেই। অনেকে এই দরিদ্র বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, জাপান, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি দেশ ও সংস্থার বিশেষ নজরদারিকে এদেশের তেল-গ্যাস-বন্দরসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলেও এর পাশাপাশি আরো বড় অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। কেননা, বাংলাদেশ বিশ্বের মোট আয়তনের ৩০০০ ভাগের ১ ভাগ হলেও এখানে বসবাস করছে বিশ্বের ৪০ ভাগের ১ ভাগ মানুষ; একটি দুর্লভ বৃহৎ বাজার। এ বাজার দখলের ঐকান্তিক প্রয়াসে তারা বিভিন্ন কৌশলে ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। রাতারাতি গড়ে উঠছে বিশাল বিশাল শপিংমল, উৎপাদনের অর্থনীতির পরিবর্তে জমে উঠছে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসলেও এবং দাতা-গ্রহিতা’র শব্দগুচ্ছের স্থলে উন্নয়ন-সহযোগী’ শব্দ প্রতিস্থাপিত হলেও তথাকথিত আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সাহায্যদাতাদের আদেশ-উপদেশের দৌরাত্মের হ্রাস হয়নি। আর ঐতিহ্যলালিত জাতীয়তাবাদী আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বিদেশীদের হাতে উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে যে সীমাবদ্ধ উন্নয়ন হয় তাতে জাতির গৌরব, সৃজনশীলতা এবং নিজস্বতা থাকে না। নিজেদের সমাজ ও সং®কৃতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে অন্যের কথামতো উন্নয়নের অনুকরণ আখেরে আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনে শুধু দুঃখই ডেকে আনবে। তাই নিজেদের শক্তি ও সামর্থের কথা মনে রেখে স্বদেশ চিন্তা করতে হবে। স্বকীয় উন্নয়নের পথ খুঁজতে হবে।
তথ্যসূত্র :
• বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক বিকাশ পথের সন্ধানে, কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, সূচীপত্র, ঢাকা, ২০০৫;
• উন্নয়নের রাজনীতি, আনু মুহাম্মদ, সূচীপত্র, ঢাকা, ২০০৬;
• আরেক বাংলাদেশ, আতিউর রহমান, প্রাচ্যবিদ্যা প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৮;